Advertisement
E-Paper

ভোটারের মন পেতে জোর হাঁটায়

কেউ হেঁটে পেরোচ্ছেন গ্রাম থেকে গ্রাম। কেউ ব্লকের পর ব্লক হেঁটে মেরে দিচ্ছেন। কোনও জন আবার গ্রামে হেঁটে ঘোরার পরে গাড়িতে উঠে পাশের গ্রামে গিয়ে ফের নেমে পড়ছেন পাড়ায়-পাড়ায় কথা বলতে। বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রে রোড-শো প্রায় নেই বললেই চলে। হেঁটে প্রচারের উপরেই ভরসা রাখছেন সিপিএম থেকে বিজেপি, কংগ্রেস থেকে তৃণমূলনানা দলের প্রার্থীরা। কেউ বলছেন, তাঁকে দেখে রাস্তায় নামতে ভরসা পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ থেকে দলীয় কর্মীরা।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৪ ০২:৩৪
পায়ে পায়ে প্রার্থীরা। সিপিএমের ঈশ্বরচন্দ্র দাস

পায়ে পায়ে প্রার্থীরা। সিপিএমের ঈশ্বরচন্দ্র দাস

কেউ হেঁটে পেরোচ্ছেন গ্রাম থেকে গ্রাম। কেউ ব্লকের পর ব্লক হেঁটে মেরে দিচ্ছেন। কোনও জন আবার গ্রামে হেঁটে ঘোরার পরে গাড়িতে উঠে পাশের গ্রামে গিয়ে ফের নেমে পড়ছেন পাড়ায়-পাড়ায় কথা বলতে।

বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রে রোড-শো প্রায় নেই বললেই চলে। হেঁটে প্রচারের উপরেই ভরসা রাখছেন সিপিএম থেকে বিজেপি, কংগ্রেস থেকে তৃণমূলনানা দলের প্রার্থীরা। কেউ বলছেন, তাঁকে দেখে রাস্তায় নামতে ভরসা পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ থেকে দলীয় কর্মীরা। কারও আবার দাবি, হেঁটে প্রচারে মানুষের যে ভালবাসা পাওয়া যায়, তা তো আর রোড-শো করে মেলে না।

চড়া রোদ উপেক্ষা করেই দিনে ২০-৩০ কিলোমিটার হাঁটছেন সিপিএম প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র দাস। কোনও দিন মেমারি থেকে কালনা, কখনও রায়না থেকে কাটোয়া। পেশায় শিক্ষক ঈশ্বরচন্দ্রবাবু বলছেন, “জনসংযোগের উপর জোর দিয়েছে দল। সে জন্য হেঁটেই এক গ্রাম থেকে আর এক গ্রামে যাচ্ছি। এতে মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হচ্ছে।”

সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, এই কেন্দ্রে লড়াই জোরদার করতে মোটামোটি সকাল ৮টা থেকে হাঁটতে শুরু করছেন ঈশ্বরবাবু। দুপুর ১টার পরে দলের কোনও জোনাল দফতরে দুপুরের খাওয়া সেরে একটু গড়িয়ে নিচ্ছেন। আবার ৩টে বাজতেই প্রচার শুরু। চলছে ৭টা পর্যন্ত। তিনি নিজেই বলেন, “সকালের দিকে ১৮-২০ কিলোমিটার হাঁটতে হচ্ছে। আর বিকেলে ৮-১০ কিলোমিটার।” কোনও কোনও দিন আবার দলের কর্মী-সমর্থকদের উৎসাহ দিতে ৭-৮টি গ্রাম এক সঙ্গে ঘুরছেন ঈশ্বরবাবু। মানুষ ভোট দিতে পারলে জয় নিশ্চিত দাবি করার পরে তিনি অভিযোগ করেন, রায়না, জামালপুর, পূর্বস্থলী থানার একাংশ সন্ত্রাস কবলিত। ওই সব এলাকায় পঞ্চায়েত ভোট প্রহসনে পরিণত করেছিল তৃণমূল। ঈশ্বরবাবুর আরও বক্তব্য, “যেখানেই চোরাগোপ্তা অত্যাচার হচ্ছে, মানুষ পথে নেমে, মিছিল করে প্রতিবাদ করছেন। মেমারি, কালনা, রায়না, জামালপুরে প্রচুর মানুষ আমাদের সঙ্গে পথে নামছেন।” যাঁরা তাঁদের ছেড়ে গিয়েছিলেন, তাঁরাও ফিরে আসছেন বলে দাবি বাম প্রার্থীর।

প্রচারে গিয়ে কাটোয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির দাবির পাশাপাশি ব্যান্ডেল-কাটোয়া ডবল লাইনের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা, গঙ্গার ভাঙন রোধের মতো স্থানীয় সমস্যাগুলিতেও জোর দিচ্ছেন ঈশ্বরবাবু। তাঁর কথায়, “কালনার জলনিকাশি ব্যবস্থা থেকে পূর্বস্থলীতে ফুল চাষের উন্নতি, সব বিষয়েই আমরা জোর দিচ্ছি। জামালপুরে তিন মাস ধরে স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ, তা নিয়েও প্রচার করছি।”

বিজেপি-র সন্তোষ রায়

কংগ্রেসের চন্দনা মাঝি

তৃণমূল প্রার্থী সুনীল মণ্ডলও জনসংযোগের জন্য হাঁটা পথেই নজর দিয়েছেন। শহর থেকে গ্রাম, সব জায়গাতেই হেঁটে মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছেন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন। প্রয়োজনে কর্মিসভা করছেন। তাঁর সঙ্গে থাকছেন জেলার সভাপতি (গ্রামীণ) তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। তাঁর কথায়, “গাড়িতে উঠে রোড-শো করার চেয়ে পায়ে হেঁটে মানুষের কাছে পৌঁছনো অনেক ভাল। এতে সরাসরি মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়।” হাঁটতে হাঁটতে মানুষের সঙ্গে কথা বলে তিনি এই কেন্দ্রে মানুষের চাহিদার কথা জানতে পারছেন বলে জানালেন সুনীলবাবু। ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী হিসেবে গলসি বিধানসভা থেকে জেতার আড়াই বছর পরে সুনীলবাবু লোকসভায় তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন। তাঁর এই ‘দলবদল’ নিয়ে মানুষের কী প্রতিক্রিয়া, তা-ও জানতে পারছেন বলে তাঁর দাবি। রাস্তায় হাঁটার সময়ে অনেকে হাত ধরে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। এ নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া, “গাড়িতে উঠে রোড-শো করলে এই ভালভাসার অনুভূতি পেতাম কি?” সিপিএমের তোলা সন্ত্রাসের অভিযোগ প্রসঙ্গে তৃণমূলের জেলা অন্যতম সাধারণ সম্পাদক শমীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “নিশ্চিত হার জেনে সিপিএম এ সব বলছে। বিদায়ী সাংসদ আমাদের এলাকায় কী কাজ করেছেন, সে জবাব সিপিএম দিতে পারছে না কেন?”

তৃণমূলের সুনীল মণ্ডল।

কংগ্রেস সূত্রে জানা যায়, দিনে ১০-১২ কিলোমিটার পথ হাঁটছেন তাদের প্রার্থী চন্দনা মাঝি। তিনি ‘পাখির চোখ’ করেছেন কাটোয়া বিধানসভা কেন্দ্রকে। এই কেন্দ্র ১৯৯৬ সাল থেকে কংগ্রেসের দখলে। এখানে তিনি পাড়ায় পাড়ায় প্রচার করছেন। যা দেখে সিপিএমের এক জেলা কমিটির নেতার মন্তব্য, “লোকসভা ভোটে এ ভাবে পাড়ায় পাড়ায় প্রচার করলে অন্য বিধানসভাগুলোয় কী ভাবে প্রচার করবেন?” কংগ্রেস প্রার্থী অবশ্য অন্য বিধানসভা এলাকাতেও হেঁটে প্রচার করছেন। সঙ্গে থাকছেন কাটোয়ার কংগ্রেস বিধায়ক তথা প্রদেশ কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আমরা সব সময় হেঁটেই প্রচার করি। এতে মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। মানুষের অভাব-অভিযোগ জানা যায়।” কংগ্রেস ইউপিএ সরকারের নানা সাফল্য প্রচারে তুলে ধরছে। চন্দনাদেবী বলেন, “এ ছাড়াও গঙ্গার ভাঙন, রেললাইনের দাবি-সহ স্থানীয় সমস্যাগুলিও তুলে ধরছি।”

কাটোয়া ও কালনায় গঙ্গার উপরে সেতুর দাবিকে সামনে রেখে বিজেপি প্রার্থী সন্তোষ রায় একের পর এক গ্রাম পায়ে হেঁটে প্রচার চালাচ্ছেন। তিনি দিনে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পথ হাঁটছেন। তবে মাঝে-মাঝে গ্রাম থেকে অন্য গ্রামের পথে ছোট মালবাহী গাড়িতে চেপে ‘রোড শো’ করছেন। তবে তাঁর দাবি, হাঁটা পথে প্রচার করে বেশি মানুষের কাছে পৌঁছনো যাচ্ছে।

ভোটের মাঠে নেমে তাই জোরদার হাঁটাই এখন বড় ভরসা সব প্রার্থীর।

—নিজস্ব চিত্র।

lok sabha election katoa soumen dutta cpm bjp congress tmc
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy