Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পাঁচ কিশোরী পালানোয় শো-কজ হোমের সুপারকে

সরকারি হোম থেকে পাঁচ কিশোরী পালানোর ঘটনায় শো-কজ করা হল ওই হোমের সুপার-সহ আট কর্মীকে। নির্দেশ যাতে অবিলম্বে কার্যকর হয়, সে দিকে নজর দিতেও বলেছেন খোদ জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন। মঙ্গলবার রাত ৮টা নাগাদ শহরের ঢলদিঘির সরকারি হোম থেকে পালায় ওই পাঁচ কিশোরী। হোম সূত্রে জানা গিয়েছে, খুসবু কুমারি, গীতা কুমারি, মুন্নি আখতার তানিয়া, প্রীতি সাক্সা ও নাগেশ্বরী সাক্সা নামে ওই পাঁচ কিশোরীর বয়েস ১৪ থেকে ১৬-র ভেতর।

এ পথেই ওই কিশোরীরা পালিয়েছে বলে খবর।—নিজস্ব চিত্র।

এ পথেই ওই কিশোরীরা পালিয়েছে বলে খবর।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৪ ০১:১৫
Share: Save:

সরকারি হোম থেকে পাঁচ কিশোরী পালানোর ঘটনায় শো-কজ করা হল ওই হোমের সুপার-সহ আট কর্মীকে। নির্দেশ যাতে অবিলম্বে কার্যকর হয়, সে দিকে নজর দিতেও বলেছেন খোদ জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন।

মঙ্গলবার রাত ৮টা নাগাদ শহরের ঢলদিঘির সরকারি হোম থেকে পালায় ওই পাঁচ কিশোরী। হোম সূত্রে জানা গিয়েছে, খুসবু কুমারি, গীতা কুমারি, মুন্নি আখতার তানিয়া, প্রীতি সাক্সা ও নাগেশ্বরী সাক্সা নামে ওই পাঁচ কিশোরীর বয়েস ১৪ থেকে ১৬-র ভেতর। বুধবার বিকেল পর্যন্ত তাদের কোনও হদিশ পায়নি হোম কর্তৃপক্ষ। এমনকী কীভাবে ওই কিশোরীরা হোমের সবার চোখ এড়িয়ে পালাল, নজরদারি ছিল কি নাসে সব প্রশ্নেরও সদুত্তর মেলেনি। পুলিশ জানিয়েছে, ওই হোমেরই রোশনি কুমারি নামে একটি মেয়ে মঙ্গলবার দুপুরে সুপারকে পাঁচটি মেয়ে পালানোর পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছিল। কিন্তু সুপার তার কথায় বিশেষ গুরুত্ব দেননি। সুপারের অবশ্য দাবি, এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি।

জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার সোসাইটির চেয়ারপার্সন শিখা আদিত্যেরও দাবি, “কিশোরীদের পালানোর পিছনে হোমের গাফিলতি তেমন নেই। ওই পাঁচটি মেয়ের মধ্যে দু’জন কিছুদিন আগে রাজস্থানের জয়পুরের সরকারি হোম থেকে পালিয়েছিল। তারাই ওই কাজে অন্যদের উদ্বুদ্ধ করেছে।” তিনি আরও বলেন, “ঘটনাটি যখন ঘটে তখন হোমে আবাসিকদের রুটিন স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাজ চলছিল। ফলে হোমের কর্মী ও অন্যেরা সবাই সামনের ঘরে ছিলেন। সেই সুযোগেরই সদব্যবহার করেছে ওই মেয়েরা।”

বুধবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ হোমে গিয়ে দেখা যায়, শিখাদেবীর উপস্থিতিতে ঘটনার পর্যালোচনা চলছে। রয়েছেন হোমের সুপার মৌসুমি সাহা, চিকিত্‌সক সত্যজিত্‌ দাশগুপ্ত। কী করে ওই কিশোরীরা পালাল তার উত্তরে ওই চিকিত্‌সক বলেন, “আমি ৮টা নাগাদ কয়েকজনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে চলে যাই। হোমের সদর দরজাও তারপরে বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে সুপারের ফোনে জানতে পারি পাঁচজনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।” সুপারও বলেন, “চিকিত্‌সক চলে যাওয়ার পরে আমি হোমের তিনতলায় নিজের ঘরে যাই। সাড়ে ৮টা নাগাদ আবাসিকদের দেখতে গিয়ে জানতে পারি পাঁচজন নেই। তারপরেই সবাইকে খবর দিই।”

হোম সূত্রে জানা গিয়েছে, রোশনি কুমারি নামে ওই আবাসিককে বিমর্ষ হয়ে বসে থাকতে দেখে সন্দেহ হয় সুপারের। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই পুরো ঘটনাটা জানা যায়। রোশনির দাবি, ওই পাঁচ জনের সঙ্গে সেও পালাতে চেয়েছিল। কিন্তু হোমের ছাদ থেকে লাফিয়ে নামতে ভয় পায় সে। ওই পাঁচজন অবশ্য কাউকে ঘটনার কথা না বলতে বলে পালিয়ে যায়। কর্তৃপক্ষের অনুমান, তিনতলার ছাদ থেকে রেলিং বেয়ে পাশের বাড়ির ছাদে নেমে সেখান থেকে গাছ বেয়ে নেমে পালায় ওই কিশোরীরা। পুলিশেরও অনুমান, হোমের ছাদ থেকে শাড়ি ঝুলিয়ে নীচে নামে ওই পাঁচ কিশোরী। জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মেদ হোসেন মির্জা জানান, ওই পাঁচজনের ছবি বিভিন্ন থানায় পাঠানা হয়েছে। রেল পুলিশকেও জানানো হয়েছে।

ওই হোম থেকে বছর দেড়েক আগেও এক কিশোরী পালানোর চেষ্টা করে। তবে প্রায় সঙ্গেসঙ্গেই ধরা পড়ে সে। শিখা দেবীর অবশ্য দাবি, জায়গার অভাবে ঘেঁষাঘেষি করে থাকা ছাড়া আর তেমন ত্রুটি নেই হোমটির। তিনি বলেন, “প্রতিটি মেয়েকে স্কুলে পাঠানো হয়। লেখাপড়া শেষে চাকরি দেখে দেওয়া হয় এমনকী বিয়েও দেওয়া হয়। তাই এখান থেকে কেউ পালাত না। কিছুটা ঢিলেঢালা অবস্থারই সুযোগ নিয়েছে ওরা।”

হোম সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে ৩০ জন আবাসিক রয়েছেন। আর তাদের দেখভাল করার জন্য রয়েছেন আট কর্মী। রাতে এক জন নিরাপত্তারক্ষীও থাকেন। তবে আরও ৫-৬ জন কর্মী না হলে সবদিকে খেয়াল রাখা যায় না বলে হোমের দাবি।

কিন্তু জুন মাসে জয়পুর থেকে যে দু’জন হোমে আসে, তাদের তো আগেও পালানোর ঘটনা রয়েছে। যে কারণে জয়পুরের হোম তাদের ফেরতও নিতে চায়নি। সেক্ষেত্রে বিশেষ নজর দেওয়া হয়নি কেন? শিখাদেবী বলেন, “নজর রাখা হতো না তা ঠিক নয়। আসলে নজরদারিরও তো মাত্রা রয়েছে।”

ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলাশাসক উত্‌পল বিশ্বাসের দাবি, “ওই পাঁচ কিশোরী আচমকা পালিয়ে যায়নি। সময় নিয়ে, একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করেই পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু তা আন্দাজ করতে পারেনি হোম কর্তৃপক্ষ। ফলে গাফিলতি তো হয়েইছে।” তিনি জানান, আপাতত সুপার-সহ কর্মীদের শো-কজ করা হবে। পাশাপাশি তদন্ত করে দেখা হবে কার গাফিলতিতে এই ঘটনা ঘটেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

teenager run away show cause home-super
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE