‘এ কোন নতুন কবি উঠে এসেছেন?’ প্রবীণ কবি শঙ্খ ঘোষকে অপমান করতেই কি এমন মন্তব্য করলেন অনুব্রত মণ্ডল?এর পর তিনি আরও যা বলেছেন, তা যেন শালীনতার গণ্ডি ডিঙিয়ে গেল এক নিমেষে।‘‘শঙ্খ তো পবিত্র কাজে লাগে। শঙ্খ ভুল করলে দেবতাদের অসম্মান হয়।’’ এমন সব মন্তব্য নিয়ে সুশীল সমাজ নিন্দায় মুখর ঠিকই, তবে হতচকিত নয়।
নাট্যব্যক্তিত্ব রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তের কথায়: ‘‘আমার কাছে অনুব্রত মণ্ডলের এই মন্তব্য ভয়ঙ্কর নয়। তবে তার চেয়ে অনেক বেশি দুশ্চিন্তার কারণ, তাঁদের সুপ্রিম নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নীরবতা।’’ প্রবীণ এই নাট্যব্যক্তিত্বের কথায়: ‘‘মমতা তো কবিতা লেখেন, ছবি আঁকেন। তাঁর এই নীরবতা এই ধরনের ছোট ছোট ঢেউকে টর্নেডোয় পরিণত করবে।’’ অনেকেই বলছেন, অনুব্রত তো আগেও কম বলেননি। রাস্তায় উন্নয়ন দাঁড়িয়ে থাকবে বলে তিনি যখন বিরোধীদের প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়েছিলেন, সে সময় তাঁকে থামালে হয়তোপরিস্থিতি আজকের জায়গায় আসতই না।
এ প্রসঙ্গে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন অভিনেতা কৌশিক সেন। তাঁর বক্তব্য,‘‘সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় শঙ্খবাবু যখন রাস্তায় হেঁটেছিলেন, সে সময় বিমান বসু তাঁর বাড়ি তাঁকে বোঝাতে গিয়েছিলেন। তবে তখনও প্রকাশ্যে এ ভাবে কিছু বলা হয়নি। এটা কিন্তু তৃণমূলের আমলেই হচ্ছে।’’ তাঁর সাফ কথা, ‘‘অনুব্রত মণ্ডলরা হলেন দলের মুখ। এখন যদি তৃণমূল নেতৃত্ব বলেন, এটা ওঁর ব্যক্তিগত মত, তাহলেও কিন্তু অনুব্রতকে আর আলাদা করে রাখা যাবে না।’’ তবে এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাইছেন না সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। তাঁর সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, ‘‘এটা রাজনৈতিক চাপানউতোর। আমি যেহেতু রাজনীতি করিনা, তাই এ নিয়ে মন্তব্য করতে পারছি না।’’
প্রশ্ন উঠেছেবীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের প্রজ্ঞা নিয়েও। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বড় বড় কথা বলছেন কবি? এ কোন কবি? আমরা তো কবি বলতে জানতাম রবীন্দ্রনাথ, নজরুল। এ কোন নতুন কবি উঠে এসেছেন, যে আমার উন্নয়ন নিয়ে কথা বলছেন।’’ শঙ্খ ঘোযের সম্পর্কে কী করে এমন কথা বললেন অনুব্রত? কবি জয় গোস্বামীর বক্তব্য, ‘‘পঞ্চাশের দশক থেকে অপ্রতিহত গতিতে কবিতা লিখছেন শঙ্খ ঘোষ। তিনি আকাদেমি পুরস্কার পেয়েছেন। জ্ঞানপীঠ পেয়েছেন। এ রকম একজন সম্পর্কে যদি কেউ এ কথা বলেন, তবে কবিতা সম্পর্কে তাঁর কোনও বক্তব্যে মাথা না ঘামানোই ভাল। তাঁর কোনও কথাকে গুরুত্ব দেওয়াই উচিত নয়।’’
আরও পড়ুন: কবি তো জানি রবীন্দ্রনাথ-নজরুল, এ আবার নতুন কোন কবি: কেষ্ট
আরও পড়ুন: জিতেও বোর্ড গড়া যাবে কি? বিনাযুদ্ধের ৩৪% ঘিরে সংশয়
নাট্যব্যক্তিত্ব সুমন মুখোপাধ্যায় অবশ্য অনুব্রতর কথায় খুব একটা বিস্মিত নন। তাঁর কথায়, ‘‘বাংলা যে ভাবে এগোচ্ছে, তাতে এটাই স্বাভাবিক। সংস্কৃতির নামে যেটা চলছে, তাতে এটাই স্বাভাবিক।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘প্রিয় কবির কটুক্তির প্রতিবাদে বাঙালি কি এবার রাস্তায় নামবে?’’
কিন্তু এরপর? অনুব্রতর মতো নেতাদের মুখ বন্ধ করাতে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে? খুব একটা আশাবাদী নয় সুশীল সমাজ। রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত বলছেন, অনুব্রতর মস্তিষ্কে অক্সিজেন কম যাওয়ার কথা বলে অনেক গুরুতর বিষয লঘু করে দেওয়া হচ্ছে। আর কৌশিক সেনের আশঙ্কা, আলোচনা হবে। সভা-টভা চলতেই থাকবে। কিন্তু এ ধরনের ঘটনাও ঘটতেই থাকবে।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy