Advertisement
E-Paper

কঠিন সময়েও আশা হারাননি প্রবোধ পন্ডা

মঙ্গলবার কলকাতার রাজ্য অফিসে মৃত্যু হয়েছে সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদকের। তাঁর মৃত্যুতে তৈরি হয়েছে শূন্যতা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৪৮
শ্রদ্ধা: মেদিনীপুরে সিপিআইয়ের জেলা কার্যালয়ে। নিজস্ব চিত্র

শ্রদ্ধা: মেদিনীপুরে সিপিআইয়ের জেলা কার্যালয়ে। নিজস্ব চিত্র

পরনে সুতির প্যান্ট আর হাফ শার্ট। রোদে বেরোলে মাথায় গোল টুপি। বেশিরভাগ সময়ে এই পোশাকে দেখা যেত সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক প্রবোধ পন্ডাকে। সাদামাটা জীবন, চরম দুঃসময়েও আশাবাদী। এমনই ছিলেন মেদিনীপুরের প্রাক্তন সাংসদ প্রবোধবাবু। তাঁর প্রয়াণে বিরোধীরাও বলেছেন, ‘‘উন্নয়নে উনি রাজনীতির রং দেখতেন না।’’

মঙ্গলবার কলকাতার রাজ্য অফিসে মৃত্যু হয়েছে সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদকের। তাঁর মৃত্যুতে তৈরি হয়েছে শূন্যতা। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দীপক সরকার বলছিলেন, “বামপন্থী আন্দোলনের ক্ষতি হয়ে গেল। উনি বাম-ঐক্য রক্ষার চেষ্টা করতেন।” দীপকবাবুর কথায়, “সকালেই দুঃসংবাদটা পেয়েছি। আমার থেকেও কম বয়স। আমি মর্মাহত।” প্রবোধবাবুর সহপাঠী ছিলেন দলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক তথা প্রাক্তন বিধায়ক সন্তোষ রাণা। দু’জনই দাঁতন কলেজের প্রাক্তনী। একই মেসে থাকতেন। সন্তোষবাবু বলছিলেন, “বহু লড়াই- আন্দোলন করেছেন। কঠিন সময়ে দলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন।” কঠিন সময়ই বটে।

২০১১ সালের বিধানসভা, ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কার্যত ভরাডুবি হয়েছে বামেদের। এমনই এক সময়ে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে বর্ধমানের অন্ডালে রাজ্য সম্মেলনে দলের রাজ্য সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন প্রবোধবাবু।

দায়িত্ব নিয়ে বলেছিলেন, ‘‘প্রতিকূলতার মধ্যেই কাজ করতে হবে। এই অন্ধকারও (তৃণমূল-আমল) চিরস্থায়ী নয়। পূর্ণিমার চাঁদ কোনও দিনও উঠবে না, এটা মনে করার কারণ নেই।’’ এতটাই আশাবাদী ছিলেন তিনি।

মানুষের পাশে থাকতেন সব সময়। তাঁর উদ্যোগেই এক সময় খড়্গপুরে হকার পুনর্বাসন হয়েছিল। মানুষটা সত্যিই অন্যরকম ছিলেন—বলছেন বিরোধীরাও। জেলা তৃণমূলের সভাপতি অজিত মাইতি বলছিলেন, “উনি ভাল মানুষ ছিলেন। ওঁর আচরণ সত্যিই অন্য রকম ছিল। সহজে মানুষের সঙ্গে মিশতেন।” তৃণমূলের বিধায়ক দীনেন রায়ের কথায়, “মতাদর্শ আলাদা ছিল। কিন্তু যেখানেই দেখা হোক কথা বলতেন।” বিজেপির রাজ্য সম্পাদক তুষার মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “উন্নয়নে উনি রাজনীতির রং দেখতেন না।” বিরোধীদের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা ছিল অনুকরণযোগ্য। তৃণমূলের প্রসঙ্গ উঠলে প্রবোধবাবু বলতেন, “তৃণমূলের সব লোক তো আর খারাপ নয়। ওদের মধ্যেও কিছু ভাল লোক রয়েছেন। তাঁরাও কখনও কখনও অসহায় বোধ করেন। কোনটা বাস্তব প্রতিশ্রুতি, কোনটা অবাস্তব প্রতিশ্রুতি বোঝেন। হয়তো ভয়ে বাইরে কিছু বলতে পারেন না।”

বাড়ি ছিল এগরার গ্রামে। পরে মেদিনীপুরের বিধাননগরে বাড়ি করেন। মেদিনীপুরের বাড়িতেই থাকতেন। রাজ্য সম্পাদক হওয়ার পরে বেশির ভাগ দিন দলের রাজ্য কার্যালয়ে কাটত। ষাটের দশকের শেষে রাজনীতিতে হাতেখড়ি ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। তারপর সরাসরি সিপিআইয়ে। দলের জেলা কমিটির সদস্য হন সত্তরের দশকে। যুব আন্দোলনের পর কৃষক আন্দোলনে সামিল হন প্রবোধবাবু। দলের অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছিলেন নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে। ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত মারা যাওয়ার পরে মেদিনীপুরের সাংসদ হন প্রবোধবাবু। ২০১২ সালে দলের কৃষক সংগঠন কৃষকসভার রাজ্য সম্পাদক। পরে কৃষকসভার সর্বভারতীয় সভাপতিও হন তিনি।

মাছের মধ্যে প্রিয় ছিল শোল, শাকভাজা খেতে পছন্দ করতেন। অবসর কাটত সংসদে বক্তৃতার পুরনো সিডি দেখে। তাঁর অনাড়ম্বর যাপনই যেন সনাতনী কমিউনিস্ট ধারার উদাহরণ। সেখানে শিকড় ভোলা মানা।

Prabodh Panda প্রবোধ পন্ডা Passes Away CPI
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy