Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

গোঁজ-কাঁটা তুলতে ভরসা অভিষেক

নির্বাচন নিয়ে জটিলতা কাটলেও দলের অন্দরে এখনও সংশয় পুরো কাটেনি— বিক্ষুব্ধ গোঁজ প্রার্থীরা কি সবাই সরে দাঁড়াবেন?

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৫৩
Share: Save:

ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের প্রায় সর্বত্রই গোঁজ প্রার্থীদের নিয়ে সঙ্কটে তৃণমূল নেতৃত্ব। বিক্ষুব্ধদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন দলের পুরুলিয়া জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো। নির্বাচন নিয়ে জটিলতা কাটলেও দলের অন্দরে এখনও সংশয় পুরো কাটেনি— বিক্ষুব্ধ গোঁজ প্রার্থীরা কি সবাই সরে দাঁড়াবেন? দলের কর্মীদের অনেকেই মনে করছেন, তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এসে কড়া নির্দেশ দিলে ব্যাপারটা সহজ হবে। পুরুলিয়ায় তাঁর একাধিক নির্বাচনী সভা করার কথা ছিল। কিন্তু নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় আদালতের স্থগিতাদেশের ফলে সেই সভা পিছিয়ে যায়। কবে সভা হবে, তা নিয়ে এখনও ধন্দে জেলা তৃণমূল।

পুরুলিয়াতে আসনের চেয়ে বেশি মনোনয়ন জমা পড়ায় দৃশ্যতই অস্বস্তিতে শাসকদল। গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৯৪৪টি আসনে তৃণমূলের মনোনয়ন জমা পড়ে গিয়েছে ২৩৭৩টি। পঞ্চায়েত সমিতির ৪৪৬টি আসনের দাবিদার শাসকদলের ৬৯২ জন। জেলা পরিষদের আসন ৩৮টি। মনোনয়ন জমা পড়েছে ৭৮টি। অর্থাৎ দলের নির্দেশ অমান্য করে অনেকে মনোনয়ন জমা করে বসে রয়েছেন। তৃণমূলের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, দল যাঁদের প্রার্থী হিসাবে বাছাই করেছে প্রতীক পাবেন তাঁরাই। তবে নিচু তলায় কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, অনেকে নাকি গোঁ ধরেছেন— টিকিট না পেলে নির্দল হয়েই লড়বেন।

তৃণমূল একটি সূত্রের দাবি, বিভিন্ন ব্লকের নেতারা গোঁজ প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়ে দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে মাঠে নামার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ বিশেষ হয়নি। জেলার জঙ্গলমহল থেকে শুরু করে শিল্পাঞ্চল রঘুনাথপুর মহকুমা এলাকা— সর্বত্রই গোঁজ প্রার্থীরা স্থানীয় ভাবে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন।জেলার কিছু জায়গায় এখনই পঞ্চায়েতের এক আসনে দলের দুই প্রার্থীর সমর্থনে দেওয়াল লিখন শুরু হয়ে গিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রার্থী কে হবেন সেটা বুঝতে না পেরে হাত গুটিয়ে বসে রয়েছেন কর্মী সমর্থকেরা। জট কাটাতে জেলা নেতাদের অনেকেই তাকিয়ে রয়েছেন অভিষেকের দিকে। দলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘জেলার প্রতিটি সভাতেই দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কর্মীদের নির্দেশ দেবেন অভিষেক।” দলের যুব নেতা তথা রঘুনাথপুরের পুরপ্রধান ভবেশ চট্টোপাধ্যায় বিষয়টি আরও স্পষ্ট কথায় বলে দিচ্ছেন। দলের নির্দেশেই রঘুনাথপুর ২ ব্লকে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটাতে নির্বাচনের আগে ছুটছেন তিনি। সমস্ত গোষ্ঠীর নেতা কর্মীদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠকও করেছেন। ভবেশবাবু বলেন, ‘‘আমরা সবাই প্রতিটি ব্লকে দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যা মেটাতে তৎপর হয়েছি। কিন্তু খোদ পর্যবেক্ষক বিক্ষুব্ধ ও গোঁজ প্রার্থীদের প্রতি কড়া বার্তা দিলে কাজ আরও সহজ হবে।”

এর আগেও জেলায় সভা করে অভিষেক গোঁজ তথা বিক্ষুব্ধ প্রার্থীদের প্রতি দলের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন। জঙ্গলমহল এলাকায় দলকে আরও উজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছেন। সম্প্রতি জঙ্গলমহলের দুই ব্লক বলরামপুর ও বরাবাজারে গোলমালের পরে তৃণমূলের অনেক নেতা কর্মীই মনে করছেন পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপি কঠিন প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এই পরিস্থিতিতে দলের ভিতরের মনোমালিন্যের সুযোগ যাতে বিরোধীরা না নিতে পারে, সেটা নিশ্চিত করতেই অনেকেই চাইছেন অভিষেক কড়া ক’টা কথা বলুন। পুরুলিয়ার যুব তৃণমূল সভাপতি সুশান্ত মাহাতো বলেন, ‘‘কর্মী সমর্থকেরা ওঁর বক্তৃতা শুনতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছেন। যখনই সভা হবে প্রত্যেকটা জায়গায় হাজার হাজার লোকের ভিড় উপচে পড়বে।”

তৃণমূল সূত্রের খবর, গত ১৮ এপ্রিল মানবাজারের ইন্দকুড়িতে সভা করার কথা ছিল অভিষেকের। পরের ধাপে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে বান্দোয়ান, বাঘমুণ্ডি বা ঝালদা আর রঘুনাথপুরের কোনও জায়গায় সভা করতে পারেন বলে জানা গিয়েছিল। কিন্তু সেই সভা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। দলের একাংশ মনে করছে, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে সরগরম বান্দোয়ানের মতো জায়গায় সভা করে বার্তা দিতে চাইছেন অভিষেক। অন্য দিকে, বাঘমুণ্ডি বিধানসভা এলাকা কংগ্রেসের গড় বলে পরিচিত। শান্তিরামবাবু বলেন, ‘‘বাঘমুণ্ডি বিধানসভা কংগ্রেসের দখলে। নেতৃত্ব চায়, পঞ্চায়েতে সেখানে মূল শক্তি হিসাবে তৃণমূল উঠে আসুক। সেই প্রেক্ষিতেই বাঘমুণ্ডিতে সভা করবেন অভিষেক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE