Advertisement
E-Paper

পার্টি কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত রাজ্য মানছে না, ক্ষোভ সিপিএমে

জেলা সম্পাদক নির্বাচনের ক্ষেত্রে দলের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করছে রাজ্য কমিটি এমনই অভিযোগ উঠছে বর্ধমান জেলা সিপিএমে। আজ, শুক্রবার থেকে বার্নপুরে সিপিএমের যে জেলা সম্মেলন শুরু হচ্ছে, সেখানে জেলা সম্পাদক বদল হওয়া কার্যত সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু যে সিদ্ধান্তের কারণে দীর্ঘদিনের জেলা সম্পাদক অমল হালদারকে সরতে হচ্ছে, তা নিয়েই দলে প্রশ্ন রয়েছে। যার জেরে সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য কমিটির নেতাদের সামনেই বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে জেলা নেতাদের।

সুব্রত সীট

শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:০৫
তৈরি জেলা সম্মেলনের মঞ্চ। ছবি: শৈলেন সরকার।

তৈরি জেলা সম্মেলনের মঞ্চ। ছবি: শৈলেন সরকার।

জেলা সম্পাদক নির্বাচনের ক্ষেত্রে দলের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করছে রাজ্য কমিটি এমনই অভিযোগ উঠছে বর্ধমান জেলা সিপিএমে।

আজ, শুক্রবার থেকে বার্নপুরে সিপিএমের যে জেলা সম্মেলন শুরু হচ্ছে, সেখানে জেলা সম্পাদক বদল হওয়া কার্যত সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু যে সিদ্ধান্তের কারণে দীর্ঘদিনের জেলা সম্পাদক অমল হালদারকে সরতে হচ্ছে, তা নিয়েই দলে প্রশ্ন রয়েছে। যার জেরে সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য কমিটির নেতাদের সামনেই বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে জেলা নেতাদের।

এই নিয়ে জলঘোলা হলে জেলা সম্পাদক নির্বাচনের জন্য ভোটাভুটিও হতে পারে বলে বিক্ষুব্ধদের একাংশের দাবি। মুখে গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার কথা বলা হলেও সিপিএম কখনওই কোনও স্তরের কমিটি বা সম্পাদক নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভোটাভুটি পছন্দ করে না। বরং আগেই বোঝাপড়া সেরে নিয়ে এই ধরনের নির্বাচনকে সর্বসম্মত হিসেবে দেখানোই রীতি। সে ক্ষেত্রে বর্ধমানের মতো জেলায় সম্পাদক নির্বাচন নিয়ে ভোটাভুটি হলে জেলা তথা রাজ্য নেতৃত্ব অস্বস্তির মুখে পড়তে পারেন। অমলবাবু অবশ্য দাবি করেন, “এই জেলায় বরাবর পার্টির মধ্যে ঐক্যের পরিবেশ বজায় আছে। কোনও সমস্যা হবে না।”

বিদায়ী সম্পাদক এ হেন দাবি করলেও দলের নিচুতলা অন্য কথা বলছে। সিপিএমের অন্দরের খবর, সমস্যার সূত্রপাত জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে দলের রাজ্য কমিটির তরফে জেলায়-জেলায় পাঠানো নির্দেশিকা থেকে। তাতে বলা হয়েছে, কেউ টানা তিন বারের বেশি কোনও কমিটির সম্পাদক পদে থাকতে পারবেন না। তত দিনে দার্জিলিং, উত্তর দিনাজপুর ও মালদহে লোকাল, জোনাল ও জেলা সম্মেলন হয়ে গিয়েছে। জেলা সম্পাদকও নির্বাচিত হয়ে গিয়েছেন। কিন্তু ওই জেলাগুলিতে কেন একই নির্দেশ কার্যকরী হবে না, তার কোনও যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা মেলেনি।

তার চেয়েও বড় সঙ্কট, কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত রাজ্যে খণ্ডিত ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে পার্টিকর্মীদের একাংশের ধারণা। তাঁদের বক্তব্য, ২০১২ সালে পার্টি কংগ্রেসে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে (আর্টিকেল XV অফ ১৫) কাউকে সর্বোচ্চ তিন বার পর্যন্ত সম্পাদক পদে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল যে, কমিটিতে তিন চতুর্থাংশ বা তার বেশি সদস্য চাইলে পুরনো সম্পাদক আরও এক বারের জন্য পদে বহাল থাকতে পারেন। তবে তার জন্য রাজ্য কমিটির অনুমোদনও লাগবে। কিন্তু রাজ্য কমিটির নির্দেশে এই অংশ স্রেফ বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সিপিএম নেতাদের একাংশের মতে এর অর্থ, রাজ্য কমিটি কাউকেই চতুর্থ বারের জন্য অনুমোদন দেবে না। কিন্তু দলেরই অন্য অংশের প্রশ্ন, সেই অনুমোদন দেওয়া বা না দেওয়া পরের কথা। তা বলে পার্টি কংগ্রেসে গৃহীত সিদ্ধান্ত রাজ্য কমিটি ইচ্ছা মতো পাল্টে দিতে পারে কি? দলের বর্ধমান জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর একাধিক সদস্যের যুক্তি, “কেন্দ্রীয় কমিটির গৃহীত সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু গঠনতন্ত্র ভঙ্গ করার অধিকার কারও নেই।” এক প্রাক্তন সাংসদ তথা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বলেন, “এই প্রবণতা মারাত্মক। পার্টির গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে এমন নির্দেশ। এটা চলতে পারে না।”

কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত নিয়ে অতীতে বহু বিতর্ক হয়েছে রাজ্যে। যেমন, দলীয় মুখপত্র ‘দেশহিতৈষী’-র শারদ সংখ্যায় জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অরিন্দম কোনার কেন্দ্রীয় কমিটি নির্দেশিত সম্মেলনের ‘অফিশিয়াল প্যানেল’-এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। কেন্দ্রীয় কমিটির বক্তব্য ছিল, ‘অফিশিয়াল প্যানেল’ নিয়ে যদি সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত না হয়, ভোটাভুটির সময়ে ওই প্যানেলের পরে ইংরেজি বর্ণানুক্রমে অতিরিক্ত নাম যোগ করা হবে। অরিন্দমবাবু দাবি করেন, ‘অফিশিয়াল প্যানেল’ শব্দবন্ধ ব্যবহার করে কয়েক জনকে অগ্রাধিকার না দিয়ে সবার নামই বর্ণানুক্রমে রাখতে হবে। কেন্দ্রীয় কমিটি তা মানেনি। ওই ঘটনার উল্লেখ করে এক প্রাক্তন জোনাল সম্পাদকের বক্তব্য, “কোনও সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করা যায় না।”

এ বার জেলা সম্মেলনে উপস্থিত থাকার কথা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্যামল চক্রবর্তী, মৃদুল দে, বাসুদেব আচারিয়া, পলিটব্যুরো সদস্য নিরুপম সেন, রাজ্য কমিটির সদস্য মদন ঘোষ, অভীক দত্তদের। জেলা কমিটির এক সদস্যের দাবি, “গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করার বিষয়টি নিয়ে বিতর্কে নামার ব্যাপারে দলের একাংশ অনড়। তাঁরা রাজ্য কমিটির নির্দেশে ক্ষিপ্ত। বর্ধমান জেলা পার্টি কার্যত দু’ভাগ হয়ে গিয়েছে।” তবে নতুন জেলা সম্পাদক হিসেবে যাঁর নাম সবচেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছে, সেই জেলা কৃষকসভার সভাপতি তথা রাজ্য কমিটির সদস্য অচিন্ত্য মল্লিক দাবি করেন, “কোথাও কোনও বিতর্ক নেই। সব ঠিক আছে।”

তবে শুধু ওই নির্দেশই নয়। রাজ্য কমিটির আরও একটি নির্দেশ কী ভাবে কার্যকর করা যাবে তা নিয়েও কম দুশ্চিন্তায় নেই নেতারা। রাজ্য কমিটি জানিয়েছে, জেলা কমিটির সদস্যসংখ্যা কমিয়ে ৭০ করতে হবে। বর্তমানে আছেন ৮৪ জন সদস্য। তার উপরে নতুন জোনাল সম্পাদক হয়েছেন ৮ জন। সাধারণত জোনাল সম্পাদকেরা জেলা কমিটিতে থাকেন। অর্থাৎ, কমপক্ষে ২২ জন পুরনো সদস্যকে সরাতে হবে। কী ভাবে তা সম্ভব তা নিয়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আলোচনা চালিয়েছেন জেলা নেতৃত্ব।

কার মুন্ডু যাবে আর কার মুন্ডু থাকবে, ফয়সালা হবে তিন দিনে।

party congress cpm durgapur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy