কাটোয়ার কেডিআই স্কুলে চলছে প্রশিক্ষণ সভা। —নিজস্ব চিত্র।
কেউ বলছেন পরিবারের উৎসাহেই ভোটের দায়িত্ব সামলাতে এসেছেন। কেউ বা বাড়ির বাধা না মেনে ‘নতুন কাজ’ করার জন্য এগিয়ে এসেছেন।
সোমবার জেলার বিভিন্ন জায়গায় নির্বাচনের দায়িত্ব সামলানোর প্রশিক্ষণ নিতে এসে মহিলা ভোটকর্মীরা ওই কথাই জানালেন। আর তাঁদের কথা শুনে জেলার এক নির্বাচনী আধিকারিক বলেই ফেললেন, “পুরুষ ভোটকর্মীরা দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য দফতরে ভিড় জমান, আর এখানে বয়স্ক মহিলারাও নিজেদের উৎসাহে এগিয়ে আসছেন। আমাদেরও ভাল লাগছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বারের লোকসভা নির্বাচনে বর্ধমানে পরীক্ষামূলক ভাবে ৫০টি বুথ মহিলা কর্মীদের দিয়ে পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা নির্বাচন কমিশন। কাটোয়া, আসানসোল, দুর্গাপুর, বর্ধমান দক্ষিণ ও কালনা মহকুমাতে ৮টি করে এবং বর্ধমান সদরে ১০টি বুথে মহিলারা নির্বাচনের দায়িত্ব সামলাবেন। এর জন্য নির্বাচন কমিশন ২৫০ জন মহিলাকে ভোটকর্মী হিসাবে নিয়োগ করেছেন। যাঁদের মধ্যে ৫০ জনকে ‘রিজার্ভ বেঞ্চে’ রেখে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বর্ধমানের জেলাশাসক তথা জেলা নির্বাচন আধিকারিক সৌমিত্র মোহন বলেন, “রাজ্যের মধ্যে এতগুলি বুথ মহিলা পরিচালিত হতে চলেছে, যা অবশ্যই রাজ্যের মধ্যে প্রথম। সম্ভবত আমাদের দেশেও এ রকম ব্যবস্থা নেই। পরীক্ষামূলক ওই পরিকল্পনা সফল হলে পরবর্তী সময়ে ভোটের দায়িত্বে আরও বেশি সংখ্যক মহিলাকে আমরা নিতে পারব।” জেলা প্রশাসনের দাবি, ভোটকর্মী হিসাবে যে সব মহিলাদের নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে, তাঁরা কেউই ভোটে বুথের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চাননি। সেখানে পুরুষ ভোটকর্মীদের একটা অংশ দায়িত্ব থেকে রেহাই চেয়ে প্রশাসনের সামনে নানা ‘অজুহাত’ তুলে ধরেছে। জেলাশাসক বলেন, “সবচেয়ে খুশির ব্যাপার একজন মহিলা ভোটকর্মীও প্রশিক্ষণে অনুপস্থিত ছিলেন না। তাঁরা প্রশিক্ষকদের কাছ থেকে মন দিয়ে শেখার চেষ্টা করছেন।”
দুই শিল্পাঞ্চলের ২৭টি বুথও মহিলা পরিচালিত হবে। এর মধ্যে আসানসোলের ২০ টি এবং দুর্গাপুরের ৭টি বুথ রয়েছে। জেলা নির্বাচন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুরের সাতটি বুথের সবকটিই পুর এলাকায়। আর পাঁচটা সাধারণ বুথের মতোই এগুলিতেও প্রিসাইডিং অফিসার ও ৩ জন পোলিং অফিসার থাকবেন। ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকবেন ওই চারজন। এছাড়া আরও একজন বিশেষ মহিলা অফিসার থাকবেন।
জেলার স্কুল শিক্ষা দফতরের এক কর্মী শ্যামলী দে জানান, বাড়ি থেকে ভোটের দায়িত্ব নিতে নিষেধই করেছিল। কিন্তু তিনি সে কথা শোনেননি। তাঁর কথায়, “একটা নতুন অভিজ্ঞতার সুযোগ পেয়েছি। এ সুযোগ হাতছাড়া করা যায় না কি!” কাটোয়া বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা শুভ্রা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে কাটোয়া পিটিটিআইয়ের শিক্ষিকা গোপা দত্তবাগচিরাও বলেন, “আমাদের পরিবারের লোকজনেরা বারণ করা তো দূরের কথা, উল্টে উৎসাহ দিয়েছেন।” এই দলে রয়েছেন পঞ্চাশোর্ধ বাসুমতী দাস, রাখি দাস, প্রতিমা সররাও। তাঁদের কথায়, “নানা কারণে বাড়ির ছেলে-বৌমারা ভোটের কাজ থেকে সরে আসতে বলেছিল। কিন্তু আমরা ওই বারণ শুনিনি। সরকারি কর্মী যখন, সরকারের নির্দেশ তো মানতেই হবে।”
এ দিন মহিলা কর্মীরা কর্মীরা যথেষ্ট উৎসাহ নিয়েই প্রশিক্ষকদের কথা শুনেছেন। কী ভাবে ‘মক পোল’ নিতে হয় কিংবা এসএমএস কখন করতে হবে তা জেনেছেন। হাতে কলমে ইভিএম যন্ত্র ‘সিল’ করাও শিখেছেন। এক প্রশিক্ষক বলেন, “এক বয়স্ক মহিলা আমাদের কাছে জানিয়েছেন, তিনি ঠিক মতো মোবাইল ব্যবহার করতে জানেন না, সেখানে কী ভাবে এসএমএস করবেন?” তবে প্রশিক্ষণের পরেও বুক দুরুদুরু মহিলা ভোটকর্মীদের। কাটোয়ার ডিডিসি গার্লস উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা বিদিশা সেন সরকার থেকে বর্ধমানের কুরচি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা শুভলক্ষ্মী ঘোষ সবাই বলেন, “মনের মধ্যে একটা আশঙ্কা তো থাকছেই। শেষ পর্যন্ত বুথের দায়িত্ব সামলাতে পারব তো?”
এখন নির্বাচনী বৈতরণী ঠিক মতো পার করা গেল কি না তা বোঝা যাবে ৩০ এপ্রিলই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy