পঞ্চায়েত ভোটে চার রাজনৈতিক দলের ভোট শতাংশের হিসেব মিলেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রে। কিন্তু নির্দলের ভোট শতাংশের কোনও হিসেব পাওয়া যায়নি। কমিশনের এ হেন আচরণে রাজনৈতিক অভিসন্ধিই দেখছেন বিরোধীরা। তাঁদের মতে, শাসক দলকে ‘আড়াল’ করতেই কমিশন নির্দলদের ভোট শতাংশের নির্দিষ্ট কোনও হিসেব দেয়নি। শাসক তৃণমূলের পাল্টা দাবি, এ ভাবে প্রাপ্ত ভোট আড়াল করা যায় না। যারা বলছে, তাদের এটা বোঝা উচিত।
কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, গ্রাম পঞ্চায়েতে ৪২.৪৪ শতাংশ ভোট পেয়েছে তৃণমূল। বিজেপি, সিপিএম এবং কংগ্রেসের মোট ভোট ২৮.৫৬ শতাংশ। বাকি থাকছে ২৯% ভোট। সেই ভোটের সিংহভাগই নির্দলদের ঝুলিতে পড়েছে বলে মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের। কারণ, আসনের নিরিখে তৃতীয় স্থানে নির্দলেরা। তাঁদের ঝুলিতে ১৮৫৩টি আসন। আর চতুর্থ স্থানে থেকে ১৭১৪টি আসন বামফ্রন্টের। পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষেত্রে শাসক দল পেয়েছে ৪৪.২৯ শতাংশ ভোট। আসন পেয়েছে ৪৯৭২টি। এই স্তরে কংগ্রেস ৩.৬১ শতাংশ ভোট পেলেও আসনের নিরিখে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। ১৩৩টি আসনে জিতেছে তারা। বামফ্রন্ট পেয়েছে ১৩০টি। আর ১১২টি আসনে জিতেছেন নির্দলেরা। কমিশন যতটুকু তথ্য দিয়েছে, তার ভিত্তিতে অনুমান করা যায়, তৃণমূল, বিজেপি, সিপিএম এবং কংগ্রেস বাদে পঞ্চায়েত সমিতির স্তরে প্রায় ২৫% ভোট পেয়েছেন নির্দল-সহ অন্যরা।
গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতির থেকে জেলা পরিষদে তৃণমূলের ভোট শতাংশ অনেকটাই বেশি। ৫৬.০১ শতাংশ ভোট পেয়ে ৫৯০টি আসনে জিতেছে শাসক দল। ৩.৬৪% ভোট পেয়ে জেলা পরিষদে ৬টি আসনে কংগ্রেসের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। অথচ ১০.০৩ শতাংশ ভোট পেলেও একটি আসনও দখল করতে পারেনি সিপিএম। কোচবিহার এবং হাওড়া জেলা পরিষদে একটি করে আসনে জিতেছেন নির্দলেরা।
গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে নির্দলই তৃণমূলের বড় ‘মাথাব্যথা’ ছিল। সেই নির্দলের মধ্যে বড় অংশই ছিল বিক্ষুব্ধ তৃণমূল। ভোটের দিনেও শাসককে ‘প্রতিরোধে’র মুখে ফেলেছিলেন নির্দলেরা। তাদের ভোট শতাংশের হিসেব কমিশন সরাসরি না দেওয়ায় তৃণমূলের নিচুতলার ধসকে খানিকটা আড়াল করা গেল বলেই দাবি বিরোধীদের। সিপিএমের পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘যাতে তৃণমূলের ভোট পরে বাড়িয়ে দেওয়া যায়, সেই কৌশলেই এখন নির্দলদের হিসেব দেখানো হল না। এটা এক অদ্ভূত ব্যবস্থা।’’ বিজেপি নেতা রাহুল সিংগের মতে, তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব আড়াল করতেই এই কৌশল।
আরও পড়ুন: এত গেরুয়া কেন, খোঁজ শুরু বক্সীর
বিরোধীদের এই সব অভিযোগ নস্যাৎ করে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রাপ্ত ভোটের হিসেব চাইলেই কেউ অদলবদল করতে পারে না। আমরাও দলীয় ভাবে ভোট শতাংশের হিসেব করছি এবং তা জানিয়ে দেব।’’
বিরোধী দলগুলির অভিযোগ ‘অর্থহীন’ বলছে কমিশনও। তাদের মতে, সবটা এখনও করা হয়নি। এর পিছনে অন্য কোনও কারণ নেই। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটের ফল এখনও কমিশনের ওয়েবসাইটে না থাকার প্রসঙ্গই উঠে আসছে কমিশনের অন্দরের চর্চায়। আজ, বুধবার তিনটি স্তরে আসনের পূর্ণাঙ্গ তথ্য কমিশনের ওয়েবসাইটে পাওয়া যেতে পারে।
উল্লেখ্য, বিনা লড়াইয়ে ৩৪ শতাংশ আসনে ফয়সালা হলেও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তাতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যে ৬৬ শতাংশ আসনে ভোট পেয়েছিল, তার নিরিখেই তথ্য দিয়েছে কমিশন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy