Advertisement
১৯ মে ২০২৪

বিধানসভায় ইঁদুরের দাঁতে বিপর্যস্ত শাসক-বিরোধী

বলিউডে নানা পটেকর বলেছিলেন, ‘এক মচ্ছড় আদমি কো হিজড়া বানা দেতা হ্যায়’! সে অবশ্য রুপোলি পর্দায়। বিধানসভার ঘোর বাস্তব বলছে, সামান্য এক ইঁদুর শাসক-বিরোধীর ফারাক ছিঁড়ে ফেলছে দাঁতের জোরে!

সন্দীপন চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:২৮
Share: Save:

বলিউডে নানা পটেকর বলেছিলেন, ‘এক মচ্ছড় আদমি কো হিজড়া বানা দেতা হ্যায়’!

সে অবশ্য রুপোলি পর্দায়। বিধানসভার ঘোর বাস্তব বলছে, সামান্য এক ইঁদুর শাসক-বিরোধীর ফারাক ছিঁড়ে ফেলছে দাঁতের জোরে!

‘সামান্য এক ইঁদুর’ নেহাতই আক্ষরিক অর্থে ধরলে যদিও ভুল হবে। আসলে ইঁদুর বাহিনী!
যারা বিধানসভার এক মুলুকে সুড়ঙ্গ করে ঢুকে অন্য মুলুকে বেরিয়ে নথিপত্র ছিঁড়ে একশা করতে পারে। যারা সন্ধ্যার পরে বিধানসভার ফটক বন্ধ হয়ে আলো নিভলেই মহোৎসবে মাতে! বিধায়কদের নানা ঘরের মেঝেতে, কার্পেটের ফাঁকে থেকে যাওয়া খাবারের উচ্ছিষ্ট যাদের মহোৎসবের রসদ।

এই ইঁদুর বাহিনীর আক্রমণেই এ বার বেসামাল শাসক ও বিরোধী শিবিরের দুই নেতা। এমনিতেই দল বদল ঘিরে তাঁরা ইদানীং যুযুধান! কিন্তু ইঁদুর বাহিনী তাঁদের এনে ফেলেছে অসহায়তার এক বিন্দুতে! বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান ও পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএসি) চেয়ারম্যান মানস ভুঁইয়ার সরকারি গাড়িতে দাঁত বসিয়েছে তারা। মান্নানের গাড়ির ড্যাশবোর্ডে থাকা তেল ভরার কুপন ছিঁড়ে কুটিকুটি। নাকের ড্রপের প্লাস্টিকের শিশিও দাঁতের ধারে চৌচির! চালকেরা প্রমাদ গুনছেন, রাতে বিধানসভার গ্যারাজে রাখা গাড়ির তার-টার ইঁদুর বাহিনী কেটে রাখলে রাস্তাঘাটে তাঁরা বিপদে না পড়েন!

মান্নান ও মানসবাবুকে গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে দু’টি গাড়িই রাতে ফিরে আসে বিধানসভায়। তাই তাঁদের গাড়িতেই হামলা হয়েছে বেশি। অন্য মন্ত্রীদের গাড়ি বিধানসভায় থাকে না বলে তাঁরা আপাতত এমন আক্রমণ থেকে রেহাই পেয়েছেন। ঘরে অবশ্য হামলা আছে যথেষ্ট। বিধানসভার এক গাড়ি-চালক বলছেন, ‘‘গ্যারেজ এবং ঝোপঝাড় থেকে দূরে কোথাও গাড়ি রেখে দেখতে হবে একটু বাঁচা যায় কি না!’’ আর বিধানসভার এক কর্মীর মন্তব্য, ‘‘কয়েক প্রজন্ম কাটিয়েছে এই ইঁদুরেরা। সরকার বদলেছে, বারবার চেষ্টা হয়েছে। ওদের নড়ানো যায়নি!’’

মেনে নিচ্ছেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তাঁর সহাস্য মন্তব্য, ‘‘পৃথিবীর কোথায় ইঁদুর নেই? উৎপাতের খবর পেয়ে মাঝেমধ্যেই কেয়ারটেকারদের ডেকে বলছি, ইঁদুর সরানোর ব্যবস্থা করতে। তবে অধিবেশন চললে সেটা করা যায় না। কোথায় কখন ইঁদুর মরে-পচে পড়ে থাকবে! অধিবেশনে অসুবিধা হবে।’’ স্পিকারের বক্তব্য, অধিবেশন বাদ দিয়ে ছুটির দিন দেখে ইঁদুর নিধনের চেষ্টা হয়। তবে তাতে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়, এমন নয়।

স্পিকারকে সমর্থন করেই মানসবাবু বলছেন, ‘‘বিধানসভায় তো খরগোশের সাইজের ইঁদুর! এদের সামলাতে না পারলে মূল্যবান নথিপত্র নষ্ট হবে। শুনেছি, স্পিকার চেষ্টা করছেন কিছু ব্যবস্থা করার।’’ রাজনীতিতে মানসবাবুর বিপরীত বিন্দুতে থেকেও মান্নান বলছেন, ‘‘সরকারের সঙ্গে যুদ্ধে আছি। ইঁদুর বাহিনীর সঙ্গে কী করে যুদ্ধ করব? ওরা তো সরকারের সেনাবাহিনীও নয়! সকলের ঘরে আছে।’’

শাসক-বিরোধীর তফাত ছিন্নভিন্ন ইঁদুরের দাঁতে! যদ্দিন না হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালার খোঁজ মিলছে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rat Bidhan Sabha Bhaban
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE