Advertisement
১৬ মে ২০২৪

‘কেরু’র ভিটেয় প্রার্থীই খুঁজে পেল না সিপিএম 

ধুধু দুপুর। মুদির দোকান বন্ধ করে মাথায় আলগোছে একটা গামছা ফেলে বাড়ি ফেরার পথে অশোক বিশ্বাস বলছেন, ‘‘কেরুকে চিনতে পারলেন না তো, বছর কয়েক আগেও ও নামেই গ্রামটাকে চিনত সবাই। আর এ বার কেরুর দল, সিপিএম, প্রার্থীই খুঁজে পেল না!’’

অনিল বিশ্বাস

অনিল বিশ্বাস

কল্লোল প্রামাণিক
করিমপুর শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৮ ১২:৪৫
Share: Save:

গ্রামের নাম ‘কেরু’!

অথচ, বড় রাস্তা থেকে গড়িয়ে যাওয়া মেঠো পথের মুখে পঞ্চায়েতের সবুজ বোর্ড তির দিয়ে চিনিয়ে দিচ্ছে— দাঁড়ের মাঠ।

ধুধু দুপুর। মুদির দোকান বন্ধ করে মাথায় আলগোছে একটা গামছা ফেলে বাড়ি ফেরার পথে অশোক বিশ্বাস বলছেন, ‘‘কেরুকে চিনতে পারলেন না তো, বছর কয়েক আগেও ও নামেই গ্রামটাকে চিনত সবাই। আর এ বার কেরুর দল, সিপিএম, প্রার্থীই খুঁজে পেল না!’’

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক প্রয়াত অনিল বিশ্বাসের গ্রাম দাঁড়ের মাঠ তাঁর ডাক নামেই পরিচিত হয়ে উঠেছিল। বাম জমানার সাড়ে তিন দশকে দাঁড়ের মাঠ আবছা হয়ে নদিয়ার করিমপুর ১ ব্লকের ‘কেরু গ্রাম’ দিব্যি জায়গা করে নিয়েছিল পঞ্চায়েতের পাতায়।

এ বার সেখানে প্রার্থীই খুঁজে পায়নি সিপিএম। তাই প্রকাশ্যে বিজেপিকেই সমর্থন করছে তারা। সঙ্গে দোসর করেছে তৃণমূল বিরোধী এক নির্দল প্রার্থীকেও। দলের প্রাক্তন বিধায়ক সমরেন্দ্রনাথ ঘোষ আমতা আমতা করে তার একটা ব্যাখ্যাও দিচ্ছেন, ‘‘ওবিসি সংরক্ষিত আসন তো, প্রার্থী দেওয়া যায়নি। তবে, তৃণমূলের সঙ্গে টক্কর দিতে আমরা শাসক বিরোধী সব ভোট এক জায়গায় করার কথা বলছি।’’

শিকারপুর আর পিপুলবেড়িয়া, পাশাপাশি দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েতের আসন রয়েছে দাঁড়ের মাঠে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেও দু’টি আসন ছিল বামেদের দখলে। করিমপুর বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল জিতলেও এই এলাকা থেকে বুক চিতিয়ে দাঁড়ের মাঠ এগিয়ে রেখেছিল সিপিএমকে। এ বার শুধু শিকারপুর নয়, পিপুলবেড়িয়া পঞ্চায়েতের অধিকাংশ আসনেও প্রার্থী খুঁজে পায়নি সিপিএম।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সিপিএম স্থানীয় মহিলা প্রার্থী খোঁজা শুরু করেছিল বড্ড দেরিতে। দলের এক যুব কর্মী অবশ্য ধরিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘জানেন, পাঁচ বছর আগেও অনিলদার নামে এক বার ডাক দিলেই পিলপিল করে লোক বেরিয়ে আসত। এ বার, অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও কেউ কাস্তে-হাতুড়ি প্রতীকে দাঁড়াতে চাইলেন না!’’ স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির আসনেও প্রার্থী দিতে পারেনি সিপিএম, এক মাত্র জেলা পরিষদ আসনটিতে সমরেন্দ্রবাবু পুরনো স্মৃতি বয়ে প্রার্থী হয়েছেন।

সিপিএমের লোকাল কমিটির সম্পাদক মানিক বিশ্বাস মাস কয়েক আগে নিঃশব্দে সরে গিয়েছেন তৃণমূলে। মাথা নিচু করে তিনিও মেনে নিচ্ছেন, ‘‘মিথ্যে বলব না, গত বিধানসভা ভোটেও সিপিএমের লিড ছিল একানে, কিন্তু দম্ভের ধাক্কায় দলটা কোথায় পিছিয়ে গেল আজ!’’

তৃণমূলের করিমপুর ১ ব্লক সভাপতি তরুণ সাহা বলছেন, ‘‘এখানে তো কোনও সন্ত্রাস হয়নি, তা হলে! আমরা তো আর প্রার্থী খুঁজে দিতে পারব না, দলটা একেবারে সাইনবোর্ড হয়ে গেছে মশাই!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE