ভুল বিল জমা দিয়ে প্রায় চার গুণ বেশি বেতন নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বারাবনির একটি স্কুলের প্রধান করণিকের বিরুদ্ধে। গত চার মাস ধরে এই বেনিয়ম চলেছে বলে অতিরিক্ত জেলা স্কুল পরিদর্শকের (এডিআই) দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক একটি লিখিত ব্যাখ্যা জমা দিয়েছেন এডিআই দফতরে। অভিযুক্ত করণিকের দাবি, ভুল করে টাকার অঙ্ক বেশি লিখে ফেলেছেন। পরপর চার মাস কী ভাবে একই ভুল হল, সে ব্যাখ্যা অবশ্য মেলেনি। এডিআই (আসানসোল) সুরপতি প্রধান জানান, ঘটনার তদন্ত হবে।
এডিআই দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি মহকুমার স্কুলগুলির শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের বেতন বিষয়ক দফতরের কর্মীদের এই অসামঞ্জস্য নজরে পড়ে। বিষয়টি জানতে পেরে সুরপতিবাবু বারাবনির জামগ্রাম আঞ্চলিক হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অমিতাভ রায়কে ডেকে পাঠিয়ে ব্যাখ্যা চান। অমিতাভবাবু অভিযোগ করেন, স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের বেতনের বিল তৈরি করেন প্রধান করণিক নরেন্দ্রনাথ হাজরা। গত জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত নিজের বেতনের ক্ষেত্রে বেশি টাকার বিল তৈরি করে এডিআই দফতরে জমা দিয়েছেন তিনি। এই বেনিয়ম করতে গিয়ে তাঁর সই জাল করা হয়েছে বলেও অমিতাভবাবুর অভিযোগ।
ওই স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক কালিচরণ রাউতের আবার দাবি, “প্রধান শিক্ষক যা স্বাক্ষর করতে পাঠান, তা স্বাক্ষর করে দেওয়া আমার কাজ। জুলাইয়ে নরেন্দ্রনাথবাবু আমার কাছ থেকে স্বাক্ষর করালেও ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের স্বাক্ষর ছাড়াই এডিআই অফিসে বেতনের কাগজপত্র জমা দেন। অগস্টে আবার আমার স্বাক্ষর জাল করে ও প্রধান শিক্ষককে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে জমা দিয়েছেন। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে আমাদের দু’জনের স্বাক্ষরই জাল করে জমা দিয়েছেন। চার মাসই তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে অনলাইনে বেতন জমা হয়েছে।” তিনি বলেন, “আমরা এই ধরনের জালিয়াতি প্রশ্রয় দেব না। থানায় অভিযোগ করব।”
ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অমিতাভ রায় বলেন, “১০ বছর ধরে এই নরেন্দ্রনাথবাবু স্কুলের সকলের বেতনের কাগজ এডিআই অফিসে জমা দিয়ে আসছেন। আমি মাস ছয়েক ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক হিসেবে কাজ করছি। তাঁর কথায় বিশ্বাস করে এক বার স্বাক্ষর করে দিয়েছি।” তাঁর আরও বক্তব্য, “তবে কী ভাবে এডিআই অফিস থেকে কিছু না দেখে প্রায় চার গুণ টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে গেল, আমি বুঝতে পারছি না। মঙ্গলবার এডিআই-কে না পেলেও তাঁর অফিসে তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানিয়ে এসেছি।” এডিআই দফতরের চোখ এড়িয়ে কী ভাবে এই বেনিয়ম হল সে প্রশ্ন তুলেছেন পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির আসানসোল ব্লক সভাপতি রাজীব মুখোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, “কী ভাবে এমন ঘটনা ঘটল, খতিয়ে দেখে দোষীদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”
অভিযুক্ত করণিক নরেন্দ্রনাথবাবু অবশ্য দাবি করেন, “এটা আমার অনিচ্ছাকৃত ভুল। ভুল করে টাকার অঙ্ক বেশি লিখে ফেলেছি। সব টাকা ফেরত দিয়ে দেব।” কিন্তু গত চার মাস ধরে একই ভুল করলেন কী করে, সে প্রশ্নে কোনও উত্তর দেননি তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy