Advertisement
E-Paper

বিজেপি আঁকড়ে নিরাশ বাম

সিপিএমের নেতারা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি। তৃণমূলের ভোট কেটে বিজেপি তাঁদের জেতাবে, এই খোয়াবেই বরং বুঁদ হয়ে ছিলেন বর্ধমানের বাম নেতারা। দিনের শেষে দেখা গেল, ঘটেছে ঠিক উল্টো। ফুলের লড়াইয়ের বদলে পদ্মকাঁটা সিঁদ দিয়েছে তাঁদের ঘরে।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৪ ০২:১৭

সিপিএমের নেতারা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি।

তৃণমূলের ভোট কেটে বিজেপি তাঁদের জেতাবে, এই খোয়াবেই বরং বুঁদ হয়ে ছিলেন বর্ধমানের বাম নেতারা। দিনের শেষে দেখা গেল, ঘটেছে ঠিক উল্টো। ফুলের লড়াইয়ের বদলে পদ্মকাঁটা সিঁদ দিয়েছে তাঁদের ঘরে।

নির্বাচনের পরে ছাপ্পাভোটের অভিযোগ তুলেও সিপিএম দাবি করেছিল, জেলার তিনটি আসনেই তারা জিতবে। পরপর দু’দিন জেলার নেতাদের নিয়ে বর্ধমানের দলীয় দফতরে বৈঠক করা হয়। জেলার তিন আসনেই ‘ভাল ফলে’র আশা থাকায় ফল ঘোষণার পরে এলাকায়-এলাকায় দলীয় কর্মীদের কী করতে হবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। দেখা গেল, ২০০৯ এবং ২০১১-র পরে ভোটারের মন বুঝতে তাঁরা ফের ব্যর্থ।

ফল বেরনোর পরে শুক্রবার বিকেলেই বর্ধমানের পার্কার্স রোডে পেল্লায় জেলা অফিসে পর্যালোচনায় বসেন সিপিএম নেতারা। তত ক্ষণে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে, বর্ধমান পূর্ব ও বর্ধমান-দুর্গাপুর এই দুই কেন্দ্রে গত বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় যথাক্রমে ৯ ও ১২ শতাংশ ভোট কম পেয়েছে বামেরা। বিজেপি-র লাভ হয়েছে যথাক্রমে ৯ ও ১৪ শতাংশ। তাদের এই ফুলে-ফেঁপে ওঠায় কংগ্রেস-তৃণমূলের যৌথ ভোটের ক্ষতি মোটেই তেমন কিছু হয়নি। বর্ধামান-দুর্গাপুরে যা-ও বা ৪ শতাংশ ভোট কমেছে, বর্ধমান পূর্বে বরং বেড়েছে ১ শতাংশ। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমল হালদারের আক্ষেপ, “বিজেপি আমাদের ভোটে এ ভাবে থাবা বসাবে, বুঝতে পারিনি।”

বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রে সদ্য ফরওয়ার্ড ব্লক ছেড়ে তৃণমূলে এসে প্রার্থী বনে যাওয়া সুনীল মণ্ডলের পেয়েছেন ৫ লক্ষ ৭৪ হাজার ৫৬০ ভোট। সেখানে সিপিএম প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র দাস পেয়েছেন ৪ লক্ষ ৬০ হাজার ১৮১ ভোট, ব্যবধান ১ লক্ষ ১৪ হাজারেরও বেশি। বিজেপি টেনেছে ১ লক্ষ ৭০ হাজার ৮২৮ভোট। ২০০৯ সালে এই কেন্দ্র থেকে বিজেপি ভোট পেয়েছিল ৭০ হাজারের কিছু বেশি। দু’বছর পরে বিধানসভা নির্বাচনে তা কমে দাঁড়ায় প্রায় ৫১ হাজার। কিন্তু এ দিন তারা যে ভাবে বাম ভোট কেটে বাড়তে শুরু করে, চতুর্থ রাউন্ডের গণনা চলাকালীনই হাল ছেড়ে দেন সিপিএম প্রার্থী। তাঁর বিরুদ্ধে যে কাটোয়ার কংগ্রেস নেতা তুহিন সামন্ত খুনে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে, সে কথা তুলে গোটা লোকসভা কেন্দ্র জুড়ে প্রচার চালিয়েছিল তৃণমূল। ঈশ্বরবাবুর দাবি, “ওই প্রচার কোনও কাজই করেনি। আসলে বিজেপি আমাদের ভোট কেড়ে নিয়েছে।”

একই বক্তব্য সিপিএমের বর্ধমান-দুর্গাপুরের সিপিএম প্রার্থী শেখ সাইদুল হক। তাঁর ব্যাখ্যা, মোদী-মমতা দ্বৈরথের ফলে সংখ্যালঘু ভোট এককাট্টা করেছে তৃণমূল। আবার তৃণমূল-বিরোধী ভোট বিজেপির বাক্সে গিয়েছে। সুনীলবাবু অবশ্য এই বক্তব্যে গুকুত্ব দিতে রাজি নন। গণনা কেন্দ্রের ভিতরে গাছতলায় দলের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে খোশমেজাজে আড্ডা দিতে-দিতে তিনি বলেন, “আমি বামফ্রন্টের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে থাকতে পারি, কিন্তু জনগণের সঙ্গে করিনি। সিপিএম জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে বলেই মানুষ তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। বিজেপি আমাদের ভোট না কাটলে আরও বেশি ভোটে জিততাম।”

এখনও পর্যন্ত বিপর্যয়ের যে সব সম্ভাব্য কারণ সিপিএমের আলোচনায় উঠে এসেছে, সেগুলো এ রকম: এক) নতুন ভোটারদের একটা বড় অংশ বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন। অথচ এই ভোটারেরা সাধারণত সিপিএমের বাড়ির সদস্য বলেই পরিচিত। দুই) তৃণমূলেরও একটা অংশ তাদের থেকে মুখ ফিরিয়েছে, কিন্তু পরিকল্পনা মাফিক ‘ছাপ্পা’ মেরে তৃণমূল সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিয়েছে। তিন) সিপিএমের ‘নিজস্ব’ ভোটাররাও বিজেপিকে ভোট দিয়েছে।

প্রশ্ন হল, সিপিএমের ভোটারেরা এ ভাবে বিজেপির দিকে ঢলে পড়ল কেন? দলের জেলা সম্পাদকের মতে, গত আড়াই বছরে এ রাজ্যে কোনও কর্মসংস্থান হয়নি, তাই তাঁরা ভেবেছেন বিজেপিকে ভোট দিলে তাঁরা কাজ পাবেন। তৃণমূলের ক্রমাগত আক্রমণের সামনে অসহায় হয়ে পড়ে নিরাপত্তার আশাতেও একটা বড় অংশের মানুষ বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন। যদিও এ রাজ্যে সামান্য শক্তি নিয়ে এবং ঘোরতর শাসকবিরোধী হয়েও বিজেপি কী ভাবে নিরাপত্তা দেবে, সেই ব্যাখ্যা মেলেনি। আসানসোল আসন নিয়ে সিপিএমের বিশ্লেষণ: সেখানে সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে পাণ্ডবেশ্বর ও জামুড়িয়ায় তাদের ভোটের ক্ষয় হয়েছে। বাকি কেন্দ্রগুলিতে তৃণমূলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথের কটাক্ষ, “বিজেপির ঘাড়ে ভর দিয়ে সিপিএম জেতার স্বপ্ন দেখেছিল। মানুষ ভাঙিয়ে দিয়েছে।”

bjp left soumen dutta burdwan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy