Advertisement
০৫ মে ২০২৪

স্বামীকে ছক কষেই খুন, দাবি শাসনে নিহত তৃণমূল নেতার স্ত্রীর

স্বামীকে ছক কষে খুন করেছে দলের লোকেরাই— রাখঢাক না রেখে এই অভিযোগ তুললেন শাসনের নিহত তৃণমূল নেতা সইফার রহমানের স্ত্রী রূপজান।

সইফার-কন্যা। ছবি: সুদীপ ঘোষ

সইফার-কন্যা। ছবি: সুদীপ ঘোষ

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৮ ০৪:৪২
Share: Save:

স্বামীকে ছক কষে খুন করেছে দলের লোকেরাই— রাখঢাক না রেখে এই অভিযোগ তুললেন শাসনের নিহত তৃণমূল নেতা সইফার রহমানের স্ত্রী রূপজান।

কেন এমন ধারণা হল তাঁর?

বুধবার ফলতি-বেলিয়াঘাটায় তৃণমূলের বিজয় মিছিলে ছিলেন রূপজানও। তিনি জানান, দলের কিছু ছেলে পার্টি অফিস থেকে সইফারকে ডেকে আবির মাখায়। ফুলের মালা পরায়। তাঁকে নিয়ে নাচানাচি শুরু করে। তিনি বলেন, ‘‘যারা স্বামীকে ডেকে মিছিলের সামনের সারিতে হাঁটতে বলল, মোবাইলে ছবি তুলল, তারাই ঘিরে ছিল ওঁকে। আমি একটু এগিয়ে গিয়েছিলাম। হঠাৎ জোরে মাইক বাজানো শুরু হল। বাজিও ফাটতে শুরু করল। এর মাঝেই শুনতে পাই, ‘খুন খুন’ বলে চিৎকার।’’ রূপজান পুলিশকে জানিয়েছেন, এই সময় তিনি এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সইফারকে ঘিরে যে ভিড়টা কিছুক্ষণ ধরে জমেছিল, তারা রূপজানকে ধারেকাছে ঘেঁষতে দেয়নি। রূপজান বলেন, ‘‘হঠাৎ দেখি, উনি মাটিতে পড়ে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে শরীর। এতক্ষণ যারা ঘিরে রেখেছিল ওঁকে, তারাই একটা লোককে পেটাচ্ছে।’’ রূপজানের দাবি, ‘‘আমার ধারণা, যারা ওই লোকটাকে ছুরি চালাতে বলেছিল, তারাই স্বামীকে ঘিরে রেখেছিল। আমাকেও কাছে ঘেঁষতে দেয়নি। আবার ওরাই পিটিয়ে মেরেছে আততায়ীকে। সকলেই আমাদের দলের লোক।’’

সইফারকে খুনের অভিযোগে যাকে পিটিয়ে মেরেছে জনতা, সেই তৃণমূল কর্মী রজব আলির দুই স্ত্রী মুসলিমা বিবি ও তাজমিরাও মনে করছেন, তাঁদের স্বামীকে ‘কাজে লাগিয়েছে’ দলের কিছু লোক। তাঁরা জানান, সকালের দিকে রজবকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় দলের কিছু ছেলে। মদ খাওয়ায়। তার পরেই ঘটে ওই কাণ্ড। রজব মাংসের ব্যবসা করত। বাড়ি ফলতি-বেলিয়াঘাটা এলাকায়। তার নামে আগে দুষ্কর্মের কোনও অভিযোগ নেই। মুসলিমা, তাজমিরাদের দাবি, সইফারের সঙ্গে কোনও শত্রুতাও ছিল না রজবের। নিজের মাংস কাটার ছুরি দিয়েই রজব হামলা চালিয়েছে বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। তদন্তে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে পুলিশ জানিয়েছে, কারও নামে অভিযোগ দায়ের করেননি কেউ।

দলীয় কোন্দলের জেরেই যে খুন হলেন সইফার, সে কথা আর ধামাচাপা দেওয়া যাচ্ছে না— এ কথা বিলক্ষণ টের পাচ্ছেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। এ ব্যাপারে দলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘সইফারের স্ত্রী এ ধরনের অভিযোগ আমাদের কাছে করেননি। আর ওঁকে খুনের পরে জনতাই রজবকে পিটিয়ে মেরেছে।’’ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি স্থানীয় সাংসদ ইদ্রিশ আলিও।

রজব আলির স্ত্রী তাজমিরা ও মুসলিমা বিবি। —নিজস্ব চিত্র।

বৃহস্পতিবার জ্যোতিপ্রিয়বাবু গিয়েছিলেন শাসনের সোনাটিকারি গ্রামে, সইফারের বাড়িতে। তাঁর দুই সন্তানের পড়াশোনার দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলেছেন। রূপজানকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।

আরও পড়ুন:

সন্ত্রাসে ‘লাভ’ হয় না, এটাই অতীতের শিক্ষা

কিন্তু দলের কিছু লোকের বিরাগভাজন কেন হলেন সইফার?

স্থানীয় সূত্রের খবর, নিজের মন মতো প্রার্থী দাঁড় করিয়েছিলেন তিনি। ১৯টি আসনের ১৬টিতে অন্য কোনও দলের প্রার্থীকে দাঁড়াতেই দেননি বলে অভিযোগ। মাত্র ৩টিতে মনোনয়ন দিয়েছে নির্দল। তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এলাকায় মাটি, ইটভাটা, মেছোভেড়ির কারবারও সামলাতেন সইফার। এই সব নিয়ে তৃণমূলের অন্য গোষ্ঠীর সঙ্গে বিবাদ ছিল তাঁর। মাঝখান থেকে ‘বোড়ে’ হয়ে গেল রজব— বলছেন মুসলিমা, তাজমিরারা। তাঁদের কথায়, ‘‘যারা ওঁকে দিয়ে খুনটা করালো, তারাই প্রমাণ লোপাটের জন্য স্বামীকে পিটিয়ে মেরেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE