Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

দুষ্কৃতীদের গোলমালে পড়ে নিহত মহিলা

দু’দল দুষ্কৃতীর গোলমালে প্রাণ হারালেন এক গ্রামবাসী। সোমবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে বর্ধমানের মঙ্গলকোটের আওগ্রামে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম নুরজাহান বিবি (৪০)। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ওই মহিলাকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই দুপুরের দিকে তিনি মারা যান। এ দিন সন্ধ্যায় নিহতের পরিজনরা মঙ্গলকোট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

তখনও বেঁচে নুরজাহান। বর্ধমান মেডিক্যালে তোলা নিজস্ব চিত্র।

তখনও বেঁচে নুরজাহান। বর্ধমান মেডিক্যালে তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মঙ্গলকোট ও বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৪ ০২:০২
Share: Save:

দু’দল দুষ্কৃতীর গোলমালে প্রাণ হারালেন এক গ্রামবাসী। সোমবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে বর্ধমানের মঙ্গলকোটের আওগ্রামে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম নুরজাহান বিবি (৪০)। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ওই মহিলাকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই দুপুরের দিকে তিনি মারা যান। এ দিন সন্ধ্যায় নিহতের পরিজনরা মঙ্গলকোট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ঘটনায় জনা কুড়ির নামে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। শেখ শাহিদ মহম্মদ নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ৮০টি বোমাও উদ্ধার করা হয়েছে।

নিহতের দুই আত্মীয় শরিফ মণ্ডল ও গোলেনূর বিবি এ দিন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দাঁড়িয়ে অভিযোগ করেন, নূরজাহান বিবি বাড়ির মধ্যে তিল বাছছিলেন। আচমকা তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা বোমা ছুড়তে ছুড়তে বাড়িতে ঢোকে। তাদের ছোড়া গুলিই নূরজাহান বিবির পেটে লাগে।

যদিও পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা মত ভিন্ন। তাঁরা জানিয়েছেন, ওই এলাকায় তৃণমূলের ওই দুই গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব নতুন নয়। এ দিনও সকাল ৮টা নাগাদ সাহাবুদ্দিন গোষ্ঠীর লোকেরা ৬টি বাইক নিয়ে গ্রামে ঢোকে। তারপরেই আরেক তৃণমূল গোষ্ঠী আশাদুল্লা শেখদের সঙ্গে বচসা শুরু হয় তাদের। তখন পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়েছিলেন নূরজাহান বিবি। বচসার সময় সাহাবুদ্দিনের লোকেরা রাইফেল থেকে গুলি চালায় বলে অভিযোগ। সেই গুলিই নূরজাহানের পেটে লাগে। এরপর বোমাবাজি করতে করতে গ্রাম ছেড়ে পালায় ওই দুষ্কৃতীরা। নিহতের আত্মীয়রাও স্বীকার করেছেন, তাঁরা আশাদুল্লা গোষ্ঠীর সমর্থক। তাঁদের আরও অভিযোগ, ঘটনার অনেক পরে পুলিশ গ্রামে পৌঁছে আহতকে উদ্ধার করে। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, ওই গ্রাম মঙ্গলকোট থানা থেকে অনেকটা দূরে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই সময় লেগেছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকা দখলের লড়াই নিয়ে তৃণমূলের ওই দুই গোষ্ঠীর বিবাদ বহু পুরনো। প্রায় সময়েই দু’পক্ষের মধ্যে বোমাবাজি হয়, গুলি চলে। ১৬ মে লোকসভা ভোটের ফল ঘোষণার পরেও সাহাবুদ্দিন গোষ্ঠীর লোকেদের হাতে আশাদুল্লা গোষ্ঠীর তিন জন প্রহৃত হন। মঙ্গলকোট থানায় লিখিত ভাবে অভিযোগও করেন প্রহৃতেরা। এ দিন নিহতের আত্মীয়রাও জানান, ওই ঘটনার কিছুদিন পরে নিহত নূরজাহান বিবির জামাই সাহাদিন মল্লিককে তিলখাঁই গ্রামে নদীর ধারে একা পেয়ে সাহাবুদ্দিনের লোকেরা মারধর করে। তাঁর টাকা পয়সা ছিনতাইও করে। বর্ধমান মেডিক্যালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। মঙ্গলকোট থানায় লিখিত অভিযোগও দায়ের করা হয়েছিল।

পুলিশ জানায়, এ দিন সকালে ৬টি মোটরবাইকে সাহাবুদ্দিনের লোকেরা আওগ্রামে ঢোকে। নিহতের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে মামলার খরচপত্র বাবদ মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে। তা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বচসা বাধে। বোমা-গুলিও চলে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়।

পুলিশ জানিয়েছে, ওই দুই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মঙ্গলকোট থানায় একাধিক অভিযোগ রয়েছে। কিছুদিন আগে ডাকাতির অভিযোগে বর্ধমান থানার পুলিশ সাহাবুদ্দিন-সহ তার দলবলকে গ্রেফতারও করেছিল। আশাদুল্লা শেখের অভিযোগ, ওরা ‘লাল তৃণমূল’। ২০০৯ সালে আমার বোনের বিয়ের সময় ওরা একঘরে করে রেখেছিল। এখন তৃণমূলে ঢুকে আমাদেরই গ্রাম থেকে উচ্ছেদ করতে চাইছে। ওদের অত্যাচারের প্রতিবাদ করলেই হামলা চালায়। আর তাতেই আমার কাকিমা মারা গেল। যদিও এই অভিযোগ মানতে চাননি শেখ সাহাবুদ্দিন। তার পাল্টা অভিযোগ, ভাতারের তৃণমূল নেতা মানগোবিন্দ অধিকারীর উস্কানিতে আমাদের গ্রামে অশান্তি হচ্ছে। এ দিন আশাদুল্লা গোষ্ঠীর নিজেদের মধ্যে গোলমাল হয়। তাতেই ওদের এক আত্মীয় মারা গিয়েছেন। এখন আমাদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে চাইছে। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে মানগোবিন্দ অধিকারী বলেন, “কে কী বলছে তা আমি জানি না। তবে ওই গ্রামে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর গোলমালে পুরনো গোষ্ঠীর একজন মারা গিয়েছেন বলে জানি।” মঙ্গলকোট ব্লকের তৃণমূলের সভাপতি অপূর্ব চৌধুরী অবশ্য গোষ্ঠীদ্বন্দের কথা মানতে চাননি। তিনি বলেন, “ওই ঘটনা পারিবারিক। এর মধ্যে রাজনীতির কোনও ব্যাপার নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mangalkot bardwan bardwan medical nurjahan bibi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE