Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বাইরে আক্রান্ত বাবা, ঘরে আত্মঘাতী ছাত্রী

ধাক্কা দিয়ে বাড়ির দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে গিয়েছিল ছেলেগুলো। ঘরে তখন নবম শ্রেণির ছাত্রীটি একা। ইতিমধ্যে মেয়েটির বাবা এসে পড়ায় ছেলেগুলো তাঁর উপরেই চড়াও হয়। পাড়ার লোকজন এসে তাঁকে উদ্ধার করার পরে কিন্তু তিনি আর মেয়ের সাড়াশব্দ পাননি। পিছন দিয়ে ঘরে ঢুকে তিনি দেখেন, গলায় ওড়না জড়িয়ে সিলিং ফ্যান থেকে মেয়ের নিথর দেহ ঝুলছে। বুধবার দুপুরে বর্ধমানের উখড়ায় পুলিনবিহারী বালিকা বিদ্যালয়ের বছর ষোলোর ওই ছাত্রীর অপমৃত্যুর পরে পুলিশে এমনই অভিযোগ করেছেন তার বাবা দিব্যেন্দু পাল।

মেয়ের দেহের সামনে শোকার্ত মা। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।

মেয়ের দেহের সামনে শোকার্ত মা। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
উখড়া শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:২৬
Share: Save:

ধাক্কা দিয়ে বাড়ির দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে গিয়েছিল ছেলেগুলো। ঘরে তখন নবম শ্রেণির ছাত্রীটি একা।

ইতিমধ্যে মেয়েটির বাবা এসে পড়ায় ছেলেগুলো তাঁর উপরেই চড়াও হয়। পাড়ার লোকজন এসে তাঁকে উদ্ধার করার পরে কিন্তু তিনি আর মেয়ের সাড়াশব্দ পাননি। পিছন দিয়ে ঘরে ঢুকে তিনি দেখেন, গলায় ওড়না জড়িয়ে সিলিং ফ্যান থেকে মেয়ের নিথর দেহ ঝুলছে।

বুধবার দুপুরে বর্ধমানের উখড়ায় পুলিনবিহারী বালিকা বিদ্যালয়ের বছর ষোলোর ওই ছাত্রীর অপমৃত্যুর পরে পুলিশে এমনই অভিযোগ করেছেন তার বাবা দিব্যেন্দু পাল। আসানসোল-দুর্গাপুরের এডিসিপি (পূর্ব) সুনীল যাদব বলেন, “মোট ছ’জনের নামে আত্মহত্যায় প্ররোচনা, ইভটিজিং ও মারধরের অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তাদের বয়স ১৭ থেকে ১৮ মধ্যে বলে শুনছি।” রাতেই পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতার করে। তাদের এক জনের বাড়ি দিঘায়, অন্য জন স্থানীয় বাসিন্দা। তবে মূল অভিযুক্তকে পুলিশ রাত পর্যন্ত ধরতে পারেনি।

বাবা পেশায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি, মা কাকলি পাল আশা কর্মী। এ দিন তাঁরা দু’জনেই কাজে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁদের ছোট ছেলে পাশের বাড়ি গিয়েছিল। উখড়ার বিশালাক্ষীতলায় নিজের বাড়িতে দাঁড়িয়েই দিব্যেন্দুবাবু অভিযোগ করেন, “আমি বেলা ১২টা নাগাদ বাড়ি ফিরে দেখি, পাশের পাড়ার কয়েকটি ছেলে বাড়ির উঠোনে ঢুকে পড়েছে। মেয়েকে কটূক্তি করছে। প্রতিবাদ করতে গেলে আমায় মারধর করে। চিত্‌কার শুনে আশপাশের লোকজন চলে এলে ওরা পালায়।”

দিব্যেন্দুবাবু জানান, ইতিমধ্যে তাঁর মেয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল। ছেলেগুলো চলে যাওয়ার পরে তিনি বারবার ডাকলেও সে সাড়া দেয়নি। তাতে সন্দেহ হওয়ায় বাড়ির পিছন দিকে গিয়ে উঁকি দিয়ে তিনি দেখেন, মেয়ের নিথর দেহ ঝুলছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অভিযুক্তেরা তিনটি মোটরবাইক ও সাইকেলে করে এসেছিল। পড়শিদের তাড়ায় সাইকেল ফেলেই তারা পালায়। ছাত্রীটির পরিবারের অভিযোগ, সাইকেলটি যার, সেই ছেলেটি গত কিছু দিন ধরে মেয়েটিকে উত্ত্যক্ত করছিল। ছাত্রীর মা কাকলি পাল একটানা বিলাপ করে চলেছেন, “আমি আর কিছুই চাই না। মেয়ের খুনিদের শাস্তি চাই।”

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই ছেলেটি ছাত্রীটিকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল। সে তা নাকচ করে দেওয়ায় কটূক্তি করত। এ দিন সকালে ছাত্রীর এক দাদা ছেলেটিকে ডেকে জানতে চায়, কেন সে এই সব কাজ করছে। এই নিয়ে দু’জনের কথা কাটাকাটি, ধাক্কাধাক্কি হয়। এর পরেই ছেলেটি সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে চড়াও হয়। অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ছাত্রীর দেহ আটকে বিক্ষোভ দেখান আত্মীয়-পড়শিরা। পুলিশকর্তারা গিয়ে দ্রুত অভিযুক্তদের গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে তাঁরা নিরস্ত হন।

স্থানীয় সূত্রের খবর, ঘটনায় মূল অভিযুক্ত একাদশ শ্রেণি অবধি পড়াশোনা করে পড়া ছেড়ে দিয়েছে। তার বাবা রংমিস্ত্রির কাজ করেন। আর এক অভিযুক্ত উখড়া হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র। তার বাবা নির্মাণসামগ্রী সরবরাহ করেন। এর আগেও নেশা করে এলাকায় গোলমাল পাকানোর অভিযোগ উঠেছে এই ছেলেদের বিরুদ্ধে। উখড়া হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক পূর্ণচন্দ্র মুখোপাধ্যায় বলেন, “এই ঘটনায় লজ্জায় আমাদের মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে।” পুলিনবিহারী বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা গীতা ভট্টাচার্যের আক্ষেপ, “মেয়েটার মুখ মনে পড়লেই মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। যাতে এ ভাবে আর কোনও মায়ের কোল খালি না হয়, প্রশাসন সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিক।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ukhra school student suicide attack on woman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE