শহরে এই দৃশ্য আবার দেখতে চায় বিজেপি। ছবি: শৈলেন সরকার।
এক পুরসভা এলাকায় অগ্রগমন প্রায় ৪৬ হাজার ভোটে। অন্যটিতে তা ৪০ হাজারের কাছাকাছি।
লোকসভা আসন দখল করার পরে এ বার তাই আসানসোল ও কুলটি পুরসভা পাখির চোখ বিজেপি-র।
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, আসন্ন পুরভোটকে নজরে রেখেই সাংগঠনিক ঘুঁটি সাজানো শুরু করেছে দল। শপথগ্রহণ পর্ব মেটার পরে আসানসোলে ফেরার কথা রয়েছে বাবুল সুপ্রিয়ের। তার পরেই দলের কোর কমিটির বৈঠকে পুরভোটের চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করা হবে। এই মুহূর্তে বাবুলের পরামর্শ ছাড়া কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না, তাই তাঁর ফেরার জন্য অপেক্ষা করা হবে বলে জানিয়েছেন শহরের বিজেপি নেতারা।
বিজেপি শিবির যখন পরবর্তী পদক্ষেপ স্থির করতে ব্যস্ত, আসানসোলের তৃণমূল নেতৃত্ব তখনও হারের ধাক্কা সামলে উঠতে পারেনি। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, লোকসভার ফল বেরোনোর পরেই দুই পুরভোটের প্রস্তুতিতে ঝাঁপিয়ে পড়া হবে বলে ঠিক ছিল। কিন্তু অপ্রত্যাশিত ফলে নেতা থেকে কর্মী, সকলেই দিশাহারা। আসানসোল পুরসভা আসানসোল উত্তর ও দক্ষিণ বিধানসভা এলাকা নিয়ে গঠিত। এই দুই এলাকায় যথাক্রমে প্রায় ২৫ হাজার ও ২১ হাজার ভোটে বিজেপি প্রার্থীর থেকে পিছিয়ে ছিলেন তৃণমূল প্রার্থী। আসানসোল পুরসভায় ৫০টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র পাঁচটিতে বিজেপির থেকে বেশি ভোট পেয়েছে তৃণমূল। সেগুলি হল ৫, ১১, ২৭, ২৮, ২৯ নম্বর ওয়ার্ড। শহরের মেয়র তথা আসানসোল দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বা চেয়ারম্যান জিতেন্দ্র তিওয়ারির ওয়ার্ডেও পিছিয়ে পড়েছে তৃণমূল।
প্রার্থীর নাম ঘোষণার পর থেকেই আসানসোলে তৃণমূলে চাপানউতোর চলেছে। এই আসনে জেতা যে সহজ হবে না, তা সম্ভবত দলের শীর্ষ নেতৃত্বও বুঝেছিলেন। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে এখানে চারটি সভা করে যান। ভোটের মাত্র সাত দিন আগে সভা করতে এসে তিনি দলীয় বিধায়কদের নাম করে এক হয়ে কাজ করার নির্দেশও দেন। তবু হার এড়াতে পারেননি তৃণমূল প্রার্থী দোলা সেন।
তৃণমূল সূত্রে খবর, ফল ঘোষণার পরপরই আসানসোল উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক তথা রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী মলয় ঘটককে তলব করেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁকে পদ থেকে ইস্তফা দিতে বলা হয়েছে বলেও তৃণমূলের একটি সূত্রে খবর। মলয়বাবু এ ব্যাপারে কোনও কথা বলতে চাননি। তবে তিনি নিজে আর পদে না থাকতে চাওয়ার কথা ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন বলে একটি সূত্রের দাবি। দলীয় সূত্রে আরও খবর, আসানসোলের মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কুলটির বিধায়ক তথা পুরপ্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়কেও দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ইস্তফার নির্দেশ দিতে পারে। তবে তাপসবাবু ও উজ্জ্বলবাবু জানান, তাঁরা রবিবার পর্যন্ত এমন কোনও নির্দেশ পাননি।
এমন টানাপড়েনের মাঝেও স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একাংশের ধারণা, হারের পরে তিরস্কার সত্ত্বেও সংগঠনে বড় বদল এখনই আনবেন না শীর্ষ তৃণমূল নেতৃত্ব। তাতে দলে ভাঙন ধরতে পারে। তাই আপাতত নেতাদের সতর্ক করেই ছেড়ে দেওয়া হবে বলে ধারণা এলাকার কর্মীদের। দলের কয়েক জন ব্লক নেতার দাবি, তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে এলাকায় সংগঠন গড়েছেন মলয়বাবু। তাঁর হাত ধরেই নানা দল থেকে নেতা-কর্মীরা এসেছে যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। তাঁর হাত ধরেই এই শিল্পাঞ্চলে দলের শ্রমিক সংগঠন গড়ে উঠেছে। এই অবস্থায় তিনি শাস্তির মুখে পড়লে এলাকার নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রভাব পড়তে পারে।
তৃণমূলের আর একটি অংশের আবার অনুমান, আসানসোল ও কুলটির মেয়র, চেয়ারম্যানদের কৌশলগত কারণেই ইস্তফা দিতে বলতে পারেন দলীয় নেতৃত্ব। কারণ, সেক্ষেত্রে পুরসভা চালানোর জন্য প্রশাসক নিয়োগ করা হবে। ফলে, পুরভোট পিছিয়ে যাবে। সেই সুযোগে দলের সংগঠন আবার খানিকটা গুছিয়ে নিয়ে ভোটযুদ্ধে নামা যাবে। তৃণমূলের সব নেতাই অবশ্য কোনও কিছু নিয়েই প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি। মুখে কুলুপ সকলেরই।
বিজেপি অবশ্য চাইছে, পুরভোট হোক ঠিক সময়েই। তাতে লোকসভা ভোটের ফলের ধারা বজায় রাখা সম্ভব হবে বলে দলের নেতারা মনে করছেন। বিজেপি-র জেলা সভাপতি নির্মল কর্মকার বলেন, “আমাদের কোর কমিটি তৈরি হয়ে গিয়েছে। আমরা সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপাচ্ছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy