ভবানীপুরের গণনায় দিনভর নোটার সঙ্গে লড়ল সিপিএম গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
বিধানসভা নির্বাচনে সংযুক্ত মোর্চা গড়ে শূন্য হাতেই ফিরেছিল সিপিএম। মোর্চা ভেঙে ভবানীপুর উপনির্বাচনে অংশ নিলেও মূল লড়াইয়েই রইল না সিপিএম। যেটুকু লড়াই হয়েছে, তা নোটার সঙ্গে। তবে সেই যুদ্ধে যে জয় মিলেছে, সেটাই সান্ত্বনা সিপিএম প্রার্থী শ্রীজীব বিশ্বাসের। রবিবার ফল ঘোষণার ঘণ্টা খানেক আগেই তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ কটাক্ষের সুরে টুইটারে লেখেন, ‘প্রার্থী শ্রীজীব। পার্টি নির্জীব।’
ভবানীপুর কিংবা মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর ও শমসেরগঞ্জে খাতা খোলার আশাও ছিল না বামেদের। ‘‘আমরা ২৩৫, ওরা ৩০।’’ বছর ১৫ আগে এমনটা বলেছিলেন বাম মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কিন্তু বর্তমান বিধানসভায় তাঁদের হয়ে ‘আমরা’ বলার কেউ নেই। রবিবারের ফল ঘোষণার পরে দেখা গেল এখনও পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা ভবনে ‘আমি বাম’ বলার মতো কেউ নেই। স্বাধীন ভারতে প্রথমবার।
ভবানীপুরে সিপিএম জিতবে এমন আশা না করলেও কোন জায়গায় থাকবে, তা নিয়ে আশঙ্কা ছিল আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের। তবে শেষ পর্যন্ত তৃতীয় হয়ে মুখ রক্ষা হয়েছে। তবে জমানত রক্ষা করতে পারেননি শ্রীজীব। প্রথম রাউন্ডের গণনা থেকেই সিপিএম বনাম নোটা লড়াই দেখা যায়। শুরুতে ৮৫-২৭-এ এগিয়ে থাকে সিপিএম। দ্বিতীয় রাউন্ডে ফারাক কমে হয় ৪৭-৪২। পঞ্চম রাউন্ডে সিপিএম-এর দ্বিগুণ ভোট পায় নোটা। ২৮ ও ৫৬। তবে এর পরে নোটার থেকে দূরত্ব বাড়াতে থাকেন শ্রীজীব। শেষ পর্যন্ত সিপিএম পেয়েছে ৪,২২৬ ভোট। আর নোটা ১,৪৫৩ ভোট। ব্যবধান ২,৭৭৩। সর্বশেষ যে হিসেব পাওয়া গিয়েছে, তাতে প্রথম স্থানে থাকা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পেয়েছেন ৮৫,২৬৩ ভোট। দ্বিতীয় বিজেপি-র প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়াল ২৬,৪২৮ ভোট।
এত কম ভোট পাওয়ার কথা কি ভাবতেই পারেনি সিপিএম? প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত কি ঠিক ছিল? দলের নেতা রবীন দেব বলেন, ‘‘সবে মাত্র বিধানসভা নির্বাচনে বিপর্যয় হয়েছে। এই অল্প সময়ে বিপর্যয় সামলানো যায় না। তবে এত খারাপ ফল হবে সেটা আমরা প্রত্যাশা করিনি। মুখ্যমন্ত্রীর ভোটে মুখ্যসচিব, পুলিশ-প্রশাসন যে নির্লজ্জ ভাবে নেমেছিল তা আমাদের ভাবনায় ছিল না। আর তৃণমূলের ভ্রান্ত নীতির বিরুদ্ধেই তো আমাদের লড়াই। সেই প্রতিবাদটা বোঝাতেই তো আমরা প্রার্থী দিয়েছিলাম।’’ সিপিএমের এমন হার নিয়ে কংগ্রেসের প্রাক্তন প্রদেশ সভাপতি তথা সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সিপিএম-এর ফল এত খারাপ হবে আমরাও ভাবিনি। তবে আমরা প্রার্থী দিলে হয় তো এর চেয়ে বেশি ভোট পেতাম। শমশেরগঞ্জে, কংগ্রেস ও সিপিএম দুই দলেরই প্রার্থী ছিল। আমরা ৩০ হাজারেরও বেশি ভোট পেয়েছি, সেখানে সিপিএম পেয়েছে হাজার ছয়েক ভোট। এটাই প্রমাণ যে, আমরা এখনও রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক।’’
শেষ লোকসভা নির্বাচনের নিরিখেও মুর্শিদাবাদকে কংগ্রেসের শেষ ‘গড়’ বলা যায়। প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরীর সেই জেলায় রবিবার কংগ্রেসের হাত শূন্যই রইল। ভোট গণনার শেষে সেখানেও বামেরা সে ভাবে হিসেবের মধ্যে নেই। শমসেরগঞ্জে সিপিএম পেয়েছে ৩.২৭ শতাংশ ভোট আর জঙ্গিপুরে আরএসপি প্রার্থী পেয়েছেন ৪.৫৪ শতাংশ। জমানত বাঁচেনি কোথাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy