Advertisement
০৪ মে ২০২৪

সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষ, বোমা-গুলি মঙ্গলকোটে

ভরদুপুরেই সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠল মঙ্গলকোটের কুলশুনো গ্রাম। দেদার চলল বোমা, ছররা গুলিও। এর প্রায় দু’ঘন্টা পরে বিশাল পুলিশবাহিনী নিয়ে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন বর্ধমানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) প্রশান্ত চৌধুরী। তবে হতাহতের কোনও খবর পুলিশের কাছে নেই। ঘটনার পরে সিপিএম ও তৃণমূল পরস্পরের বিরুদ্ধে মঙ্গলকোট থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। বিকেলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে কুড়ি জনকে আটকও করেছে।

বাড়ির দেওয়ালে বোমার দাগ।

বাড়ির দেওয়ালে বোমার দাগ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মঙ্গলকোট শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৪ ০১:১০
Share: Save:

ভরদুপুরেই সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠল মঙ্গলকোটের কুলশুনো গ্রাম। দেদার চলল বোমা, ছররা গুলিও।

এর প্রায় দু’ঘন্টা পরে বিশাল পুলিশবাহিনী নিয়ে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন বর্ধমানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) প্রশান্ত চৌধুরী। তবে হতাহতের কোনও খবর পুলিশের কাছে নেই। ঘটনার পরে সিপিএম ও তৃণমূল পরস্পরের বিরুদ্ধে মঙ্গলকোট থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। বিকেলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে কুড়ি জনকে আটকও করেছে। মঙ্গলকোট থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কুলশুনো গ্রামে পুলিশ ক্যাম্প থাকবে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কুলশুনো গ্রামের সিপিএম নেতা নিমাই ঘোষের মেজ দাদা নিতাইবাবু বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ পূর্ব মাঠের জমিতে চাষাবাদ করতে যান। অভিযোগ, তৃণমুলের লোকেরা তাঁকে জমি থেকে চলে যেতে বলে। তিনি ওই ‘নির্দেশ’ না মানায় তাঁকে জমির উপর ফেলে বেধড়ক পেটানো হয়। বর্তমানে গুরুতর জখম অবস্থায় কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি তিনি।

তবে তৃণমুলের পাল্টা অভিযোগ, পূর্ব মাঠে নিমাই ঘোষদের সাবমার্সিবল পাম্প রয়েছে। সিপিএমের জমানায় তাঁরা বিরোধীদের খেত জমিতে জল দিত না। ফলে ওই সব মাঠে চাষও হত না। এখনও সিপিএম চাষ করতে দেবে না বলে হুমকি দিচ্ছে বলে তৃণমূলের দাবি। বৃহস্পতিবার সকালে কাজি শেখ ও সরব শেখ নামে দুই চাষিকে জমি থেকে তুলে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। এরপরেই তৃণমুল ও সিপিএমের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়।


আতঙ্কে মহিলারা।

বিকালে কুলশুনো গ্রামের নতুনহাট-কাটোয়া রাস্তায় দেখা যায়, চোখ-মুখ গামছায় ঢেকে বেশ কয়েকজন দুষ্কৃতী প্রকাশ্যে পিঠে একনলা বন্দুক নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কয়েকজনের হাতে রয়েছে বোমার ঝোলা। পূর্বপাড়া মাঠে গিয়ে জানা যায়, বাঁশতলার দিকে মাঠের এক প্রান্তে ছিল সিপিএম আর অন্য প্রান্তে তৃণমূল। গ্রামবাসীরা জানান, প্রায় তিনঘন্টা ধরে দুষ্কৃতীদের তান্ডব চলে। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশের চোখের সামনেই বোমা-গুলি চলেছে। পূর্বপাড়া মাঠে গিয়েও দেখা যায়, চারিদিকে ছররা গুলির খোল পড়ে রয়েছে। কিছু জায়গায় বোমার চিহ্ন স্পষ্ট, না ফাটা বোমাও পড়ে রয়েছে মাঠের এ দিক-ও দিকে।

পূর্বপাড়া মাঠ থেকে বেশ কিছুটা দূরে সিপিএম নেতা নিমাই ঘোষের বাড়ি। তার বাড়ির ভিতরে, দেওয়ালে বোমার দাগ স্পষ্ট। ওই বাড়ির বধূ অর্চনা ঘোষের অভিযোগ, “আমার ভাসুর (নিতাইবাবু) কে কাটোয়া হাসপাতালে নিয়ে যায় বাড়ির পুরুষেরা। তখনই তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা আমাদের বাড়ি ঘিরে ধরে। আমরা ৪-৫ জন মহিলা একটি ঘরে লুকিয়ে পড়ি। ওরা একের পর এক বোমা ছুড়তে থাকে।” তাঁর আরও অভিযোগ, “ওই তৃণমূলের নাজির বাহিনী আমাদের কাছ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা দাবি করছে। আমরা দিতে পারছি না বলে জমিতে চাষ করতে বাধা দিচ্ছে।” ঘটনার পর নিমাইবাবু মোবাইলে অভিযোগ করেন, “ওই এলাকায় আমরা সিপিএম করি। লোকসভা নির্বাচনে জিতেছি। সে জন্যই আমাদের উপর বারবার আক্রমণ নেমে আসছে। পুলিশের ভূমিকায় আমরা ক্ষুব্ধ।”

তবে তৃণমূলের স্থানীয় নেতা নাজির শেখের সাফ বক্তব্য, “ওদের আমলে আমাদের টানা দু’বছর এক ঘরে করে রেখেছিল সিপিএম। এখনও জমিতে জল নিতে গেলে বাধা দিচ্ছে। বৃহস্পতিবার আবার বহিরাগত দুষ্কৃতীদের এনে হামলা চালায়। আমরাও জবাব দিয়েছি।” তাঁর দাবি, “সিপিএম সালিশি সভা বসিয়ে জরিমানা করত। আমরা এ সব করি না। আমাদের নামে টাকা চাওয়ার অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।”

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

clash between tmc cpm mangolkor bombing
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE