Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
বুথে পৌঁছে শুনত নানুর

ভোট পড়ে গিয়েছে, বাড়ি যান!

নানুরের চারকলগ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দাদের কেউ কেউ বলেন, ‘‘ভোট দিতে না পারার ঘটনা শুরু ২০০৩ সাল থেকে। ২০০৮, ২০১৩ থেকে ২০১৮— পরিস্থিতি বদলায়নি একটুও।

গণতান্ত্রিক: পুলিশি নিরাপত্তায় বুথের পথে ভোটকর্মী। রবিবার মহম্মদবাজারে। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

গণতান্ত্রিক: পুলিশি নিরাপত্তায় বুথের পথে ভোটকর্মী। রবিবার মহম্মদবাজারে। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

অর্ঘ্য ঘোষ
নানুর শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৮ ০০:২২
Share: Save:

ভোটকেন্দ্রে গিয়ে শুনতে হয়েছে, আগেই পড়ে গিয়েছে তাঁর ভোট— এমন অভিজ্ঞতা রয়েছে নানুরের সেই গ্রাম পঞ্চায়েতের অনেকেরই। কখনও আবার বিরোধী প্রার্থী না থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছেন প্রার্থীরা, হয়নি ভোটই।

নানুরের চারকলগ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দাদের কেউ কেউ বলেন, ‘‘ভোট দিতে না পারার ঘটনা শুরু ২০০৩ সাল থেকে। ২০০৮, ২০১৩ থেকে ২০১৮— পরিস্থিতি বদলায়নি একটুও। শুধু রাজ্যের ক্ষমতার অলিন্দে বামফ্রণ্টের বদলে এসেছে তৃণমূল।’’

প্রশাসনিক সূত্রে খবর, ২০০৩ সালের নির্বাচনে ওই পঞ্চায়েতের ১৫টি আসনের মধ্যে বামফ্রন্ট ৬, তৃণমূল ৬ এবং কংগ্রেস ১টি আসন দখল করে। কংগ্রেস জনপ্রতিনিধিকে প্রধান করে বোর্ড গড়ে তৃণমূল। তবে মাসতিনেকের বেশি তারা ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেনি। স্থানীয় সূত্রে খবর, পঞ্চায়েতের এক তৃণমূল সদস্যকে মারধর করে পদত্যাগ করতে বাধ্য করানোর অভিযোগ ওঠে সিপিএমের বিরুদ্ধে। উপনির্বাচনে বিরোধীরা কোনও প্রার্থী দিতে পারেনি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সেই আসন জিতে পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখল করে সিপিএম। ২০০৮ সালে পঞ্চায়েতের ১৩টি আসন দখল করে সিপিএম। পঞ্চায়েত সমিতির তিনটি আসনও তাদের দখলে ছিল। ২০১৩ সালে সেখানে ভোটই হয়নি। শাসকদলের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতেন। বিরোধীরা কোনও প্রার্থী দিতে পারেনি। একই ভাবে এ বারও গোটা নানুর ব্লকেই ভোট হচ্ছে না।

এলাকার কেউ কেউ বলেন, ‘‘চারকলগ্রাম বার বার দখল করেছে শাসক দলের প্রার্থীরাই।’’

নানুরের পাপুড়ি এ রাজ্য রাজনীতিতে পরিচিত নাম। তা রয়েছে চারকলগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাতেই। সেই গ্রামেই বাড়ি কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ শাহনওয়াজ ও তাঁর ভাই তথা তৃণমূলের প্রাক্তন যুবনেতা কাজল শেখের। গোলা-গুলির লড়াইয়ে বার বার তেতে উঠেছে পাপুড়ি। পরিস্থিতি সামলাতে যেতে হয়েছে তৃণমূলের রাজ্যস্তরের নেতাদের। স্থানীয় সূত্রে খবর, দিনের পর দিন সপরিবার গ্রামছাড়া থাকতে হয়েছে শাহনওয়াজকে। পাপুড়ির একটি ব্যাঙ্কে টাকা জমা দিতে এসেছিলেন অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক। তিনি জানিয়ে গেলেন, ‘‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শাসকদলের প্রার্থীরা জিতে যাওয়ায় এখন ভোটকেন্দ্রেই যেতে হয় না। আর আগে বুথে গিয়ে লাইনে দাঁড়ানোর পর শুনতে হত— ‘আপনার ভোট হয়ে গিয়েছে। বাড়ি চলে যান!’ পঞ্চায়েত অফিস লাগোয়া এক দোকানদার বলেন, ‘‘বামফ্রন্ট আমলে ভোট লুটের নালিশ শুনতাম। ভোট দিতে না পেরে মন খারাপ করে বাড়ি ফিরতেন অনেকে।’’

তৃণমূলের নানুর ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘শুধু ওই পঞ্চায়েত নয়, পূর্বতন সরকারের আমলে অনেক জায়গাতেই আমরা প্রার্থী দিতে পারিনি।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আনন্দ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ভোট লুটের অভিযোগ ভিত্তিহীন। বামফ্রন্টের আমলে গণতান্ত্রিক পরিবেশে ভোট হয়েছে। বিরোধীরাও প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ পেয়েছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE