কোনও ক্ষেত্রে হয়রান করা, কখনও ফাইল আটকে রাখা, আবার কখনও ঘুষ চাওয়া। আসানসোল মহকুমা মোটর ভেহিক্যালস দফতরের বিরুদ্ধে এমনই নানা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তদন্ত চেয়ে মহকুমাশাসকের কাছে গণস্বাক্ষর সম্বলিত আবেদনপত্র দিয়েছেন দফতরের সঙ্গে যুক্ত আইনজীবী, করণিক ও এজেন্টরা। মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস জানান, অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের কাছে লিখিত কৈফিয়তও তলব করা হয়েছে।
আসানসোল মহকুমার মোটর ভেহিক্যালস দফতরের বিরুদ্ধে কানাঘুষো দুর্নীতির অভিযোগ বহু দিনের। অভিযোগ মূলত দফতরের কর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে। এত দিন মৌখিক ভাবে সেই সব দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন দফতরের দৈনন্দিন কাজের সঙ্গে জড়িত আইনজীবী, করণিক ও এজেন্টরা। তাঁদের দাবি, আধিকারিকদের তরফে অভিযোগের তদন্তের মৌখিক আশ্বাসও মিলেছে বহু বার। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। তাই এ বার তাঁরা মহকুমাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। মহকুমাশাসক বলেন, “আমি নিজে এই অভিযোগ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি।”
মহকুমাশাসকের কাছে পাঠানো ওই অভিযোগে জানানো হয়েছে, মোটর ভেহিক্যালস দফতরের পরিদর্শকদের একাংশ এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। নতুন গাড়ির নিবন্ধীকরণ, গাড়ির ব্লু-বুকে ঠিকানা পরিবর্তন, পুরনো গাড়ি বিক্রির পরে মালিকানা পরিবর্তন বা ব্যাঙ্ক ঋণ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে ‘হাইপোথিকেশন’ কথাটি বাতিল করতে গিয়ে অযথা গাড়ির মালিকদের হয়রান করা হচ্ছে। এই সব কাজ করে দেওয়ার বিনিময়ে ঘুষ চাওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ। যাঁরা দিতে পারছেন, তাঁদের কাজ দ্রুত করা হচ্ছে। যাঁরা পারছেন না, তাঁদের ফাইল দিনের পর দিন আটকে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ। এই অবস্থায় আসানসোলে গাড়ি বিক্রির ব্যবসা মার খাচ্ছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন ডিলারদের একাংশ। কারণ, নতুন বা পুরনো গাড়ি কেনা-বেচার পরে ক্রেতা বা বিক্রেতারা সেটি মোটর ভেহিক্যালস দফতরে নিবন্ধীকরণ করাতে অযথা হয়রান হতে চাইছেন না।
দুর্নীতির অভিযোগের এখানেই শেষ নয়। দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি নির্দিষ্ট সময়ের শেষে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত চলমান গাড়ির ‘ফিটনেস’ পরীক্ষা করাতে হয়। অর্থাত্, গাড়িটি ঠিক মতো রাস্তায় চলার উপযোগী কি না, তা পরীক্ষার জন্য মালিককে নিজের গাড়ি মোটর ভেহিক্যালস দফতরে নিয়ে যেতে হয়। পরিদর্শক সেই গাড়ি দেখে ছাড়পত্র দেন। এই পরীক্ষা করানো বাধ্যতামূলক। কিন্তু অভিযোগ, গাড়ির মালিকেরা দফতরে গাড়ি না এনেই ঘুষের বিনিময়ে ছাড়পত্র পেয়ে যাচ্ছেন। আরও অভিযোগ, ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রেও কোনও ব্যক্তি গাড়ি চালাতে পারেন কি না, তা না দেখে লাইসেন্স দিয়ে দিচ্ছেন পরিদর্শকদের একাংশ। আসানসোলের মহকুমাশাসকের কাছে পাঠানো ওই অভিযোগপত্রে এ সবই উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস জানান, প্রতিটি অভিযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের কাছে লিখিত কৈফিয়ত তলব করা হয়েছে। তা হাতে এলেই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।