বাড়িতে চলতে থাকা লো ভোল্টেজের সমস্যা দূর করতে রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানি লিমিটেডকে ৪৫দিনের সময় দিয়েছে জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত। সঙ্গে ওই গ্রাহককে চার হাজার টাকার ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু ২২ জানুয়ারি ওই নির্দেশ দেওয়ার পরে ১৩ দিন কেটে গেলেও সমস্যা মেটাতে কোনও পদক্ষেপ করেনি বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানি লিমিটেড। খণ্ডঘোষের গ্রুপ ইলেকট্রিক সাপ্লাইয়ের স্টেশন ম্যানেজার সায়নদেব মল্লিক বুধবার বলেন, “ওই রায়ের কথা শুনেছি। তবে আদালতের নির্দেশ হাতে পাইনি। পেলে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা বিবেচনা করব।”
বর্ধমানের গ্রামগুলিতে লোডশেডিং ও লো ভোল্টেজের সমস্যা প্রায় নিত্যচিত্র। দিনের পর দিন নিয়ম মেনে বিদ্যুতের বিল মিটিয়েও সঠিক পরিষেবা পান না গ্রামবাসীরা। তাঁদের অভিযোগ, একবার বিদ্যুৎ চলে গেলে ফিরতে প্রচুর সময় লাগে। প্রতি সন্ধ্যায় লো ভোল্টেজ হয়ে যায়। ফলে টিভি দেখা বা গরমকালে পাখা চালানো তীব্র সমস্যায় পরিণত হয়। বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানি লিমিটেডের আধিকারিকদের অবশ্য দাবি, গ্রামাঞ্চলে সিঙ্গল ফেজ লাইন থাকায় ঠিক মতো ভোল্টেজ দেওয়া যায় না। তবে বর্তমানে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ট্রান্সফর্মার বসিয়ে অনেক গ্রামেই ভোল্টেজ বাড়ানোর কাজ চলছে।
খণ্ডঘোষের কেন্দুর গ্রামের বাসিন্দা উদয় কোনারও বাড়িতে বাতানকুল যন্ত্র বসানোর জন্য ২০১৩ সালের এপ্রিলে সেহারাবাজারের খণ্ডঘোষ গ্রুপ ইলেকট্রিক সাপ্লাইয়ে আবেদন জানান। কিন্তু আবেদন নামঞ্জুর হওয়ায় ওই বছরই ১৩ জুন জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে গ্রুপ ইলেকট্রিক সাপ্লাই, বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানির বর্ধমান শাখা, সল্টলেকের কনজিউমার রিলেশন ম্যানেজমেন্ট সেল ইত্যাদির বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, বাড়িতে সবসময়েই ভোল্টেজ কম থাকে। দিনের বেলা ১০০ থেকে ১৮০ ভোল্ট ও সন্ধ্যায় ৯০ থেকে ১৫০ ভোল্ট বিদ্যুতের সরবরাহ পান তিনি। অথচ নিয়মিত বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানি লিমিটেডের পাঠানো সমস্ত বিদ্যুতের বিল মিটিয়ে যাচ্ছেন তিনি এবং তা সত্বেও উপযুক্ত পরিষেবা পাচ্ছেন না।
উদয়বাবু আরও জানান, বাড়ির বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়াতে ২০১৩ সালের ২৭ এপ্রিল আবেদন করেন তিনি। নিয়ম মেনে গ্রুপ ইলেকট্রিক সাপ্লাইয়ে ২০০ টাকা জমাও দেন। সাধারণত, আবেদন হাতে পাওয়ার ১৫দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের বাড়িতে বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানি লিমিটিডের তরফে পরিদর্শনে যাওয়ার কথা ও ৩০ দিনের মধ্যে সরবারহ বাড়ানোর কথা। কিন্তু আবেদনের পরে দীর্ঘদিন কেটে গেলেও তাঁর বাড়িতে না হয়েছে পরিদর্শন, না বিদ্যুতের লোড বাড়ানো হয়েছে বলে উদয়বাবুর দাবি। স্বাভাবিক ২২০-২৪০ ভোল্টের বিদ্যুৎ তাঁর বাড়িতে দিতে পারেনি ওই কোম্পানি।
তবে এ বার ওই অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত উদয়বাবুর লো ভোল্টেজের সমস্যা মেটাতে ৪৫ দিন সময় দিয়েছে বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানি লিমিটেডকে। আদালতের নির্দেশ, দরকার হলে গ্রামে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ট্রান্সফর্মার বসিয়ে স্বাভাবিক ভোল্টেজের বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হবে ওই গ্রাহককে। তাছাড়া চার হাজার টাকা ক্ষতিপূরণও দিতে হবে।
ওই সংস্থার বর্ধমান-বীরভূমের জেনারেল ম্যানেজার শিবানন্দ দাস অবশ্য জানিয়েছেন, ওই গ্রাহকের লো ভোল্টেজের সমস্যা মেটাতে ইতিমধ্যে ওই গ্রামে থ্রি ফেজের লাইন বসানো হয়েছে। তাতে তাঁর বাড়িতে স্বাভাবিক বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে। কিন্তু ওই গ্রাহক সরকারি সংস্থাকে হয়রান করতেই ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করেছেন। শিবানন্দবাবুর দাবি, বাড়িতে এসি মেশিন চালাতে গেলে অন্তত ১ কিলোভোল্ট বিদ্যুৎ লাগে। কিন্তু ওই গ্রাহক মাত্র ২৫০ ভোল্ট বিদ্যুৎ চাইছেন। জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের ওই রায়ের বিরুদ্ধে তাঁরা রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে আবেদন করবেন বলেও জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy