দুই বাড়িতে রান্না সেরে বছর আটচল্লিশের মহিলা যখন সিপিএমের দলীয় কার্যালয়ে পৌঁছলেন, তখন তিনি ঘেমেনেয়ে একসা। বসতে বসতেই দলীয় কর্মীদের বললেন, ‘‘বাবুর বাড়ির মাছটা পচে যাবে। আমার কাগজটা তাড়াতাড়ি লিখে দাও দেখি। জমা দিয়ে আসি।’’
কাগজটা মনোনয়নের। আর জায়গাটা পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা। সুশান্ত ঘোষ, তপন ঘোষ, সুকুর আলিদের দাপটে একসময়ের এই লালদুর্গে এখন সিপিএমকে দূরবীনে খুঁজে পাওয়া ভার। এ বারের পঞ্চায়েত ভোটে ১০-১২ শতাংশ আসনেও প্রার্থী দেওয়া যাবে না, মানছেন নেতৃত্বই। দলের এই দুর্দিনেও অকুতোভয় লক্ষ্মী রুইদাস। গড়বেতার গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি সংসদ আসনে এ বার কাস্তে-হাতুড়ি-তারার প্রার্থী হয়েছেন বিধবা এই মহিলা। শনিবার মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তিনি।
শনিবার গড়বেতায় ছিলেন সিপিএমের জেলা কমিটির নেতা তাপস সিংহ। লক্ষ্মীদেবীর মনের জোর তাঁকেও হতবাক করেছে। তাপসবাবু বলছিলেন, “লক্ষ্মীদির কাছে পার্টিই সব। সব সময় দলের কর্মসূচিতে একেবারে সামনের সারিতে থাকেন।” ভোটের ময়দানে অবশ্য লক্ষ্মীদেবী এই প্রথম। তাই ঠিকঠাক মনোনয়ন জমা দিতে পারলেন কি না, খোঁজ নিয়েছিলেন তাপসবাবু। জোর গলায় মহিলা কমরেড বলেছেন, ‘‘দেব না মানে? লড়াই না করে ওদের ছাড়ব না।’’ লক্ষ্মীদেবীর ছোট ছেলে অনিল প্রস্তাবক হয়েছেন। তিনিও বলছেন, ‘‘মা লালঝান্ডা কখনও ছাড়বেন না।’’
নেতৃত্ব: কাঁচা বাঁশের লাঠিতে দলীয় পতাকা। রবিবার নন্দীগ্রাম-২ ব্লকের রেয়াপাড়ায় তৃণমূলের মিছিলে শুভেন্দু অধিকারী। ছবি: কেশব মান্না
দুর্দিনেও প্রার্থী হলেন যে?
প্রশ্নটা শুনে একটু যেন রেগেই গেলেন লক্ষ্মীদেবী। জবাব এল, ‘‘সুদিন, দুর্দিনের কী আছে। পার্টিকে জান দিয়ে ভালবাসি। সব সময়ই সঙ্গে থাকব।’’
গোটা রাজ্যের মতো জঙ্গলমহলের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরেও সিপিএমের এখন বিপর্যস্ত দশা। আজ, সোমবার পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়ন পেশের শেষ দিন। কিন্তু এখনও এক তৃতীয়াংশ আসনে মনোনয়ন দিতে পারেনি প্রাক্তন শাসক। দলীয় সূত্রে খবর, তৃণমূল ও বিজেপিকে রুখতে বেশ কিছু আসনে ‘সর্বসম্মত নির্দল’ প্রার্থী দাঁড় করানোর তোড়জোড় চলছে।
এমন অবস্থায় গড়বেতার লক্ষ্মীদেবী নেতৃত্বকে অক্সিজেন জোগাচ্ছেন। সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণ রায় বলছেন, “তৃণমূলের মার যেমন রয়েছে, তেমন আমাদের কর্মী-সমর্থকদের প্রতিরোধও রয়েছে। এমন হার না মানা কমরেডরাই তো আমাদের দলের সম্পদ।”