Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Bikaner–Guwahati Express

Bikaner-Guwahati Express Derailment: পুঁজি গিয়েছে দুর্ঘটনায়, তবু হাতে হাত ওঁরা

এস-১৩ কামরায় ছিলেন বাইশ বছরের পিঙ্কি। সঙ্গে ছিল পরিবার। কয়েকটি কামরা পরে ছিলেন রবিচাঁদ অধিকারী এবং তাঁর পরিবার।

রবিচাঁদ অধিকারী

রবিচাঁদ অধিকারী

অনির্বাণ রায়
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২২ ০৮:১০
Share: Save:

দুর্ঘটনা পুঁজি কেড়েছে, প্রেম কাড়তে পারেনি।

বিকানের এক্সপ্রেসের ছিটকে পড়া তেরো নম্বর কামরাটি তিন দিনে ধীরে ধীরে অনেকটিই গেঁথে গিয়েছে মাটিতে। কামরার সামনে দাঁড়িয়ে উসকো খুসকো চুল, কোটরে ঢুকে পড়া দু’টি চোখের এক যুবক। কামরার ভিতরে তাঁর ব্যাগ রয়ে গিয়েছে। সেই ব্যাগে ভর্তি লাখ খানেক টাকা। কয়েক দিন পরেই তাঁর বিয়ে। তাই সব সঞ্চয় তুলে নিয়ে কাজের জায়গা থেকে ফিরছিলেন। সেই ব্যাগ কি উদ্ধার করা যাবে, শনিবার দুপুরে দোমোহনীতে দাঁড়িয়ে ভাবছিলেন তিনি। একটু আগেই হাসপাতাল থেকে ফিরেছেন। দু’রাত ঘুম হয়নি। হাসপাতালের বারান্দায় বড্ড মশা। তাঁর গায়ে চোট-আঘাত নেই বলে হাসপাতালের ঘরে শয্যায় শুতে দেয়নি। শুধুমাত্র প্রেমিকা তথা হবু স্ত্রী হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, প্রেমিকাকে একা ফেলে বাড়ি ফিরতে পারেনি যুবক প্রেমিক। রাত কাটিয়েছেন হাসপাতালের বারান্দাতেই।

এস-১৩ কামরায় ছিলেন বাইশ বছরের পিঙ্কি। সঙ্গে ছিল পরিবার। কয়েকটি কামরা পরে ছিলেন রবিচাঁদ অধিকারী এবং তাঁর পরিবার। সকলেরই বাড়ি কোচবিহার জেলায়। সকলেই রাজস্থানে নানা কাজ করেন। পরিযায়ী শ্রমিক। পিঙ্কি-রবিচাঁদের বিয়ের জন্যই সকলে বাড়ি ফিরছিলেন। আলাদা কামরায় থাকলেও রবিচাঁদ মাঝেমধ্যে প্রেমিকা তথা হবু স্ত্রীকে দেখতে ১৩ নম্বর কামরায় আসছিলেন। দুর্ঘটনার সময়ও রবিচাঁদ সেই কামরাতেই ছিলেন। পড়ে যাওয়া কামরা থেকে তিনি সু্স্থ ভাবে বের হতে পারলেও পিঙ্কির মাথা ফেটে যায়। পিঙ্কির সঙ্গে রবিও হাসপাতালে যান। রবি বলেন, “আমার মা-বাবারও চোট লাগেনি। রাতের দিকে মা-বাবাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে আমি হাসপাতালে থেকে যাই।”

হাসপাতালের কর্মীরা বলছেন, বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার, প্রায় পুরো সময়টাই পিঙ্কির জন্য তিনি হাসপাতালে ছিলেন। রাতে মহিলা ওয়ার্ডে থাকা যায় না বলে হাসপাতালের বারান্দায় গিয়ে শুয়েছেন। রবির ব্যাগে ভরা লক্ষাধিক টাকার খোঁজেও দুর্ঘটনাস্থলে গত দু’দিন আসেননি। শনিবার এলেন প্রেমিকাকে সঙ্গে নিয়েই। তার পরেই শুরু হল নতুন করে খোঁজ।

শুধু রবির লক্ষাধিক টাকার ব্যাগই নয়, পিঙ্কির অল্প কিছু গয়না ভর্তি একটি ব্যাগও দুর্ঘটনার দিন থেকে নিখোঁজ। এ দিন দু’জনে এসেছিলেন সেগুলিই খুঁজে বার করতে। কিন্তু কামরা যে ভাবে উল্টে পড়ে রয়েছে, তাতে সাধারণ ভাবে ঢোকা খুবই কঠিন। সে দিকেই তাকিয়ে রইলেন দু’জনে। তার পর ধরলেন ফেরার পথ।

রেললাইন মেরামতির কাজ চলছে তখন। লোহা-লক্কড়, বড় লোহার পাত ছড়ানো ছিটানো চারদিকে। রেললাইন টপকানোর সময়ে মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে সদ্য হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়া প্রেমিকার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন হাসপাতালের বারান্দায় অপেক্ষায় দু’রাত জেগে থাকা প্রেমিক। একটি দুর্ঘটনা দুই পরিযায়ী শ্রমিকের নতুন পাততে চলা সংসারের পুঁজি কেড়ে নিলেও, ভালবাসা কাড়তে পারেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bikaner–Guwahati Express Maynaguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE