বরাদ্দ মেলার পাঁচ বছর পরে শুরু হয়েছে রাস্তা তৈরির কাজ। তবে এখনও জমি বাবদ ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি চাষিরা। তাদের অভিযোগ, সরকারি দফতরে একের পর এক আবেদন জমা দিয়েও কোনও লাভ হচ্ছে না। বরং প্রতিবারই শুনতে হচ্ছে পুরনো ফাইল হারিয়ে গিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কালনা শহর থেকে মেমারির সঙ্গে যোগাযোগ তৈরির জন্য ১৯৭৫ সালে প্রায় ১০ কিলোমিটার পাকা রাস্তার উদ্যোগ করা হয়। সেই মতো চাষিদের কাছ থেকে জমিও অধিগ্রহণ করা হয়। সরকারি উদ্যোগে কোন মৌজায়, কোন চাষির, কতটা জমি রাস্তা তৈরির কাজে লেগেছে তার তালিকাও তৈরি হয়। জমিদাতা চাষিরা জানান, ওই সময়ে এল এ কালেক্টর (ল্যান্ড অ্যাকুইজিশন) দফতর এলাকার সামান্য কিছু চাষিকে ক্ষতিপূরণের অর্থ দেয়। তবে বেশিরভাগকেই পরে টাকা মিটিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। চাষিদের দাবি, রাস্তাটি যেহেতু সবার সুবিধের জন্য তৈরি করা হচ্ছে, তাই এ ব্যাপারে তাঁরা কোনও আপত্তি করেননি। কিন্তু বছরের পর বছর কেটে গেলেও টাকা না মেলায় বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়ে তদ্বির শুরু করেন চাষিরা। তাঁদের অভিযোগ, পূর্ত দফতরের কাছে প্রতিবারই শুনতে হয় পুরনো ফাইল পাওয়া যাচ্ছে না, অথবা টাকা চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে গুরুত্ব বাড়তে থাকে রাস্তাটির। আশপাশের ৫০টিরও বেশি গ্রামের মানুষের ভরসা হয়ে দাঁড়ায় সেটি। ২০০৯ সালে রাস্তাটি শক্ত এবং চওড়া করার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। ঠিক হয় ৩.৮ মিটার রাস্তাটি চওড়া করে ৫.৫ ফুট করা হবে। রাস্তাটি তৈরির জন্য আরওয়াইডিএফ তহবিল থেকে ৩ কোটি ৪১ লক্ষ টাকা বরাদ্দও হয়। কাজ শুরু করার বরাত পায় একটি ঠিকাদার সংস্থা। রাস্তার দু’পাশের গাছ কেটে মাটি ফেলার কাজও শুরু হয়। এরপরেই অবশ্য থমকে যায় কাজ। ক্ষতিপূরণ চেয়ে ওই ঠিকাদার সংস্থার গাড়ি আটকে বিক্ষোভ দেকান চাষিরা। বন্ধ হয়ে যায় কাজ। ফেরত চলে যায় রাস্তা তৈরিতে বরাদ্দ অর্থও। এ দিকে, ঠিকাদার সংস্থাটিও ক্ষতিপূরণ চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়।
রাস্তার কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়াই চরমে ওঠে স্থানীয় মানুষের দুর্ভোগ। রাস্তা ভেঙে অজস্র গর্ত তৈরি হয়। ঘটতে থাকে নানা দুর্ঘটনাও। এমনকী এক একটি গর্ত এতটাই বড় হয়ে যায় যে যান চলাচল বন্ধ করে দিতে বলেও স্থানীয়রা জানান। সাধারণ মানুষের ক্ষোভ সামলাতে কখনও পূর্ত দফতর, আবার কখনও কালনা ১ পঞ্চায়েত সমিতির তরফে কিছু ঝামা ইট ফেলে জোড়াতালি দেওয়া হয় রাস্তাটিতে। তাতেও অবশ্য কাজের কাজ তেমন হত না। এ দিকে, রাস্তা এবং ক্ষতিপূরণের টাকা কোনওটাই না মেলায় ক্ষোভ বাড়ছিল এলাকাবাসীর। পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাস্তাটি কেন্দ্র করে ২০১ থেকে ২০৫ পর্যন্ত পাঁচটি এলএ কেস (চার, পাঁচটি মৌজার চাষিদের জমি নিয়ে তৈরি হয় এক একটি এলএ কেস) চলছে। এর মধ্যে ২০৩ নম্বর কেসের অন্তর্গত চাষিরা জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ টাকা ১৯৭৬ সালেই পেয়ে যান। বাকি চারটি এলএ কেসের আওতাধীন চাষিরা যাতে দ্রুত অর্থ পায় সে ব্যাপারেও তৎপরতা শুরু হয়। কিন্তু সমস্যা দেখা যায় ২০৪ এবং ২০৫ নম্বরের কেসের পুরনো ফাইল না মেলায়। ফলে এই দুটি কেস নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ এখনও পূর্ত দফতর জেলা কালেক্টর দফতরকে দিতে পারে নি।
পূর্ত দফতরের সড়ক বিভাগের এক কর্তার কথায়, “বছর খানেক আগে ২০১ এবং ২০২ নম্বর কেসের মধ্যে থাকা চাষিদের অর্থ মেলে। তা কালেক্টর দফতরকে দিয়েও দেওয়া হয়েছে। তবে সে টাকা এখনও বিলি হয় নি বলেই খবর পেয়েছি।” ওই কর্তার দাবি, গত পাঁচ বছরে রাস্তা তৈরির উপকরণের দাম হু হু করে বেড়েছে। ফলে পুরো রাস্তাটি একসঙ্গে চওড়া করে সারানোর জন্য মোটা টাকা প্রয়োজন। তাই ঠিক হয় রাস্তাটি দু কিলোমিটার করে ভেঙে পাঁচটি পর্যায়ে কাজটি করা হবে। এ ভাবে তৈরি করলে জেলার এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারের পক্ষে রাস্তার বরাদ্দ দেওয়াও সহজ হবে। মাস দেড়েক আগে এই পদ্ধতিতেই শুরু হয় রাস্তাটির কাজ। রাস্তার কাজে জমিদাতাদের মধ্যে একজন সুলতানপুর পঞ্চায়েতের সঞ্জয় পান। তিনি বলেন, “জনস্বার্থের কথা মাথায় রেখে এ বার আর কেউ ঠিকাদার সংস্থাকে কাজে বাধা দেয় নি। তবে রাস্তার জন্য জমি দেওয়া চাষিরা অর্থ না মেলায় হতাশ।” আর ক্ষতিপূবরণ মিলবে কবে? কালনার মহকুমাশাসক সব্যসাচী ঘোষ জানান, বিষয়টি তারও জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।