Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

উইকেটেই ছক্কা মারছে ছিঁচকে কালু

কালু-মালু-জালুরা জানে, উইকেট নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর মস্ত সুবিধে হল, পুলিশে ধরবে না। উইকেট তো আর লোহার রড নয়, বাঁশের খেটো লাঠিও নয়, নেহাতই নির্বিষ জিনিস। শুধু যার পিঠে পড়বে, সেই হাড়ে-হাড়ে জানবে উইকেট পড়া কাকে বলে!

সুজাউদ্দিন
ডোমকল শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:৪৩
Share: Save:

শীত ফুরিয়েছে। গাঁ-গঞ্জের মাঠে এখনও ফুলকপি আর ক্রিকেট প্রায় একই সঙ্গে ফুরোয়। ফুলকপি কবেই হলুদ হয়ে উঠে গিয়েছে। ব্যাট গিয়েছে, বল গিয়েছে। কিন্তু উইকেট ফুরোয়নি!

চৈতি সকালে ফুরফুরে মেজাজে পথে চরতে বেরিয়েছে ‘বোতল কালু’। বাংলা-র দাক্ষিণ্যে কবেই তার নামের শেষ থেকে ‘শেখ’ উবে সমুখে বোতল বসেছে। এমনিতে ছিঁচকে চোর, এখন হেরোইন কারবারে হাত পাকিয়েছে। সেই হাতে নতুন একখান উইকেট!

দেখেই চোখ কপালে ইসলামপুর থানার মেজোবাবুর। মনোনয়ন জমা সবে শেষ হয়েছে, এ বার প্রত্যাহারের পালা। বারণ সত্ত্বেও যে সব নাছোড় লোক ‘পাহারা’ গলে ভোটে নাম দিয়েছে আর চোরকাঁটা হয়ে ফুল-প্যান্টে বিঁধছে যে সব ‘গোঁজ’, তাদের উপড়ে দেওয়ার পালা।

বটের ছায়ায় দাঁড়িয়েই মেজোবাবু হাঁক পাড়েন, ‘‘ও কালু, কোথায় ম্যাচ আছে ভাই?’’ মাথায় বাঁধা ফুল-ফুল ঝান্ডা, গালে কড়া জর্দা ঠোসা পান, ভারী বিনীত হেসে কালু বলে, ‘‘বিডিও অফিসে, স্যর। আসুন না, দেখবেন। বলে-বলে ছক্কা হাঁকাব।’’

আরও পড়ুন: সন্ত্রাসে ‘লাভ’ হয় না, এটাই অতীতের শিক্ষা

মুর্শিদাবাদের এ সব এলাকার ধাত মেজোবাবুর জানা। বহু দিন হয়ে গেল ডিউটি করছেন। ভোট এলেই টুকটাক উইকেট পড়তে শুরু করে। এই বোমা বাঁধতে গিয়ে একটা উইকেট পড়ে গেল, তো দু’দিন বাদে দেওয়াল লেখা নিয়ে ঝগড়ার পর আর দু’টো। কিন্তু এ তো আর তেমন কথার কথা নয়, সত্যিকারের উইকেট।

ব্যাপার কী, দাদা? ডোমকল বাজারের এক দোকানি ফিসফিস করেন, ‘‘এখানে শীতের শুরুতে ব্যাট-বল-উইকেট বিক্রি হয়। কিন্তু সপ্তাহ দুই হল, ব্যাট-বল কেউ আর কিনছে না, শুধু উইকেট।’’ ব্লক অফিসের কাছে দাঁড়িয়ে মিষ্টি হাসেন এক যুবক, তাঁরও হাতে উইকেট, ‘‘এখন এটা ডান্ডা। ওরা ঠান্ডা হলে ক্লাবের ছেলেদের দিয়ে দেব। ওরা খেলবে।’’

কালু-মালু-জালুরা জানে, উইকেট নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর মস্ত সুবিধে হল, পুলিশে ধরবে না। উইকেট তো আর লোহার রড নয়, বাঁশের খেটো লাঠিও নয়, নেহাতই নির্বিষ জিনিস। শুধু যার পিঠে পড়বে, সেই হাড়ে-হাড়ে জানবে উইকেট পড়া কাকে বলে! বিরোধী দলের এক নেতা বলেন, ‘‘আমাদের কেউ কেউ জেনেছেন উইকেটের তেজ। যত ভোটের দিকে দিন গড়াবে, ততই স্পষ্ট হবে তিন-কাঠির মহিমা।’’

উইকেটের সঙ্গী হয়েছে কোদালের ডাঁটও। দলে-দলে ‘চাষি’রা আসছেন। কিন্তু কোদাল নয়, শুধু তার হাতলটা (ডাঁট) কিনে ফিরে যাচ্ছেন। ৩০-৪০ থেকে ৫০ টাকায় উঠেছে এক-একটা ডাঁটের দাম। ডোমকল বাজারের এক দোকানির কথায়, ‘‘দিনে দু’তিনটের বেশি ডাঁট কোনও কালেই বিক্রি হয় না। অথচ এখন যা আনছি, দুপুরের আগেই শেষ। বাড়তি অর্ডার দিয়েও সামাল দিতে পারছি না।’’

রানিনগর ১ ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি আবু হানিফ মিঞার দাবি, ‘‘ভোটের ময়দান বিরোধীশূন্য করতে উইকেট আর ডাঁট নিয়ে দাপাদাপি এই প্রথম দেখছি!’’ যুব তৃণমূল নেতা সৌমিক হোসেনের পাল্টা, ‘‘অনেক নোংরা জমেছে। কোদাল লাগছে। আর, ছেলেরা একটু উইকেট নিয়ে খেলবে, তাতেও ওদের গাত্রদাহ?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE