ফাইল চিত্র।
প্রতিষেধক ঘিরে বিড়ম্বনা যেন কাটছেই না!
একে তো কোথায় গেলে টিকার দ্বিতীয় ডোজ় মিলবে তা এখনও সকলের কাছে স্পষ্ট নয়। তার উপর কোভিশিল্ডের দ্বিতীয় ডোজ়ের বিষয়ে ধারণা স্পষ্ট হয়নি অনেকেরই। তার সঙ্গে রবিবার থেকে যানবাহনে নিষেধাজ্ঞা চালু হচ্ছে। প্রতিষেধক কর্মসূচি চালু থাকলেও প্রতিষেধক প্রত্যাশীদের একাংশের প্রশ্ন, ‘‘গাড়ি না চললে, প্রতিষেধক কেন্দ্রে যাব কী ভাবে?’’
করোনা সংক্রমণ রুখতে চূড়ান্ত কড়াকড়ি করছে রাজ্য সরকার। এ দিন জারি করা নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে লোকাল ট্রেন ছাড়াও আজ, রবিবার থেকে আগামী ৩০ মে পর্যন্ত লঞ্চ, বাস, মেট্রো বন্ধ থাকবে। পাশাপাশি বলা হয়েছে, ব্যক্তিগত গাড়ি, ট্যাক্সি, অটো সবই বন্ধ থাকবে। তবে হাসপাতাল, নার্সিংহোম, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসা কেন্দ্র এবং প্রতিষেধক কেন্দ্রে যাতায়াতের জন্য ওই সমস্ত যানবাহন ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু এ জায়গাতেই ‘খটকা’ তৈরি হয়েছে সাধারণ মানুষের। তাঁরা জানাচ্ছেন, প্রতিষেধক কেন্দ্রে কখন কেউ যাবেন সেই অপেক্ষায় কি রাস্তায় রিকশা, টোটো কিংবা অটো থাকবে? শহরের বিভিন্ন জায়গার অটো, রিকশা কিংবা টোটো চালকদের অনেকেই বলছেন, ‘‘প্রথমত যাত্রী পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই। তারপরে যাত্রী নামিয়ে খালি ফেরার সময় যদি রাস্তায় পুলিশ আটকায়, তখন আর এক সমস্যা তৈরি হবে। তার থেকে বন্ধ রাখাই ভাল।’’ আবার সকলে যে অটো রিজ়ার্ভ করে প্রতিষেধক কেন্দ্রে যাতায়াত করবেন তা-ও নয়।
অনেকে এ প্রশ্নও তুলছেন, কোভিশিল্ডের দু’টি ডোজ়ের মধ্যে যেমন ব্যবধান বাড়িয়ে জোগান বাড়ানোর জন্য কেন্দ্র কিছুটা সময় বাড়িয়ে নিয়েছে, এ বার কি সেই পথেই হাঁটল রাজ্য সরকারও? প্রতিষেধক প্রত্যাশীদের একাংশ বলছেন, কে কবে কোথায় দ্বিতীয় ডোজ় পাবেন তা নিয়েই চূড়ান্ত বিভ্রান্তি চলছে। সেই পরিস্থিতিতে লাগাম টানতেই কি কৌশলে ব্যবস্থা নিল রাজ্য সরকার? যাতে সংক্রমণ রোধে কড়া নিয়ন্ত্রণ বিধি চলাকালীন আরও প্রতিষেধক নিজেদের ভাঁড়ারে চলে আসে। যদিও এই সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা স্পষ্ট জানিয়েছেন, প্রতিটি প্রতিষেধক কেন্দ্র খোলা থাকবে। আরও কেন্দ্র বাড়ানো হচ্ছে, যাতে সমস্যা না হয়। অনেকেরই নিজস্ব পরিবহণ ব্যবস্থা (গাড়ি, বাইক, সাইকেল) রয়েছে। তার মাধ্যমে তাঁরা প্রতিষেধক কেন্দ্রে যেতে পারবেন। বিভিন্ন ভাবে কলকাতা শহরে মানুষ যাতায়াত করেন। সেই ভাবে প্রতিষেধক কেন্দ্রে যেতে কোনও বাধা নেই। তবে প্রতিষেধক প্রদানকে যেমন প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে তেমনি সংক্রমণ রোধে অন্যান্য গতিবিধি বন্ধও জরুরি।
প্রতিষেধকের পাশাপাশি সংশয় তৈরি হয়েছে করোনা পরীক্ষা করা নিয়েও। মৃদু বা মাঝারি উপসর্গযুক্ত রোগীরা অনেক সময়ই চিকিৎসকের পরামর্শ মতো সরকারি বা বেসরকারি পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে আরটিপিসিআর পরীক্ষা করান। তাঁরা কী ভাবে এ বার পরীক্ষা কেন্দ্রে যাবেন, সে প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে। সূত্রের খবর, পরীক্ষা করানো মোট রোগীর ২০-৩০ শতাংশ পরীক্ষা কেন্দ্রে নিজেরা যান। বাকি ৮০-৭০ শতাংশের বাড়িতে বেসরকারি পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে কর্মী আসেন। এ বার প্রশ্ন হল সেই কর্মীরা কতটা আসতে পারবেন? শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালের পরীক্ষা কেন্দ্রের কামারহাটি শাখার কর্তা রীতম মল্লিক বলেন, ‘‘প্রশাসনের নির্দেশিকা মোতাবেক আমাদের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু পূর্বের অভিজ্ঞতা বলছে, পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও নমুনা সংগ্রহকারীদের রাস্তায় পুলিশের হাতে হেনস্থা হতে হয়। এতে ক্ষতি রোগীদেরই বেশি হচ্ছে।’’ পাশাপাশি, আরও একটি প্রশ্ন উঠে আসছে, তা হল সাধারণ মানুষ যেমন পরীক্ষা কেন্দ্র বা প্রতিষেধক কেন্দ্রে যাতায়াতে সমস্যায় পড়বেন, তেমনই সেখানকার কর্মীরা কী ভাবে পৌঁছবেন?
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, লোকাল ট্রেন বন্ধ এবং সরকারি বাস ও মেট্রো সংখ্যা কমে যাওয়ার পরেই শহরের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মীদের যাতায়াতের জন্য বাস পরিষেবা চালু করা হয়েছিল। এ দিন গণপরিবহণ পুরোপুরি বন্ধের নির্দেশিকা জারির পরে স্বাস্থ্য ভবনের তরফে পরিবহণ দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাতে সিদ্ধান্ত শহরের হাসপাতালে যাতায়াতের জন্য ছোট গাড়ি, বাস মিলিয়ে আরও ২০০টি গাড়ি নামানো হবে। পাশাপাশি সমস্ত জেলাশাসকদেরও ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।
তবে কিছু জায়গায় ধোঁয়াশা এখন রয়েই গেল। রাজ্যের ভাঁড়ারে পর্যাপ্ত প্রতিষেধক কবে এসে পৌঁছবে তা যেমন স্পষ্ট ভাবে জানা নেই, তেমনি আগামী ১৫ দিন প্রতিষেধক প্রত্যাশীদের সকলেই টিকা কেন্দ্রে পৌঁছতে পারবেন কি না তার কোনও নিশ্চয়তা এখনও মেলেনি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy