Advertisement
১১ মে ২০২৪

স্বামীকে মারার আগে মদ-মাংস

জেঠিয়ার বালিভাড়ার বাসিন্দা, বছর বত্রিশের বাবুলের নলিকাটা দেহ মিলেছিল শনিবার সকালে, বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে একটি মাঠে। ঘটনার নেপথ্যে যে তাঁর স্ত্রী-ই রয়েছে, তখনও ধারণা করতে পারেননি তদন্তকারীরা।

ধৃত: অঞ্জু দাস। —নিজস্ব চিত্র।

ধৃত: অঞ্জু দাস। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হালিশহর শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৭ ০২:৫১
Share: Save:

লোক মোটে দু’জন, স্বামী-স্ত্রী। তার জন্য দেড় কেজি খাসির মাংস?

হালিশহরের জেঠিয়ায় বাবুল দাস নামে এক যুবক খুনের তদন্তে নেমে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই থ তদন্তকারীরা। এ তো আর এক মনুয়া-কাণ্ড!

বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে মাসতিনেক আগে বারাসতের অনুপম সিংহকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল তাঁর স্ত্রী মনুয়াকে। প্রেমিক অজিত রায়কে দিয়ে স্বামীকে খুনের পরিকল্পনা মনুয়াই করেছিল, এমনটাই দাবি ছিল পুলিশের।

জেঠিয়ার বালিভাড়ার বাসিন্দা, বছর বত্রিশের বাবুলের নলিকাটা দেহ মিলেছিল শনিবার সকালে, বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে একটি মাঠে। ঘটনার নেপথ্যে যে তাঁর স্ত্রী-ই রয়েছে, তখনও ধারণা করতে পারেননি তদন্তকারীরা। কিন্তু তাঁর স্ত্রী অঞ্জুকে জেরা করতেই একের পর এক চমক! অঞ্জুকে রবিবার গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

আরও পড়ুন: রিষড়া থেকে উদ্ধার সুতির নাবালিকা

পুলিশের দাবি, অঞ্জু অপরাধ কবুল করে জানিয়েছে প্রেমিককে দিয়ে সে-ই স্বামীকে খুনের ছক কষে। কিন্তু প্রেমিককে পুলিশ ধরতে পারেনি।

রহস্যের জট কী ভাবে ছাড়াল পুলিশ?

পুলিশ জানায়, শুক্রবার সন্ধ্যায় মদের ঠেকে যাওয়ার কথা বলে বেরিয়ে আর ফেরেনি বাবুল। পরে তাঁর দেহ মেলে। অঞ্জুকে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই জানা যায়, মদের ঠেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য সে স্বামীর হাতে নিজের রান্না করা খাসির মাংস তুলে দিয়েছিল। কিন্তু দেড় কেজি কেন? অত মাংস কেনার টাকা অঞ্জু কোথায় পেল?—এ সব প্রশ্নে ভেঙে পড়েন অঞ্জু। এক তদন্তকারী জানান, অঞ্জুর মোবাইল ঘেঁটে দেখা যায়, শুক্রবার সন্ধ্যায় বাবুল যখন বেরিয়ে যান, তার আগে-পরে একটি নম্বর থেকে বহুবার ফোন আসে। অঞ্জু কবুল করে, ওই নম্বর তার প্রেমিকের। বাবুলকে সরাতে প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে পুরো পরিকল্পনা করে সে-ই।

কী সেই পরিকল্পনা?

তদন্তকারীদের অনুমান, মাংস পেলেই মদ খাওয়ার নেশা চাপত বাবুলের। সে কথা জেনেই প্রেমিকের দেওয়া টাকায় মাংস কিনে এনে পরিপাটি করে রাঁধে অঞ্জু। সন্ধ্যায় মাংস দিয়ে স্বামীকে মদের ঠেকে যেতে উৎসাহিত করে। তার পরেই ফোন করে প্রেমিককে জানিয়ে দেয়। পরিকল্পনা ছিল, বেহেড অবস্থায় বাবুল যখন ফিরবেন, তখনই খুন করা হবে। বাবুলকে যে তার প্রেমিকই খুন করেছে, এ কথা স্বীকার করেছে অঞ্জু।

বছর সাতেক আগে বাবুলের সঙ্গে বিয়ে হয় রানাঘাটের মেয়ে, বছর পঁচিশের অঞ্জুর। দম্পতির বছর পাঁচেকের একটি পুত্রসন্তানও রয়েছে। তদন্তকারীরা মনে করছেন, সচ্ছল জীবনের লোভেই অঞ্জুর স্বামীকে সরিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে ঘর বাঁধতে চেয়েছিল। ওই প্রেমিক মাঝেমধ্যে অঞ্জুর বাড়িতেও আসত। সেই কারণে অঞ্জু ছেলেকে পাকাপাকি ভাবে বাপেরবাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিল বলে জেনেছে পুলিশ।

এখন ওই মদের ঠেকে কারা ছিল, সেখানে অঞ্জুর প্রেমিক ছিল কিনা, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE