Advertisement
E-Paper

আদিবাসী মঞ্চই মাথাব্যথা শাসকের

বিতর্ক, অশান্তির ইতিবৃত্ত, দৈনন্দিন জীবনে রাজনীতির টানাপড়েন— বিভিন্ন এলাকার ভোটচিত্রের তথ্যতালাশবাঁশপাহাড়ি পঞ্চায়েতের কাঁকড়াঝোরে আবার ভোটের কোনও লিখনই নেই। তবে রাস্তার ধারে উড়ছে আদিবাসী ভূমিজ সংগঠনের হলুদ-সাদা পতাকা।

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৮ ০৪:০৬

একদা মাওবাদী প্রভাবিত গ্রাম ভুলাভেদা পঞ্চায়েতের মাজুগোড়া। গ্রামের মাওবাদী দম্পতি গুরাই ও মালতী সর্দার আত্মসমর্পণ করে সরকারি চাকরি করছেন। অথচ পঞ্চায়েত ভোটের দু’দিন আগেও গ্রামের নিকোনো দেওয়ালে শাসকদলের প্রচার নেই। উজ্জ্বল শুধু নির্দল প্রার্থীর নাম।

বাঁশপাহাড়ি পঞ্চায়েতের কাঁকড়াঝোরে আবার ভোটের কোনও লিখনই নেই। তবে রাস্তার ধারে উড়ছে আদিবাসী ভূমিজ সংগঠনের হলুদ-সাদা পতাকা। দাওয়ায় বসে স্থানীয় রামচন্দ্র সিংহ সাফ বললেন, “দেওয়াল লিখনের প্রয়োজন নেই। ভোটে কাকে সমর্থন করা হবে, তা সমাজ ঠিক করে দিয়েছে।”

ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি ব্লক জুড়ে এমনই ছবি। সাঁওতাল, মুন্ডা, ভূমিজ, শবরদের মতো বিভিন্ন জনজাতির মানুষ একজোট হয়ে গড়েছেন ‘আদিম আদিবাসী সমন্বয় মঞ্চ’। নির্দল হিসেবে লড়ছেন মঞ্চের প্রার্থীরা। বাম-বিজেপি-কংগ্রেস নয়, আদিবাসী জোটের প্রার্থীরাই এ বার বেলপাহাড়ির বনতলে শাসকের মাথাব্যথা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও শুক্রবার একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘বেলপাহাড়ির কিছু জায়গায় আমাদেরও মনোনয়ন দিতে দেওয়া হয়নি। বাঁশপাহাড়ির মতো অনেক জায়গা আছে, যেখানে তৃণমূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেনি।’’

বেলপাহাড়ি ব্লকের ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতে মোট আসন ১২৮। সেখানে নির্দল প্রার্থী রয়েছেন ১৩২ জন। বেশির ভাগই মঞ্চের প্রার্থী। জগমোহন মান্ডি, অজিত সিংহ, শিখা সিংহরা জানাচ্ছেন ‘সমাজের ডাকে’ তাঁরা মঞ্চের প্রার্থী হয়েছেন। প্রার্থীরা দোরে দোরে ঘুরছেন না। সমাজের মুরুব্বিরা গ্রামে গ্রামে বৈঠক করে বার্তা দিচ্ছেন— গত পাঁচ বছরে পঞ্চায়েতে প্রচুর দুর্নীতি ও স্বজনপোষণ হয়েছে। তাই এ বার ‘পাল্টে দিন’। মঞ্চের তরফে কাঁকড়াঝোরের গৌরাঙ্গ সিংহ বলেন, “এলাকায় অনেক খুন-সন্ত্রাস হয়েছে। তার ফায়দা তুলেছে অন্যেরা। আমরা আরও গরিব হয়েছি। তাই কাউকেই ভরসা করি না।” বিজেপির ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি সুখময় শতপথী, কংগ্রেসের জেলা সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্যদের মতে, “তৃণমূলের সরকারও প্রকৃত উন্নয়ন করেনি। তাই প্রান্তবাসীরা রাজনীতি থেকে মুখ ফেরাচ্ছেন।”

ঝকঝকে রাস্তা, দু’টাকার চাল, সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ— পরিবর্তনের জঙ্গলমহলে প্রচুর উন্নয়ন হয়েছে বলেই দাবি তৃণমূলের। তাও কেন বেসুরো বাজছে বেলপাহাড়ির গ্রামগুলো? শিমুলপালের রঘু মান্ডি, বাঁশপাহাড়ির তুলসী সর্দার, ভুলাভেদার বাচ্চু সিংহের মতো আমজনতা বলছেন, “দয়ার দু’টাকার চাল নয়, হকের পরিষেবা, আত্মমর্যাদা চাই।” সরকারি কাজে দুর্নীতির অভিযোগও করছেন তাঁরা। এই ক্ষোভের সঙ্গে যুঝতে উন্নয়নেই ভরসা রাখছে তৃণমূল। দলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলছেন, ‘‘ভোটারদের বলছি জঙ্গলমহলের উন্নয়নের কর্মকাণ্ড দেখে ঘাসফুলের প্রার্থীদের ভোট দিন।”

(চলবে)

West Bengal Panchayat Elections 2018 Tribal Areas Election Campaign
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy