Advertisement
E-Paper

CPIM: শ্রীদীপকে শেষ ল্যাপে টপকে সম্পাদক সেলিম, বিদায় বিমান-সূর্যদের

বাম রাজনীতিতে ‘সুবক্তা’ বলে পরিচিত সেলিম দলের কর্মী-সমর্থকদের উজ্জীবিত করতেও সহায়ক হবেন বলে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের আশা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২২ ০৭:২২
সিপিএম রাজ্য সম্মেলনে মহম্মদ সেলিম।

সিপিএম রাজ্য সম্মেলনে মহম্মদ সেলিম। নিজস্ব চিত্র।

শেষ মুহূর্তে দলের অন্দরে পাশা উল্টে দিয়ে সিপিএমের নতুন রাজ্য সম্পাদক হলেন মহম্মদ সেলিম। লোকসভা ও বিধানসভায় এ রাজ্যে দল যখন শূন্য হয়ে গিয়েছে, সেই সময়ে রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্বে সেলিমকে এনে সিপিএম জোড়া বার্তা দিতে চাইল বলে রাজনৈতিক শিবিরের ধারণা। এক দিকে সংখ্যালঘু মুখকে সামনে এনে বিজেপি-বিরোধিতার লড়াইকে জোরদার করার তৎপরতা দেখানো হল। আবার তৃণমূলের ঘোরতর বিরোধী বলে পরিচিত নেতাকে রাজ্য সম্পাদক করে বাংলায় সরকার-বিরোধী আন্দোলনকেও চাঙ্গা করার চেষ্টা হল। বাম রাজনীতিতে ‘সুবক্তা’ বলে পরিচিত সেলিম দলের কর্মী-সমর্থকদের উজ্জীবিত করতেও সহায়ক হবেন বলে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের আশা।

সিপিএমের ২৬তম রাজ্য সম্মেলন থেকে যে নতুন রাজ্য কমিটি তৈরি হয়েছে, তাতে একই সঙ্গে বেশ কিছু তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে। কমিউনিস্ট পার্টি ভেঙে সিপিএম তৈরি হওয়ার পরে সেলিমই এ রাজ্যে প্রথম সংখ্যালঘু সম্পাদক। অবিভক্ত দলে বেশ কয়েক দশক আগে অল্প সময়ের জন্য শেখ ইসমাইল, মুজফ্ফর আহমেদেরা (কাকাবাবু) দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এরই পাশাপাশি, নতুন রাজ্য কমিটি থেকে সরে গিয়েছেন বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র, অশোক ভট্টাচার্য, রবীন দেব, গৌতম দেব, মৃদুল দে-সহ রাজ্য সিপিএমের বেশ কিছু পরিচিত নেতা। বয়স-নীতি মেনে পুরনো নেতারা সরে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্য কমিটিতে অন্তর্ভুক্তি হয়েছে এক ঝাঁক নতুন মুখের। প্রবীণ নেতা বিমানবাবুর মতে, রাজ্য কমিটিতে একসঙ্গে এত নতুন মুখ আগে কখনও আসেনি।

রাজ্য সম্পাদক পদে সূর্যবাবুর বিদায়ের পরে তাঁর জায়গায় দায়িত্ব পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন শ্রীদীপ ভট্টাচার্য। বিমানবাবু, সুর্যবাবুরা তাঁকে চেয়েছিলেন বলে শ্রীদীপের পক্ষেই ঘুঁটি সাজানো হয়েছিল। কিন্তু পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর ২৪ পরগনার মতো গুরুত্বপূর্ণ জেলার সম্মেলনে কমিটি গড়ার সময়ে দলের সরকারি প্যানেল চ্যালেঞ্জ হয়ে যাওয়ায় চিন্তা বাড়তে শুরু করে আলিমুদ্দিনে। রাজ্য সম্মেলনের অবসরেও দল এবং বাম-মনস্ক নানা মহল থেকে সীতারাম ইয়েচুরি, বিমানবাবুদের কাছে বার্তা পৌঁছয়, এই কঠিন সময়ে বাইরে স্বল্প পরিচিত, নিতান্তই কেতাবি কোনও নেতাকে দায়িত্ব দেওয়ার ফল ভাল না-ও হতে পারে। দলীয় সূত্রের খবর, সম্মেলনের শেষ অধিবেশন শুরুর আগে বৃহস্পতিবার রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে বিমানবাবুই নতুন রাজ্য সম্পাদক বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সব ধরনের সংশয়ের প্রশ্ন ভেবে দেখার কথা বলেন। একই কথা বলেন দলের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটও। সম্পাদকমণ্ডলীর মধ্যেই ভিন্ন সুর বাড়ছে দেখে উঠে আসে সেলিমের নাম। সচরাচর বাংলার রাজ্য সম্পাদকেরা সিপিএমের পলিটবুরোর সদস্য হন। সেলিম পলিটবুরোর সদস্য হওয়ায় সাংগঠনিক রেওয়াজও তাঁর পক্ষে গিয়েছে।

অনেকটা এই কায়দাতেই ৭ বছর আগে বিশাখাপত্তনমে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের পছন্দের মুখ এস আর পিল্লাইকে পিছনে ফেলে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন ইয়েচুরি। রাজ্য সম্মেলনের পরে নতুন রাজ্য কমিটির যে তালিকা হয়েছে, তাতে সেলিমের পরেই দ্বিতীয় স্থানে নাম রয়েছে শ্রীদীপের। সিপিএমের একটি সূত্রের দাবি, পার্টি কংগ্রেসে বিমানবাবু সরে গেলে তাঁর জায়গায় পলিটবুরোয় শ্রীদীপকে নিয়ে যাওয়া হতে পারে। সম্মেলন থেকে ৮০ জনের রাজ্য কমিটি তৈরি হয়েছে, তার মধ্যে নাম ঘোষণা হয়েছে ৭৯ জনের। এই কমিটিতে নতুন প্রায় ৩০%। কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন সুশান্ত ঘোষ, প্রদীপ সরকার, সুদীপ সেনগুপ্ত, শেখ ইব্রাহিম, পার্থ মুখোপাধ্যায়, গীতা হাঁসদা, শতরূপ ঘোষেরা।

নতুন রাজ্য সম্পাদক হওয়ার পরে সেলিম বলেছেন, ‘‘কমিউনিস্ট পার্টি সব সময়ে কঠিন পরিস্থিতিতেই কাজ করে। রাজ্যের মানুষের ঘুম যারা কেড়ে নিয়েছে, তাদের আমরা শান্তিতে ঘুমোতে দেব না! এটাই সম্মেলনের বার্তা। আনিস খান বিচার পায়নি, শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে সর্বত্র দুর্নীতি। জ্বালানির দাম বাড়িয়ে, পিএফে সুদ কমিয়ে মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এ সবের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলনে থাকব।’’

বিজেপি কটাক্ষ করেছে, সংখ্যালঘু ভোট ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে সিপিএম সেলিমকে রাজ্য সম্পাদক করেছে। জবাবে সেলিমের মন্তব্য, ‘‘যদি অন্য কেউ সম্পাদক হতেন, তা হলে কেউ না কেউ বলত হিন্দু সমর্থনের কথা মাথায় রেখে এমন সিদ্ধান্ত হল! এটা শাঁখের করাত। তবে কমিউনিস্ট পার্টি সমষ্টির সিদ্ধান্তে চলে, ব্যক্তি সেখানে বড় কথা নয়।’’

সূত্রের খবর, বিদায়ী রাজ্য কমিটির বৈঠকে এ দিন গৌতম, নেপালদেব ভট্টাচার্য, সুভাষ মুখোপাধ্যায়দের বাদ দেওয়া নিয়ে সরব হয়েছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার নেতারা। ‘যান্ত্রিক’ ভাবে নেতাদের সরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়ার প্রতিবাদ জানান তাঁরা। সূর্যবাবু অবশ্য বুঝিয়ে দেন, নীতি সকলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। রাজ্য কমিটিতে নতুন সম্পাদক পদে সেলিমের নাম প্রস্তাব করেন শ্রীদীপই।

md salim CPM
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy