Advertisement
E-Paper

পুরনো রেশন ব্যবস্থায় ফিরতে চায় রাজ্য

ভর্তুকির প্রশ্নে বরাভয় মিলেছিল খোদ মুখ্যমন্ত্রীর বার্তায়। ২১শে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন—৩ টাকা কেজি দরে চাল আর কিলো প্রতি ২ টাকার গম পাবেন সকলেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৫ ০২:৪৬

ভর্তুকির প্রশ্নে বরাভয় মিলেছিল খোদ মুখ্যমন্ত্রীর বার্তায়। ২১শে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন—৩ টাকা কেজি দরে চাল আর কিলো প্রতি ২ টাকার গম পাবেন সকলেই।

খাদ্য সুরক্ষার আওতার বাইরে থাকা রাজ্যের তিন কোটিরও বেশি মানুষের সামনে অচিরেই ন্যূনতম মূল্যের চাল-গম কেনার সুযোগ করে দিতে সাত-পাঁচ না ভেবে কোমর বেঁধেছিল খাদ্য দফতর। কিন্তু ভর্তুকির হিসেব কষতে গিয়েই মাথায় হাত পড়েছে সরকারের।

খাদ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই, জঙ্গলমহল- আয়লা দুর্গত সুন্দরবন কিংবা বন্ধ চা বাগান-সহ রাজ্যের আনাচ কানাচে ছড়িয়ে থাকা দুঃস্থ-দুর্গতদের দু’টাকা কেজি দরে চাল দিতে গিয়ে রাজ্যের ঘাড়ে চেপেছে প্রায় ১০৬০ কোটি টাকার ভর্তুকির বোঝা। এখন, খাদ্য সুরক্ষা আওতার বাইরে থাকা রাজ্যের ৩.২১ কোটি মানুষের কাছে ন্যূনতম মূল্যের চাল-গম কেনার সুযোগ করে দিলে সেই ভর্তুকির ভার যে বিপুল হয়ে উঠবে তা আঁচ করে আপাতত তাই পুরনো গণবণ্টন ব্যবস্থাতেই ভরসা রাখতে চাইছে সরকার বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে সরকারি ভাবে এখনই তা ঘোষণা করা হচ্ছে না। খাদ্য দফতর সূত্রের খবর, পুরনো ব্যবস্থা চালু রেখে আপাতত তা কতটা ফলপ্রসূ হচ্ছে নজরদারি চালান হবে সে ব্যাপারে।

নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ ব্যাপারে গত বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে বৈঠকে বসে ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী-সহ বিভাগীয় কর্তারা। ছিলেন মুখ্যসচিব। সেখানেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ভতুর্কির চাপ কমাতে ডিজিট্যাল রেশন কার্ড বণ্টনও আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তবে, উত্তরবঙ্গের কোচবিহার, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর এবং দক্ষিণবঙ্গের হুগলির গ্রামাঞ্চলে ইতিমধ্যেই ডিজিট্যাল কার্ড পরীক্ষামূলক ভাবে চালু হয়েছিল। আপাতত সেখানেও পুরনো রেশন কার্ড দেখিয়েই গ্রাহকেরা রেশন তুলতে পারবেন বলে জানা গিয়েছে।

এখন প্রশ্ন, পুরনো রেশন ব্যবস্থায় ফিরে গেলে গ্রাহকেরা কী দরে চাল-গম পাবেন?

খাদ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বিপিএল গ্রাহকেরা কেজি প্রতি ৪.৬৫ টাকা দরে গম এবং ২ টাকা কেজি দরে চাল পাবেন। অন্ত্যোদয় গ্রহকেরা চাল-গম পাবেন ২ টাকা কেজি দরে। তবে, এপিএল গ্রাহকেরা কেজি প্রতি ৬.৭৫ টাকা দরে গম পেলেও তাঁদের ভর্তুকিতে চাল পাওয়ার কথা নয়।

সরকারের এই ভাবনা-চিন্তাকে অবশ্য স্বাগত জানাচ্ছে ‘অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রায়ইস শপ ডিলার্স ফেডারেশন’। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু বলেন, ‘‘খাদ্য সুরক্ষার নামে রেশন ব্যবস্থাই তুলে দিতে চেয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। রেশন ডিলারেরা অনেকেই তাঁদের লাইসেন্স ফিরিয়ে দিতে চাইছিলেন। রাজ্য সরকার পুরনো ব্যবস্থায় ফিরলে রেশন ডিলারদের দুরবস্থা কাটবে। আমরা খুশি।’’

পালা বদলের পরে মহাকরণ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা ছিল—সকলের জন্য খাদ্য। চার বছর সরকারে থাকার পরে, ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে সে প্রসঙ্গ টেনে এনে মমতার ঘোষণা ছিল—খাদ্য সুরক্ষার আওতার বাইরে থাকা মানুষকেও সস্তার চাল-গম দেবে রাজ্য।

তিনি জানান, খাদ্য সুরক্ষার আওতায় না-থাকা রেশন গ্রাহকদের জন্য বরাদ্দ করা হচ্ছে একটি সাদা ফর্ম। ইচ্ছুক গ্রাহকদের ওই ফর্ম পূরণ করে জানাতে হবে তাঁরা ন্যূনতম মূল্যের ওই চাল-গম নিতে আগ্রহী। পঞ্চায়েত, পুরসভা, খাদ্য দফতর এমনকী স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কাছেও মিলবে সেই ফর্ম। বয়স-সামাজিক শ্রেণি-মাসিক আয়, কোনও কিছুই যে বাধা হবে না, ঘোষণায় তা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। অগস্ট এবং সেপ্টেম্বর মাস জুড়ে ইচ্ছুক গ্রাহকদের অন্তর্ভূক্তির এই কাজ চলবে বলে, দলীয় নেতা এবং জনপ্রতিনিধিদের খোলা মঞ্চ থেকেই সতর্ক করে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দনেত্রীর সেই ঘোষণাকে মান্যতা দিতে গিয়েই বেধেছে বিপত্তি।

রাজ্যের ৯ কোটিরও বেশি রেশন গ্রাহকের ৬.১ কোটি মানুষকে খাদ্য সুরক্ষার আওতায় রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার। গ্রাহকদের ন্যূনতম মূল্যের চাল-গম জোগানের দায়ও তাদের। দিল্লির ঘোষণা ছিল—আগামী ৩০ সেপ্টম্বরের মধ্যে দেশের সব রাজ্যে খাদ্য সুরক্ষার আওতায় আনতে হবে। কিন্তু রাজ্য সরকার যে সে পথে হাঁটতে চাইছে না মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণাতেই তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। দিল্লিও কী মুখ্যমন্ত্রীর গোষণাকেই মান্যতা দেবে, এখন দেখার সেটাই।

Bengal government ration system digital food minister
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy