দোকানের সামনে লাইন ঠিক করছেন রক্ষী। ছবি: উদিত সিংহ।
ভাইফোঁটা নিতে দিদি বা বোনের বাড়ি ঢোকার আগে শহরের দোকান থেকে মিষ্টি কেনার কথা ভেবে থাকলে শনিবার সকালে বর্ধমানে বেশ বিপাকে পড়তে পারেন দাদা ও ভাইয়েরা।
শুধু বড় দোকান নয়। গত কয়েক বছরের ছবিটা পাল্টে ভাইফোঁটার আগেই এ বার মিষ্টির পাত্র প্রায় ফাঁকা পাড়ার মোড়ের সাধারণ দোকানেও।
মিষ্টি কেনার হুড়োহুড়ি শুরু হয়েছে দিন তিনেক আগে থেকেই। তবে ভিড়ের কমতি নেই শুক্রবারও। একটি দোকানে তো এমন ভিড় হয়েছে যে তা সামলাতে রাখা হয়েছে নিরাপত্তীরক্ষী। দেখেশুনে শহরের অনেকে বলছেন, এ বার ভাইফোঁটাকে সম্বল করে যেন অনেকটা ঘুরে দাঁড়াল এই শহরের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি শিল্প। বিক্রেতারা বলছেন, এ বার শুধু বর্ধমান শহর নয়, ভাতার, মেমারি, হাটগোবিন্দপুর, গলসি থেকে অনেকে এসে মিষ্টি কিনে নিয়ে গিয়েছেন। ফলে তৈরি হতে না হতেই নানা রকমের মিষ্টি নিমেষে উবে গিয়েছে।
বর্ধমান জেলা মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক প্রদীপ ভকত জানান, এ বার প্রত্যেক মিষ্টি বিক্রেতা অন্তত ১০ থেকে ২০ ভাগ বেশি মিষ্টি তৈরি করেছিলেন বাড়তি বাজার ধরতে। সকলের সমস্ত মিষ্টিই বিক্রি হয়ে গিয়েছে। ফলে, এ বার অনেক দিন পরে বেশ লাভের মুখ দেখেছেন বর্ধমানের মিষ্টি শিল্প। তবে প্রতি বছরই ভাইফোঁটার আগে শহরের নামী দোকানগুলিতে ক্রেতাদের ভিড় উপচে পড়ে। এ বার পার্থক্য হল, নামী দোকান ছাড়াও ছোট-মাঝারি যে সব দোকান নিজেদের মাথা খাটিয়ে নানা ধরনের নতুন মিষ্টি তৈরি করতে পেরেছেন, তাঁদের সেই ‘স্টক’ও উড়ে গিয়েছে হু-হু করে।
বোরহাটের একটি বড় মিষ্টির দোকান এ বার বানিয়েছিল ১০ টাকা দামের মালাইবাটি ও একই দামের ‘আবার খাব’ সন্দেশ। সেই দু’রকম তো বটেই, এ ছাড়াও ৮ টাকা দামের পাটিসাপটা বা ৫ টাকা দামের স্ট্রবেরি দুধ সন্দেশের হাজার হাজার পিস বিক্রি হয়েছে বলে জানালেন দোকানের মালিক দিলীপ ভকত। রথতলার একটি দোকানের সত্ত্বাধিকারী উত্তম বিদেরা তৈরি করেছিলেনা কাঁচা পাকের সন্দেশ, সরভাজা, কাঁচাগোল্লা। সে সবের একটিও পড়ে নেই। রানিগঞ্জ বাজারের এক দোকান তৈরি করেছিল ভাইফোঁটা ছাপ মারা সন্দেশ। শো-কেস সাজিয়ে রাখতে না রাখতেই তা উড়ে গিয়েছে। সঙ্গে ছিল ১৮ টাকার মধুভরা মোদক সন্দেশ। তা তো দু’দিন আগেই ভোজবাজির মতো উধাও। রানিগঞ্জ বাজারের অপর এক ঐতিহ্যশালী মিষ্টির দোকানের মালিক প্রসেনজিৎ দত্ত বলেন, “আমাদের দোকানে সীতাভোগ ও মিহিদানাই বিক্রি হয়। এ বার তাদের বাজারও বেশ ভাল।’’
বর্ধমানের চার্চ মোড়ের একটি দোকানে আবার খাব সন্দেশের দাম ২০ টাকা। আর বয়েছে ১০ টাকার ছানার প্যাটিস। তা-ও সাজিয়ে রাখার পরে অদৃশ্য হয়ে গেল চোখের সামনেই। এই দোকনেই ভিড় সামলে বিক্রি ঠিক মতো করাতে নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ করতে হয়েছিল তিন দিন আগেই। সব মিলিয়ে, এ বার ভাইফোঁটার আগে মুখে চওড়া হাসি মিষ্টি ব্যবসায়ীদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy