Advertisement
২০ মে ২০২৪

পুলিশকে দুষে দুই রক্ষী ফেরালেন ক্ষুব্ধ বিধায়ক

পুলিশের দুষ্কৃতীকে ধরেও ছেড়ে দেওয়ার ঘটনায় নিজের নিরাপত্তীরক্ষী ফিরিয়ে দিলেন পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, যে পুলিশ দুষ্কৃতীকে ধরেও ছেড়ে দেয়, সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দিতে পারে না সেই পুলিশের নিরাপত্তার তাঁর প্রয়োজন নেই। শুক্রবার সকালে প্রথমে একটি রক্তদান শিবির, পরে কলকাতায় দলীয় বৈঠকে তপনবাবু যোগ দেন নিরাপত্তারক্ষী ছাড়াই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৪ ০১:২৯
Share: Save:

পুলিশের দুষ্কৃতীকে ধরেও ছেড়ে দেওয়ার ঘটনায় নিজের নিরাপত্তীরক্ষী ফিরিয়ে দিলেন পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, যে পুলিশ দুষ্কৃতীকে ধরেও ছেড়ে দেয়, সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দিতে পারে না সেই পুলিশের নিরাপত্তার তাঁর প্রয়োজন নেই। শুক্রবার সকালে প্রথমে একটি রক্তদান শিবির, পরে কলকাতায় দলীয় বৈঠকে তপনবাবু যোগ দেন নিরাপত্তারক্ষী ছাড়াই।

বৃহস্পতিবার সকালে পূর্বস্থলী ষ্টেশন বাজার এলাকার একটি ঘরে হাসিবুল শেখ নামে এক যুবককে কথা বলতে দেখা গিয়েছিল বিধায়কের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতা বিপুল দাসের সঙ্গে। তপনবাবুর কাছে খবর যেতেই পূর্বস্থলী থানায় ফোন করেন তিনি। পুলিশকে তিনি জানান, যে হাসিবুলের বিরুদ্ধে তিনি নিজে ১৮ অক্টোবর হাপানিয়া এলাকার দলের দুই সদস্যকে এলাকায় আটকে রেখে প্রাণে মারার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করেছেন, সেই হাসিবুল থানার কাছেই ঘোরাফেরা করছে। পুলিশ এরপরেই হাসিবুলকে স্টেশন বাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। পরে দশটা নাগাদ তপনবাবু খবর পান, পুলিশ হাসিবুলকে ছেড়ে দিয়েছে। ক্ষুব্ধ তপনবাবু পুলিশের বিরুদ্ধে দলের নেতাদের কাছে অভিযোগ করেন। দুটো নাগাদ বিধায়কের কাছে খবর পৌঁছয় পূর্বস্থলী থানায় কর্মরত গনেশ সেন নামে এক সাব ইন্সপেক্টরকে জেলা পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে। দলীয় সূত্রে খবর, এরপরেই তপনবাবু ঘনিষ্ঠ মহলে জানান দলের কাজে নানা ভাবে সাহায্য করতেন গণেশবাবু। তাঁকে সরিয়ে পুলিশ কার্যত তাঁকেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। এর প্রতিবাদে নিজের দুই নিরাপত্তারক্ষীকে থানায় ফেরত পাঠিয়ে দেন তিনি।

পরে দিনভর পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের আধিকারিকেরা বারবার নিরাপত্তারক্ষী ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু সিদ্ধান্ত বদলান নি তপনবাবু। শুক্রবার সকালে পূর্বস্থলী থানার আইসি ওই নিরাপত্তারক্ষীদের বিধায়কের বাড়িতে পাঠালেও তাঁদের ফের ফিরিয়ে দেন বিধায়ক। তপনবাবু আইসিকে বলেন, ‘বাড়ি পাহারা দিলে আপত্তি নেই, কিন্তু আমি ওদের গাড়িতে তুলব না।’ তপনবাবু বলেন, “আমি একজন জনপ্রতিনিধি। সাধারণ মানুষ যাতে ভাল থাকে তা দেখার দায়িত্ব আমার। যে পুলিশ হাসিবুলের মতো দুষ্কৃতীর হাত থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করতে পারে না, সে পুলিশের নিরাপত্তা আমার প্রয়োজন নেই।”

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, এলাকার পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিধায়ক নিরাপত্তা রক্ষী চাইতে পারেন। গোয়েন্দা বিভাগের একটি রিপোর্ট নিয়ে পুলিশ তা অনুমোদন করে। বর্ধমান জেলায় তপনবাবুই একমাত্র বিধায়ক যার জন্য পুলিশ দু’জন নিরাপত্তারক্ষী বরাদ্দ করেছে। ওই রক্ষীদের কাছে নাইন এমএম পিস্তলও রয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্বস্থলী ২ ব্লকের বেশ কিছু গ্রাম রয়েছে যেখানে সারা বছরই অবৈধ ভাবে মাটি কাটা-সহ নানা দুষ্কর্ম চলে। এলাকার দখল নিয়েও রেষারেষি চলে। চলে বোমা-গুলির লড়াইও। এই পরিস্থিতিতে ২০১১ সালে বিধানসভা ভোটের প্রার্থী ঘোষণা হওয়ার পরে তপনবাবু এক জন নিরাপত্তা রক্ষী চান। তিনি বিধায়ক হওয়ার পরেও ওই নিরাপত্তারক্ষী বহাল থাকে। পূর্বস্থলীর রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একজন নিরাপত্তারক্ষী যথেষ্ট না হওয়ায় বিধায়কের জন্য মাসছয়েক পরে আরও এক জন নিরাপত্তারক্ষী বহাল করা হয়। তবে নিরাপত্তারক্ষী থাকার পরেও বারকয়েক তপনবাবুর উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। বছর দুয়েক আগে কাদের শেখ নামে এক সমাজবিরোধী তপনবাবুর বাড়ির কাছাকাছি এলাকায় এসে বিধায়ককে প্রাণে মারার হুমকি দেয়। তবে একজন দেহরক্ষী কাদেরকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এছাড়াও এলাকার কার্তিক পুজোর অনুষ্ঠান ও নবদ্বীপের হাসপাতালে তাঁর উপর হামলার চেষ্টা হয় বলেও অভিযোগ।

মহকুমা পুলিশ সূত্রে খবর, পূর্বস্থলীতে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সম্প্রতি বেড়ে যাওয়ায় তপনবাবুর নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। বর্তমানে বিধায়ক কোনও অনুষ্ঠানে গেলে সেখানে আর কারা হাজির রয়েছে সে ব্যাপারে দুই নিরাপত্তারক্ষী ছাড়াও দুই সাদা পোশাকের পুলিশ নজর রাখে। শুক্রবার এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, “জনপ্রতিনিধিকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের। তপনবাবু নিরাপত্তারক্ষীদের নিজের কাছে রাখতে না চাইলে বিষয়টি জটিল হবে। আমরা তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করছি।” তপনবাবুর ঘনিষ্ঠ অনুগামীদের অনেকেও নিরাপত্তারক্ষী ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা মেনে নিতে পারছেন না। তাঁদেরই একজন তাপস দে বলেন, “নিরাপত্তারক্ষী ছাড়া চলা বোকামি হবে। আমরা ওঁনাকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। দল চায় না উনি বিপদের মুখে পড়ুন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

purbasthali police tapan chattopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE