Advertisement
E-Paper

বহুতল না কেড়ে নেয় জল

পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা নেই। ভরসা মাটির নীচের জলই। নেই উপযুক্ত নিকাশি ব্যবস্থা। অথচ, দুর্গাপুর শহর ও লাগোয়া এলাকায় একের পর এক গড়ে উঠছে বহুতল। শহরাঞ্চলে বাড়ি তৈরির ব্যাপারে রাজ্য সরকার নতুন নগর-নীতির কথা ঘোষণা করার পরে আরও বহুতল আবাসন গড়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে। তাতে পানীয় জল, নিকাশি-সহ নানা পরিষেবা নিয়ে আশঙ্কার মেঘ দেখছেন বাসিন্দাদের অনেকেই।

সুব্রত সীট

শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৪ ০১:৪০
জাতীয় সড়কের পাশে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু বহুতল।—নিজস্ব চিত্র।

জাতীয় সড়কের পাশে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু বহুতল।—নিজস্ব চিত্র।

পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা নেই। ভরসা মাটির নীচের জলই। নেই উপযুক্ত নিকাশি ব্যবস্থা। অথচ, দুর্গাপুর শহর ও লাগোয়া এলাকায় একের পর এক গড়ে উঠছে বহুতল। শহরাঞ্চলে বাড়ি তৈরির ব্যাপারে রাজ্য সরকার নতুন নগর-নীতির কথা ঘোষণা করার পরে আরও বহুতল আবাসন গড়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে। তাতে পানীয় জল, নিকাশি-সহ নানা পরিষেবা নিয়ে আশঙ্কার মেঘ দেখছেন বাসিন্দাদের অনেকেই।

দুর্গাপুরের বিধাননগর, সিটি সেন্টার ইত্যাদি এলাকায় গড়ে উঠেছে বেশ কিছু বহুতল। সেগুলিতে পুরসভা, ডিপিএল বা এডিডিএ পাইপলাইনের মাধ্যমে জল সরবরাহ করে। তাই জল নিয়ে সেখানে দুশ্চিন্তা নেই। কিন্তু ভূগর্ভস্থ আধুনিক নিকাশি ব্যবস্থা গড়া হয়নি। সগড়ভাঙা আমবাগান এলাকায় দু’টি আবাসনে প্রায় দেড়শো বাসিন্দা সাবমার্সিবল পাম্প দিয়ে মাটির তলার জল তুলে তা ব্যবহার করেন পানীয় জল হিসেবে। সেখানে ঘন জনবসতির মাঝে আরও আবাসন নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সাবমার্সিবল পাম্প বসানোর কাজও চলছে। ভূগর্ভস্থ নিকাশিরও বালাই নেই। এ ভাবে বসতির চাপ বাড়লে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের উপরে চাপ পড়বে বলে মনে করছেন পাড়ার বাসিন্দারা। বেনাচিতিতেও একই ছবি। মাটির নীচের জল এবং আধুনিক নিকাশি ব্যবস্থা না থাকা নিয়ে অনেক দিন ধরেই চিন্তায় বাসিন্দারা। তার উপরে রাজ্য সরকারের নতুন সিদ্ধান্তে যদি বহুতল গড়ার ব্যাপারে ঝোঁক বাড়ে, পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলে আশঙ্কা তাঁদের।

দুর্গাপুর শহর লাগোয়া শঙ্করপুর, আড়রা, বামুনাড়া, গোপালপুর ইত্যাদি এলাকায় গত কয়েক বছরে শ’খানেক আবাসন গড়ে উঠেছে। পুর এলাকার ঠিক বাইরে হওয়ায় এই সমস্ত আবাসনে কোনও পরিষেবা পুরসভা দেয় না। পানীয় জলের জন্য একমাত্র ভরসা ভূগর্ভস্থ পানীয় জল। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নির্মাণকাজ চলাকালীন যে জল লাগে, তা ও তোলা হয় মাটির নীচ থেকেই। নির্মাণ শেষে ছাদের উপরে চওড়া জলাধার তৈরি করা হয়। দিনে দু’বার সাবমার্সিবল পাম্প চালিয়ে মাটির নীচ থেকে জল তুলে রাখা হয় সেই জলাধারে। এর পরে তা সারা দিন সরবরাহ করা হয় আবাসনগুলিতে। খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, ওই জলে আয়রনের প্রকোপ এত বেশি যে জল যেখান দিয়েই যায়, সেখানে লাল আস্তরণ পড়ে যায়। কাঁকসার বামুনাড়া শিল্পতালুকের বিভিন্ন কারখানা মাটির নীচ থেকে প্রতি দিন গ্যালন-গ্যালন জল তোলে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। তার উপরে এলাকায় গত তিন-চার বছরে গড়ে উঠেছে একাধিক বহুতল। বাইরে থেকে কয়েক হাজার বাসিন্দা এসে সেখানে থাকতে শুরু করেছেন। মাটির নীচের জলই চাহিদা মেটায়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, আগে টিউবওয়েলে সারা বছর জল পাওয়া যেত। কিন্তু এখন গরম পড়তেই জলের আকাল দেখা দেয়। মাটির নীচ থেকে দেদার জল তুলে নেওয়ায় এই পরিস্থিতি বলে অভিযোগ তাঁদের। এই সব আবাসনের বাসিন্দা সন্দীপন মিত্র, আনন্দ মালেরা বলেন, “ভূগর্ভস্থ জলের স্তর দিন-দিন নামছে। ভবিষ্যতে কী হবে জানি না!”

ওই সব আবাসনে খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে, পয়প্রণালী ব্যবস্থা নিজস্ব। আবাসনের পাশে মাটির তলায় বর্জ্য জমা হয়। কিন্তু, আধুনিক নগরায়নের সঙ্গে কি খাপ খায় এমন ব্যবস্থা? আবাসন নির্মাতারা জানান, এ ছাড়া কোনও উপায় নেই। পুর এলাকার বাইরে পানীয় জল, নিকাশি পরিষেবা যথাযথ নয়। কিন্তু মুনাফার জন্য সেই সব শহর লাগোয়া এলাকাতেই আবাসন গড়ছেন তাঁরা। বাকি পরিষেবার ব্যবস্থা আবাসনের বাসিন্দারা নিজেদের মতো করে নিচ্ছেন। এক ফ্ল্যাট মালিকের কথায়, “এখন আবাসনের সংখ্যা কম। তাই সমস্যা তেমন হচ্ছে না। তবে ঘনঘন আবাসন গড়ে উঠলে থাকা মুশকিল হয়ে দাঁড়াবে।” আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “শহর লাগোয়া এলাকায় পঞ্চায়েত থেকে অনুমতি নিয়ে আবাসন গড়া হয়। সরাসরি খবরদারির জায়গা নেই। তবু নজরদারি আগের থেকে বাড়ানো হয়েছে।”

subrata shit durgapur water crisis multistoried building
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy