Advertisement
E-Paper

যক্ষ্মা নিবারণে রুগ্ণ সমিতিই

বিধানচন্দ্র রায়ের হাতে প্রতিষ্ঠিত জনসেবামূলক এই প্রতিষ্ঠানের এখন দৈন্যদশা। সিআইটি রোডে চার তলা প্রকাণ্ড বাড়িতে ধুলো জমছে একের পর এক যন্ত্রে।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৩৯

যক্ষ্মা রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে লড়াই জারি। কিন্তু ধুঁকছে বঙ্গীয় যক্ষ্মা নিবারণী সমিতিই!

বিধানচন্দ্র রায়ের হাতে প্রতিষ্ঠিত জনসেবামূলক এই প্রতিষ্ঠানের এখন দৈন্যদশা। সিআইটি রোডে চার তলা প্রকাণ্ড বাড়িতে ধুলো জমছে একের পর এক যন্ত্রে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বন্দি পড়ে রয়েছে ‘মেজিট’ মেশিন। প্রতিষ্ঠানের ল্যাব হোক বা গবেষণামূলক চিকিৎসার জন্য ওয়ার্ড, সবই এখন তালাবন্দি। কর্মীর সংখ্যা কমতে কমতে এসে ঠেকেছে মাত্র ১০ জনে। তাঁদেরও বেতন বন্ধ মাসদুয়েক।

যক্ষ্মা নিবারণী সমিতিতে (বিটিএ) সপ্তাহে পাঁচ দিন এখনও ওপিডি বসে। ‘ডট্স’-এর আওতায় কলকাতা পুরসভার কয়েকটি ওয়ার্ডের চিকিৎসার ব্যবস্থা হয় ওখানেই। যক্ষ্মার চিকিৎসার একটি ওষুধও যায় ওখান থেকে। কিন্তু তাঁদের ভগ্নস্বাস্থ্যের চিকিৎসা কে করবে, উদ্বেগে আছেন কর্মীরা!

পুরনো বিধি অনুযায়ী, বিটিএ-র প্রেসি়ডেন্ট হন রাজ্যপাল এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট মুখ্যমন্ত্রী। তাঁদের মাথায় রেখে ৪০ জনের কমিটি থাকে। কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, অন্তত আড়াই দশক এজিএম হয়নি। নিজেদের মতো হাত বদল করে নিয়ে চলছে কমিটি। তার শীর্ষকর্তাদের একাংশের অবিমৃষ্যকারিতার ফলেই জমানো টাকা নয়ছয় হয়ে এখন রক্তশূন্য হয়ে গিয়েছে প্রতিষ্ঠান। দান করা সম্পত্তির উপরে যে প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল, বেসরকারি সংস্থাকে লিজ দিয়ে সেখানেই এখন ব্যবসা চালানোর চেষ্টা হচ্ছে। জনসেবার প্রতিষ্ঠানে এমন ব্যবসায়িক মতলবের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে তাঁরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন বলে কর্মীদের একাংশের অভিযোগ।

অনিয়মের অভিযোগ জানিয়ে রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন বিটিএ-র কর্মীদের একাংশ। রাজভবনের হস্তক্ষেপে স্বাস্থ্য ভবন তদন্তের নির্দেশও দিয়েছিল। যদিও সেই তদন্তের রিপোর্ট আর প্রকাশ্যে আসেনি। তথ্যের অধিকার আইনে আর্জি জানিয়েও জবাব মেলেনি। রাজ্যপালকে চিঠি দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য। বিটিএ-র কাজ সম্পর্কে অবহিত রাজ্যের প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্রও। তিনি বলছেন, ‘‘হৈমী বসু, মণীশ প্রধানেরা ওই প্রতিষ্ঠান চালাতেন। আমাদের সঙ্গে রাজনৈতিক পার্থক্য থাকলেও ওখানে ভাল কাজ হতো। বাম সরকার কিছু যন্ত্রপাতি দিয়ে সাহায্য করেছিল। এখন শুনছি ভূতের রাজত্ব চলছে আরও অনেক জায়গার মতো!’’ আর বর্তমান স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘বিষয়টা আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব।’’

বিটিএ-র সাম্মানিক সেক্রেটারি জেনারেল রঞ্জনকুমার দাস ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ডোনেশন বা অন্যান্য সূত্রে আয়ের পথ শুকিয়ে এসেছে। স্থায়ী আমানতের উপরে সুদের হার কমে গিয়ে সঙ্কট বেড়েছে আরও। রঞ্জনবাবুর কথায়, ‘‘স্থায়ী আমানত থেকে যত দিন পেরেছি, বেতন দিয়েছি। এখন অনেক ডায়গনিস্টিক সেন্টার যেমন পিপিপি মডেলে চলছে, সেই পথে গেলে বিটিএ-ও সঙ্কট থেকে বেরোতে পারে। উৎসাহী সংস্থাও আছে। আমরা রাজ্যপালের অনুমোদন চাইছি।’’ তিনি জানাচ্ছেন, কয়েক বছরের বকেয়া অডিট শেষ হলে বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়ার পথ খুলবে।

বিপ্লব বিশ্বাস, তানিয়া বসু, সুকুমার জানা, কার্তিক পালের মতো কর্মীরা অবশ্য বলছেন, ‘‘বেসরকারি চিকিৎসার জায়গা তো অনেক আছে। বিটিএ জনসেবার জন্য। মুখ্যমন্ত্রী নজর দিলে প্রতিষ্ঠানটা বেঁচে যাবে।’’

Tuberculosis BTA infrastructure
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy