Advertisement
E-Paper

হাতে চেক দিয়ে জমি কিনতে নেমেছে প্রশাসন

এলাকা উন্নয়নের স্বার্থে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সরাসরি জমি কিনতে নেমেছে প্রশাসন। জমির দামও দিয়ে দেওয়া হচ্ছে হাতে-হাতে। দেড় মাসের মধ্যে বর্ধমানের মঙ্গলকোটের ৪০০ জন ও ভাতারের ৭২ জনের কাছ থেকে ১৫ একর চার শতক জমি কেনা হয়েছে বলে জেলা ভূমি অধিগ্রহণ সূত্রের খবর। জানা গিয়েছে, ওই দুই ব্লকের মাঝামাঝি বয়ে চলা কুনুর নদীর উপর একটি সেতু ও কালভার্ট গড়া হবে।

রানা সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৪ ০১:১৫
কুনুর নদীর উপরে এই খানেই সেতু তৈরির জন্য জমি দিয়েছেন বাসিন্দারা। —নিজস্ব চিত্র।

কুনুর নদীর উপরে এই খানেই সেতু তৈরির জন্য জমি দিয়েছেন বাসিন্দারা। —নিজস্ব চিত্র।

এলাকা উন্নয়নের স্বার্থে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সরাসরি জমি কিনতে নেমেছে প্রশাসন। জমির দামও দিয়ে দেওয়া হচ্ছে হাতে-হাতে।

দেড় মাসের মধ্যে বর্ধমানের মঙ্গলকোটের ৪০০ জন ও ভাতারের ৭২ জনের কাছ থেকে ১৫ একর চার শতক জমি কেনা হয়েছে বলে জেলা ভূমি অধিগ্রহণ সূত্রের খবর। জানা গিয়েছে, ওই দুই ব্লকের মাঝামাঝি বয়ে চলা কুনুর নদীর উপর একটি সেতু ও কালভার্ট গড়া হবে। ফলে হাজারখানেক গ্রামবাসীর সঙ্গে স্বাস্থ্য কেন্দ্র, উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল ও টেলিফোন কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা যাবে। আলু রাখার দু’টি হিমঘর ও ব্যাঙ্কের সুবিধাও পাবেন ভাতারের মানুষ।

অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন ) উৎপল বিশ্বাস বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ হল কোনও জরুরি উন্নয়নের কাজে সরাসরি মানুষের কাছ থেকে জমি কিনতে হবে। আমরা সেই নির্দেশ পেয়েই তড়িঘড়ি মাঠে নেমেছি। মাত্র দেড় মাসের মধ্যে ওই ১৫ একর চার শতক জমি কিনে তা পূর্ত দফতরের হাতে দিয়ে দিয়েছি।”

ভাতারের পোয়ালকুড়া মৌজার বারমল্লিক ঘাট গ্রামবাসীদের দাবি, সেতু ও কালভার্ট না থাকায় ছেলেমেয়েদের স্কুল পাঠাতে ঘুরতে হয় প্রায় ১৫ কিলোমিটার। বিশেষত বর্ষায় আরও মুশকিলে পড়ে পড়ুয়ারা। এছাড়া ভাতার গ্রামীন হাসপাতালের স্বাস্থ্য পরিষেবা পেতে যেতে হয় ২০ কিলোমিটার। ফলে অনেক রোগীকেই সময়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। কিন্তু কুনুরের উপরে ওই সেতু তৈরি হলে স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ব্যঙ্ক সবই তিন কিলোমিটারের মধ্যে এসে যাবে।

বিশেষ ভূমি অধিগ্রহণ আধিকারিক মানস মণ্ডলের কথায়, “সাধারণত কোনও প্রকল্পের জন্য সাধারন মানুষের জমি নিতে হলে আমাদের কয়েক দফা নোটিশ দিতে হয়। তারপরে যাঁরা জমি দেবেন তাঁদের সঙ্গে দরাদরি, আলোচনা করে জমির দাম ঠিক করতে হয়। ফলে অনেক সময়েই জমি অধিগ্রহণ পিছিয়ে যায়। এমনকী অনেকে আদালতে গিয়ে জমি অধিগ্রহন আটকেও দেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমরা জমি পরিদর্শনের দিন থেকেই জমিদাতাদের বোঝাতে শুরু করি। তাঁদের বলা হয় সরাসরি দাম দিয়ে দেওয়া হবে। মানুষ তাতে রাজি হতেই আমরা জমির চেক দিয়ে সরাসরি জমি কিনতে শুরু করি। মাত্র দেড়মাসের মধ্যে পুরো জমি সেতু তৈরির জন্য পূর্ত দফতরকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

গ্রামে গিয়েও দেখা গিয়েছে, চেক হাতে পেয়ে বাসিন্দারা বেশ খুশি। ভাতারের মাহাতা গ্রাম পঞ্চায়েতের বারমল্লিক ঘাটের বাসিন্দারা জানান, ইতিমধ্যে অনেকেই চেক ভাঙিয়ে টাকাও তুলে নিয়েছেন। গ্রামবাসীদের একজন নির্মল মণ্ডল বলেন, “আমি ১ বিঘে পাঁচ কাঠা বাস্তু জমি সরকারকে দিয়ে মোট ২ লক্ষ ৮৬ হাজার টাকা পেয়েছি।” মোহন মণ্ডল সাত কাঠা, প্রসাদ ঘোষ চার কাঠা, কার্তিক পাঁজা আট কাঠা জমি দিয়ে দাম পেয়ে গিয়েছেন। প্রসাদবাবু বলেন, “২০০১ সাল থেকে আমরা কুনুরের উপর সেতু চেয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। টানা ১৩ বছর পরে আমাদের সেই দাবি মিটতে চলেছ। আমরা সানন্দেই জমি দিয়েছি। এ নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কোনও মন কষাকষি পর্যন্ত হয়নি।”

একই দৃশ্য ওপারের মঙ্গলকোটের চানক বা কাসেমনগরে। চানকের বাসিন্দা ইন্দ্রনারায়ণ মণ্ডল বলেন, “কুনুরের উপর এই সেতু হলে ভাতারে লোকেরা এসে আমাদের ফসল কিনতে পারবেন। তারাই বাজার জমিয়ে দেবেন। তাছাড়া স্কুল, ব্যাঙ্কে ভিড় বাড়লে সেগুলির বর্ধিতকরণ ঘটবে। এতে তো আমাদেরই লাভ।” মঙ্গলকোটের বারুইপাড়ার বাসিন্দা স্বপন সাহা বলেন, “সেতু হলে দু’টি ব্লকেরই উন্নয়ন হবে। সেটা বুঝেই মানুষ সরাসরি জমি কিনতে নামা ভূমি অধিগ্রহণ দফতরের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন।”

rana sengupta buying land government
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy