Advertisement
E-Paper

‘অন্য ঝান্ডা টাঙাবে কে? পিটিয়ে ছাল তুলে দেবে না?’

বিতর্ক, অশান্তির ইতিবৃত্ত, দৈনন্দিন জীবনে রাজনীতির টানাপড়েন— বিভিন্ন এলাকার ভোটচিত্রের তথ্যতালাশযে দিকে চোখ যায়, আরও কিছু ফুল হাওয়ায় দোল খাচ্ছে গাছের ডালে, রাস্তার পাশে লাইট পোস্টে, মোড়ের মাথায় মাচার আবডালে।

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৮ ১৬:৪৬
একচ্ছত্র: শাসক দল ছাড়া অন্য কারও প্রচার চোখেই পড়ছে না। বগুলার মুড়াগাছায়। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

একচ্ছত্র: শাসক দল ছাড়া অন্য কারও প্রচার চোখেই পড়ছে না। বগুলার মুড়াগাছায়। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

ছোট্ট পান-বিড়ির দোকান। মাথায় পতপত করে উড়ছে তৃণমূলের জোড়াফুল ছাপানো ঝান্ডা।

যে দিকে চোখ যায়, আরও কিছু ফুল হাওয়ায় দোল খাচ্ছে গাছের ডালে, রাস্তার পাশে লাইট পোস্টে, মোড়ের মাথায় মাচার আবডালে।

নদিয়ার হাঁসখালি ব্লকের বগুলা ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা। পঞ্চায়েতের ২৬টি আসনের মধ্যে ২২টিতে প্রার্থী দিয়েছে সিপিএম। বিজেপিও তা-ই। কিন্তু যে দিকে চাও, কাস্তে-হাতুড়ি বা পদ্ম-টদ্ম চোখেই পড়বে না। ঝান্ডায় না, দেওয়ালেও না।

“অন্য ঝান্ডা টাঙাবে কে? পিটিয়ে ছাল তুলে দেবে না?” — চারপাশ দেখে নিয়ে নিচু গলায় বলেন বগুলা বাজারের দোকানি। একেবারেই নেই, তা বলা যাবে না। ২৯ ও ৩০ নম্বর বুথে কয়েকটা গেরুয়া ঝান্ডা নতমুখে ঝুলছে। আর ৩৭ নম্বর বুথে সিপিএম প্রার্থীর বাড়ির সামনে গাছে উড়ছে গোটা তল্লাটের একমাত্র রক্তপতাকা।

খানিক দূরে নিমের ছায়ায় তৃণমূলের অফিস। চায়ের ভাঁড়ে একটা চুমুক দিয়ে দলের জেলা পরিষদ প্রার্থী এবং ব্লক সভাপতি কল্যাণ ঢালি বলছেন, ‘‘এতই যদি সন্ত্রাস, তা হলে বাইশ-তেইশটা আসনে বিরোধীরা প্রার্থী দিল কি করে শুনি!’’

আরও পড়ুন: হাইকোর্টের তত্ত্বাবধানে ভোট চান রাহুল সিংহ

প্রার্থীর নাম অনিমা বিশ্বাস, বয়স একষট্টি। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য মৃণাল বিশ্বাসের মা তিনি। বলছেন, “লালঝান্ডা লাগাতে গেলে হুমকি দিচ্ছে। বলছে, খুন করে দেবে। চুল কেটে নেবে।’’

তা হলে প্রচার চলছে কী করে?

অবাক হয়ে অনিমা বিড় বিড় করছেন, ‘‘মহকুমাশাসকের দফতরে কোনওরকমে মনোনয়ন জমা দিয়েছি এ-ই ঢের! প্রত্যাহারের জন্য চাপও তো কম আসেনি। এর পর প্রচার! ’’

ভরা দাপটের মধ্যেও তৃণমূলের প্রচারে অবশ্য খামতি নেই। জনা পঞ্চাশ কর্মী নিয়ে গ্রামের তপ্ত রাস্তায় প্রচার সেরে ন্যাতানো গামছায় ঘাম মুছছেন বগুলা ২ তৃণমূলের প্রধান পীযূষ কুণ্ডু। তার পর ক্লান্ত গলায় বলছেন, ‘‘দেখুন ভাই, বিরোধীদের প্রচারের জন্য লোকসস্কর কিংবা ফেস্টুন টাঙানোর কর্মী জোগাড় করে দেওয়ার দায় তো নিতে পারব না, ওদের (বিরোধী) কর্মী-সমর্থকই নেই, তাই প্রচার করছেন না।’’

এলাকায় কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, বিজেপি প্রার্থী বন্দনা বর্মণের সঙ্গে প্রচারে বেরোনোয় মারধর করে বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। সিপিএম প্রার্থী অত্রি মণ্ডলের বাড়িতে পড়েছে বোমা। পাশের রামনগর-বড়চুপড়িয়া পঞ্চায়েত এলাকায় প্রচারে বেরোনোর ‘অপরাধে’ বিদায়ী উপপ্রধান তথা সিপিএম তপন সরকারের বাড়িতেও ভাঙচুর হয়েছে। অভিযোগ করেছেন? বিরোধীরা জানাচ্ছেন, পুলিশ অভিযোগ নিলে তো! হাঁসখালির ওসি অনিন্দ্য বসু অবশ্য হাসছেন, ‘‘কেন নেবে না, বিজেপি প্রার্থীর অভিযোগ তো জমা পড়েছে। অন্যরা না এলে কি করি বলুন!’’ বিরোধীদের অভিযোগ, অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, কোনও শিল্পীকে কাস্তে-পদ্ম-হাত আঁকতে বললেই উল্টে হাতজোড় করছেন! হাঁসখালি গঞ্জে এমনই এক শিল্পীর দরমার দরজায় দাঁড়াতেই বলছেন, ‘‘ক্ষমা করবেন, টাকার আগে তো প্রাণ! এর বেশি কিছু বলব না দাদা।”

হাঁসখালি ব্লকে চারটি পঞ্চায়েতে বিনা যুদ্ধে জিতেই বসে আছে শাসক দল। বাকিগুলোয় বিরোধীরা টিমটিম করে জ্বলছে। তাতেও এই অবস্থা!

চাপড়া এবং শান্তিপুরেও তো মনোনয়ন পর্ব থেকে ‘উন্নয়ন’-এর দাপাদাপি। চাপড়ায় ১৩টির মধ্যে ৮টি গ্রাম পঞ্চায়েত বিনা যুদ্ধেই দখল হয়েছে। বিজেপির জেলা পরিষদ প্রার্থী চিত্তরঞ্জন ঘোষ এখনও পর্যন্ত ঘরছাড়া। শান্তিপুরের গ্রামে বিজেপি প্রার্থীর জা-কে যৌননিগ্রহ করারও অভিযোগ উঠেছে। ফুলিয়ায় বাড়ি ফিরতে পারছেন না সিপিএমের জেলা পরিষদ প্রার্থী কামিনী বসাকের মতো অনেকে। অনিমা বলছেন, ‘‘এর মধ্যে কে করবে প্রচার, বলুন?’’

নদিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের অবশ্য কটাক্ষ, ‘‘প্রচারে যেতে গেলে তো প্রার্থীর সঙ্গে ক’টা লোক অন্তত লাগে! তা-ও কি আমরাই জুগিয়ে দেব?’’

(চলবে)

West Bengal Panchayat Elections 2018 Panchayat Poll TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy