Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
BDO

BDO: ছুটিতে অফিসে রোগী দেখেন বিডিও

পূর্ব বর্ধমানের ভাতারের ব্লক অফিস। যিনি রোগী দেখছেন, তিনি বিডিও অরুণকুমার বিশ্বাস।

n রোগী দেখছেন বিডিও অরুণকুমার বিশ্বাস (ডান দিকে)।

n রোগী দেখছেন বিডিও অরুণকুমার বিশ্বাস (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ভাতার শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২১ ০৫:৩৬
Share: Save:

‘স্যর, ভিতরে আসব?’

‘আসুন। করোনার টিকা নিয়েছেন তো?’

‘নিয়েছি। কিন্তু কয়েক দিন ধরে গা-হাতে-পায়ে ব্যথা। একটু দেখে দিন না।’

পালাড় গ্রামে সিরাজ পাত্রের অসুবিধার কথা শুনেই স্টেথোস্কোপ কানে গুঁজে রোগী দেখতে শুরু করলেন ‘ডাক্তার’।

এই ঘটনা কোনও ডাক্তারখানায় নয়। ঘটনাস্থল পূর্ব বর্ধমানের ভাতারের ব্লক অফিস। যিনি রোগী দেখছেন, তিনি বিডিও অরুণকুমার বিশ্বাস। প্রশাসনিক পদে যোগ দেওয়ার আগে যিনি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেছেন। এখন আবার কাজের ফাঁকে ঝালিয়ে নিচ্ছেন পুরনো বিদ্যা।

বিডিও জানান, ২০০২ সালের ২৬ ডিসেম্বর তাঁর মা হেমালিনী বিশ্বাসের মৃত্যু হয়। মায়ের স্মৃতিতে এই তারিখ থেকেই ব্লক অফিসের একটি ঘরে বিনামূল্যে চিকিৎসা শুরু করেছেন তিনি। রবিবার, প্রথম দিন ২৬ জনের চিকিৎসা করেন। চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন ভাতার লাগোয়া কাচগড়িয়া গ্রামের মামণি ঘোষ, বামশোর গ্রামের জিলাই শেখরা। তাঁরা বলেন, ‘‘হাসপাতালে ভোর থেকে লাইন দিতে হয়। হাতের কাছে বিডিও সাহেব চিকিৎসা করছেন জেনে ছুটে এসেছি। তিনি ওষুধ লিখে দিয়েছেন।’’ বিডিও-র দাবি, ‘‘প্রশাসনিক সমস্ত কাজ সামলে তবেই চিকিৎসা করব। শনি ও রবিবার রোগী দেখব বলে ঠিক করেছি। তাতে সাধারণ মানুষের যতটুকু উপকার হয়।’’

চিকিৎসার পেশা ছেড়ে প্রশাসনিক পদে আসার কারণ কী? মালদহের মঙ্গলপুরের বাসিন্দা অরুণ বলেন, ‘‘ডাক্তারি পাশ করে পুরুলিয়ার মানবাজার ২ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চাকরি করেছি। শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমের সঙ্গেও যুক্ত ছিলাম। কিন্তু ছোট থেকেই আমলা হওয়ার ইচ্ছে ছিল।’’ তিনি জানান, সে কারণেই চাকরি ছেড়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে প্রথম চেষ্টাতেই ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ২০১৯ সালে পুরুলিয়ার ঝালদা ২-এর বিডিও হিসেবে কাজে যোগ দেন। তার পরে এসেছেন ভাতারে। স্ত্রী মহুয়া বিশ্বাস ও বছর সাতেকের ছেলে সৌহার্দ্যকে নিয়ে সেখানেই থাকেন তিনি। ছুটির দিনে ডাক্তারিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লে পরিবারকে সময় দেবেন কী ভাবে? বিডিও-র কথায়, ‘‘স্ত্রী সমর্থন জোগাচ্ছেন বলেই তো এ সব করতে পারছি।’’

ভাতার পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি সুমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কর্মীরা কেউ অসুস্থ হলে বিডিও পরামর্শ দিতেন। এ বার বাইরের রোগীরাও উপকৃত হবেন। ডাক্তারি বিদ্যাতেও মরচে পড়বে না বিডিও-র।’’ মহকুমাশাসক (বর্ধমান উত্তর) তীর্থঙ্কর বিশ্বাস বলেন, ‘‘প্রশাসনিক কাজে ব্যাঘাত না ঘটিয়ে বিডিও তাঁর শিক্ষা প্রয়োগ করে মানুষের পাশে দাঁড়ালে, তা তো ভালই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BDO treatment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE