ধৃত রাজীব মণ্ডল
পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করলেন বর্ধমানের দক্ষিণ দামোদর এলাকা নানা দুষ্কর্মে অভিযুক্ত রাজীব মণ্ডল। শনিবার দুপুরে বর্ধমান থানায় আত্মসমর্পণ করে সে। পুলিশ জানায়, তার কাছ থেকে মিলেছে তিনটি ৭.৬ বোরের পিস্তল, দু’টি গুলি ভর্তি ম্যাগাজিন, দু’টি দেশি ঘড়ার রিভলবার, মোট ১৫ রাউন্ড গুলি ও হাত কামানের ৯টি গোলা। ধৃতকে আদালতে তোলা হলে ১০ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরুণ হালদার জানান, দীর্ঘদিন ধরেই এই রাজীবকে পুলিশ খুঁজছিল। বেশ কয়েক বার সে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়েছিল। শেষ বার পলেমপুরের গাঁজা ভর্তি চলন্ত গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে গুলি ছুঁড়ে পালায় সে। তবে সে বার রাজীবের পাঁচ সঙ্গীকে ধরে ফেলে পুলিশ। একটি বড় অস্ত্রভাণ্ডারের সন্ধানও মিলেছিল ওই অভিযানে। তার পরেই রাজীবে শক্তি কমতে থাকে বলে পুলিশের অনুমান। পুলিশ জানতে পারে, কলকাতার সল্টলেক ও মুম্বইয়ে রাজীবের ফ্ল্যাট রয়েছে। তার খোঁজে এই সব জায়গায় অভিযান চালায় পুলিশ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরুণবাবুর দাবি, “এর পরেই রাজীব বুঝতে পারে, তার পক্ষে আর গা ঢাকা দিয়ে থাকা সম্ভব নয়। তাই আত্মসমর্পন করে।”
শনিবার দুপুরে আইনজীবী পার্থ হাটী রাজীবকে সঙ্গে নিয়ে বর্ধমান থানায় গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “রবিবার পুলিশ নতুন একটি অস্ত্র মামলায় ও পুরনো একটি মাদক পাচারের মামলায় তাকে আদালতে তুলেছে। তবে তাঁর বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি থানায় নানা মামলা ঝুলছে। তাই তাঁকে গ্রেফতার দেখাতে কয়েক দিনের মধ্যে সেই থানাগুলি আদালতে আবেদন করবে।”
বর্ধমান থানার আইসি আব্দুল গফফর জানান, রাজীবের বিরুদ্ধে বর্ধমান শহর ও খণ্ডঘোষ, রায়না, জামালপুর, গলসিতে নানা ধরনের অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। চালকলের লোকেদের কাছ থেকে ছিনতাই, ব্যাঙ্ক ও হিমঘর থেকে টাকা নিয়ে বেরোনো লোকেদের থেকে ছিনতাই, অবৈধ বালির কারবারে মদতে অভিযুক্ত সে। এক শ্রেণির বালি মাফিয়াদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে অন্য পক্ষের লোকেদের উপর হামলা চালানোর ঘটনাতেও তার নাম রয়েছে। পলেমপুর, কামালপুর, ইদিলপুর ইত্যাদি বালিঘাটে সে ও তার দলবল বারবার আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে অন্য বালি মাফিয়াদের উপরে হামলা চালিয়েছে। পুলিশ তাড়া করলে দামোদরের বালির চর দিয়ে মোটরবাইক নিয়ে পালিয়েছে।
রাজীব মণ্ডলের কাছে মেলা অস্ত্র।
পুলিশ জানায়, বর্ধমানের কামালপুরে দামোদরের বাঁধে রাজীবের বাড়ি ছিল। পুলিশি অভিযানের গন্ধ পেলে তার পোষা কুকুর চেঁচামেচি করত। রাজীব বাড়ির পিছনের জানালা দিয়ে পালিয়ে যেত। কয়েক বার সেই বাড়ি ঘিরে ফেলেও রাজীবকে ধরতে পারেনি পুলিশ। বারবার সিম কার্ড পাল্টানোয় মোবাইলের টাওয়ার অবস্থান দেখেও তাকে ধরা সম্ভব হয়নি বলে পুলিশ জানায়।
তবে রাজীবকে ধরতে না পারার ব্যাপারে ব্যর্থতার কথা জেলার পুলিশকর্তারা মানেননি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরুণবাবু বলেন, “আমরা চার দিক থেকে রাজীবকে ঘিরে ফেলেছিলাম। তাই তাকে ধরা দিতে হয়েছে।” পুলিশের অনুমান, রাজীবের কাছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র ছিল। তাকে জেরা করে সে সবের খোঁজ পাওয়ার চেষ্টা হবে বলে পুলিশ জানায়।
—নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy