Advertisement
E-Paper

মমতার গ্রেফতার চেয়ে সুর চড়াল বামেরা

সোমবার সারদা-কেলেঙ্কারিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করার দাবি জানিয়েছেন তৃণমূলের সাসপেন্ড হওয়া সাংসদ কুণাল ঘোষ। মঙ্গলবার একই দাবি শোনা গেল বাম নেতাদের গলায়। এ দিন রাস্তায় নেমে তাঁরা বললেন, সারদা কেলেঙ্কারিতে নাম উঠে আসায় মুখ্যমন্ত্রীকে জেরা এবং প্রয়োজনে গ্রেফতার করতে হবে। রাজ্যের আর এক বিরোধী দল বিজেপি মমতার দিকে অভিযোগের আঙুল তুললেও এখনও তাঁকে গ্রেফতার করার দাবি জানায়নি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:১৫
ভিক্টোরিয়া হাউস থেকে কলেজ স্ট্রিট পর্যন্ত মিছিলে হাঁটলেন সিপিএম নেতারা।

ভিক্টোরিয়া হাউস থেকে কলেজ স্ট্রিট পর্যন্ত মিছিলে হাঁটলেন সিপিএম নেতারা।

সোমবার সারদা-কেলেঙ্কারিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করার দাবি জানিয়েছেন তৃণমূলের সাসপেন্ড হওয়া সাংসদ কুণাল ঘোষ। মঙ্গলবার একই দাবি শোনা গেল বাম নেতাদের গলায়। এ দিন রাস্তায় নেমে তাঁরা বললেন, সারদা কেলেঙ্কারিতে নাম উঠে আসায় মুখ্যমন্ত্রীকে জেরা এবং প্রয়োজনে গ্রেফতার করতে হবে।

রাজ্যের আর এক বিরোধী দল বিজেপি মমতার দিকে অভিযোগের আঙুল তুললেও এখনও তাঁকে গ্রেফতার করার দাবি জানায়নি। রবিবার ধর্মতলার সভায় সারদা নিয়ে মমতাকে তুলোধনা করেই ক্ষান্ত হয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। এ দিন বামেদের এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া দেখে অনেকেরই বক্তব্য, সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে প্রতিবাদ থেকে শুরু করে সামগ্রিক ভাবে বিরোধী দলের ভূমিকা ক্রমশ বিজেপি দখল করে নিচ্ছে দেখেই আক্রমণাত্মক হয়েছেন বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্রেরা।

যদিও তৃণমূলকে আক্রমণ করার কাজে বিজেপি-কে ছাপিয়ে যেতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীরই দ্বারস্থ হচ্ছেন বামেরা। সারদা কেলেঙ্কারিতে মমতার নাম উঠে এলেও কেন তাঁকে জেরা করা হচ্ছে না, সেই প্রশ্ন তুলে মোদীর সঙ্গে দেখা করার সময় চেয়েছেন সূর্যকান্তবাবু। সে জন্য চিঠি লিখেছেন প্রধানমন্ত্রীকে। পাশাপাশি ‘গলি গলি মে শোর হ্যায়, মুখ্যমন্ত্রী চোর হ্যায়’ এই আওয়াজ তুলে এ দিন পথেও নেমেছিলেন বামেরা। ‘এই সরকারকে নবান্ন থেকে না হঠানো পর্যন্ত’ তাঁরা যে রাস্তায় নেমে আন্দোলন চালাবেন, তা-ও এ দিন স্পষ্ট করে দেন সূর্যবাবু।

বামেদের মিছিলের কয়েক ঘণ্টা আগেই পথে নেমেছিলেন বিজেপি-পন্থী বিশিষ্টজনেরাও। প্রতারিতদের পাশে দাঁড়াতে এই মিছিলে যোগ দেন টলিউডেরও কয়েক জন শিল্পী (খবর পৃঃ ৬)। আর বিরোধীদের এই নিজেদের টক্করে আরও চাপে পড়ে গিয়েছে শাসক দল তৃণমূল। বিজেপির বিপদ সামলাতে বামেদের পাশে পাওয়ার জন্য সম্প্রতি বারবার বার্তা দিয়েছেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। মমতা নিজেও স্পষ্ট করেছেন, বিজেপি বিরোধী জোটে সিপিএম-কে পাশে নিতেও সমস্যা নেই তাঁর। দিল্লিতে কংগ্রেসের অনুষ্ঠানে গিয়ে সীতারাম ইয়েচুরিকে পর্যন্ত বিজেপির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে এগিয়ে আসার কথা বলেছিলেন। সেই মমতাই এ দিন যাবতীয় সৌজন্য ঝেড়ে ফেলে আক্রমণ করেন নরেন্দ্র মোদী ও মানিক সরকারকে। শিলিগুড়িতে দলের কর্মিসভায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর সৌজন্যকে তিনি বলেছেন, “নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ত্রিপুরায় বৈঠক! মুখে জল আসছে! গদগদ! একেবারে ছোট ভাই-বড় ভাই।” এর পরেই যোগ করেছেন, “এখানে সিপিএম, বিজেপি ও কংগ্রেস একসঙ্গে আছে। আমরা একা লড়ব। কোন দিন ওরা দেশ বিক্রি করে দেবে। আমি এই পাপ নেব না!”

কিন্তু সত্যিই কি একা লড়বেন? কারণ, এ দিনই এক বার তিনি বলেছেন, দিল্লিতে বিজেপি-বিরোধিতায় তিনি সব দলের জোট চান। তা হলে? স্বাভাবিক ভাবেই নেত্রীর এই দোলাচল দেখে কর্মীদের বিভ্রান্তি চরমে। তাঁরা বুঝতে পারছেন না, মুখ্যমন্ত্রী কখন কাকে কোথায় কার ভাই বা বন্ধু বলছেন!

মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছিলেন, সারদা-কাণ্ডে অপরাধ প্রমাণিত হলে তিনি ইস্তফা দেবেন। তাঁর দলের সাংসদ সৃঞ্জয় বসুকে সিবিআই গ্রেফতার করার পর থেকেই সিদ্ধার্থনাথ সিংহের মতো কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতারা বলে আসছেন, পদত্যাগপত্র লিখতে শুরু করুন মুখ্যমন্ত্রী! কলকাতায় এসে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ বা লোকসভায় দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় শাসক দলের তরুণ সাংসদ অনুরাগ ঠাকুর প্রশ্ন তুলেছেন, যে তৃণমূল কালো টাকা উদ্ধারের দাবিতে এত সরব, তারা সারদা কেলেঙ্কারিতে দোষীদের আড়াল করতে এত মরিয়া কেন? এই আবহেই মঙ্গলবার সুর আরও চড়িয়েছেন বাম নেতারা। ধর্মতলার ভিক্টোরিয়া হাউস থেকে কলেজ স্কোয়ার পর্যন্ত মিছিল করে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু দাবি করেছেন, “কে চোর, তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যে পাঁচ জনের নাম নিয়েছিলেন, তার মধ্যে দু’জন জেলে। মুখ্যমন্ত্রী-সহ বাকি তিন জন দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন! অবিলম্বে তাঁদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রয়োজনে গ্রেফতার করতে হবে।”

প্রায় একই দাবি তুলেছেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রও। প্রধানমন্ত্রীর দফতরে চিঠি পাঠিয়ে ২১-২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়েছেন সূর্যবাবু। সেই সূত্রেই তিনি বলেছেন, “বিজেপি-র নেতা-মন্ত্রীরা সারদা নিয়ে যাঁদের বিরুদ্ধে আঙুল তুলছেন, তাঁরা কিন্তু সবাই ঘুরে বেড়াচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে মোদী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সারদায় দোষীদের গ্রেফতার করা হবে। ছ’মাস কেটে গেলেও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে জেরা করা হল না! এক জন মন্ত্রীকেও গ্রেফতার করা হল না!” বাম পরিষদীয় দলের পক্ষ থেকে মোদীর সঙ্গে দেখা করে সেই প্রতিশ্রুতির কথাই তাঁকে মনে করিয়ে দিতে চান সূর্যবাবু। কলকাতায় যখন বিমানবাবু-সূর্যবাবুরা এই কথা বলছেন, দিল্লিতে তখন দলের রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্নের লিখিত উত্তরে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এ দিন জানান, গত তিন বছরে পশ্চিমবঙ্গে (অর্থাৎ তৃণমূল জমানায়) সারদার মতো প্রায় ২০০টি সংস্থা কারবার চালিয়েছে। এদের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক পাঠিয়ে দিয়েছে সেবি এবং রাজ্য সরকারের কাছেও। কিছু ক্ষেত্রে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ জারি হয়েছে।


বামেদের মিছিলে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও রবিন দেব।

কিন্তু হঠাৎ সিপিএম নেতারা বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে কেন বারবার সারদা-সহ বিভিন্ন বিষয়ে দরবার করছেন? বাম সূত্রে বলা হচ্ছে, বিজেপি নেতা হিসেবে নয়, তাঁরা দরবার করছেন দেশের প্রশাসনিক নেতৃত্বের কাছে। তাই উন্নয়নের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাহায্য চেয়েছেন মানিক সরকার। একই কারণে সারদা তদন্তের দ্রুত নিষ্পত্তি চেয়ে মোদীকে চিঠি লিখেছেন সূর্যবাবুরা।

মানিকবাবুর মতো সূর্যবাবুও সিপিএম পলিটব্যুরোর সদস্য। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন, সতীর্থ মানিকবাবুকে দেখেই কি সূর্যবাবুরা ‘অনুপ্রাণিত’ হলেন? বাম সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, সূর্যবাবু প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিটি পাঠিয়েছেন গত ২৮ নভেম্বর। অর্থাৎ মোদী-মানিক সাক্ষাতের আগেই। মমতাকে গত এক বছরে লেখা যে সব চিঠির উত্তর বিরোধী দলনেতা পাননি, তার সংকলন ‘এ বার জবাব চাই’ প্রকাশ করতে এ দিন সেই চিঠির কথা প্রকাশ্যে এসেছে। ইউপিএ-২ সরকারের আমলে সূর্যবাবুরা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে কলকাতায় দেখা করে সারদা-সহ বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থার দুর্নীতির ব্যাপারে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। মোদীকে লেখা চিঠিতে তা-ও উল্লেখ করা হয়েছে।

মোদীর সঙ্গে দেখা করতে চাওয়ার মাধ্যমে তাঁরা কি কোনও বার্তা দিতে চাইছেন? সূর্যবাবুর বক্তব্য, “সারদা তদন্ত নিয়ে কাজের কাজ বিশেষ কিছুই হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালন হচ্ছে না। এই বার্তাই দিতে চাইছি।” সিবিআই, সেবি, ইডি, এসএফআইও যে ক’টি সংস্থা সারদা নিয়ে তদন্ত করছে, সবগুলিই কেন্দ্রের অধীন, তা জানিয়ে সূর্যবাবু বলেন, “সব সংস্থা একসঙ্গে কাজ করে দ্রুত তদন্ত শেষ করুক, এটাই আমাদের দাবি।” তাঁর আরও ব্যাখ্যা, রাজ্য সরকার যে এ ক্ষেত্রে কিছু করবে না, তা জলের মতো পরিষ্কার। তাই কেন্দ্রকেই দায়িত্ব নিতে হবে।

শুধু চিঠি লেখাই নয়, মুখ্যমন্ত্রীকে জেরার দাবিতে কলকাতা জেলা সিপিএমের ডাকে এ দিন শহরে মিছিলও করেছেন সূর্যবাবুরা। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মিছিলের শুরুতে উপস্থিত ছিলেন। বামেদের মিছিলে এ দিন স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই বহু মানুষকে হাঁটতে দেখা গিয়েছে। মিছিলে ভিড় হয়েছিল ভালই।

ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

cpm rally saradha scam buddhadeb bhattacharyay biman basu demanded arrested mamata banerjee tmc bjp cpm state news online news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy