E-Paper

তৃণমূলের সঙ্গে ফারাক মুছতে ছক বিজেপির, নজরে বাম ভোটও

ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) প্রথম পর্বে খসড়া তালিকায় বাদ গিয়েছে প্রায় ৫৮ লক্ষ ১৯ হাজার নাম। এর মধ্যে ২৪ লক্ষ ১৬ হাজার ছিল মৃত ভোটারের নাম। বিজেপি নেতাদের দাবি, তালিকায় মৃত ও ভুয়ো ভোটার রেখে নির্বাচনে তার ফায়দা নিত শাসক দলই।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৭:৩২
সাংগঠনিক বৈঠকে বিজেপির কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্ব। বিধাননগরের কার্যালয়ে।

সাংগঠনিক বৈঠকে বিজেপির কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্ব। বিধাননগরের কার্যালয়ে। — নিজস্ব চিত্র।

ফারাক ২০২১ সালে ছিল ৬০ লক্ষ ৬২ হাজার ৮০৭। রাজ্যে ২০২৪ সালে সেই ফারাক হয়েছে ৪২ লক্ষ ৪৩ হাজার ৫২। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে এই ব্যবধান মুছে ফেলার লক্ষ্যে আসন বাছাই করে প্রস্তুতি নিচ্ছে বিজেপি। ঘাঁটি আগলানোয় তৈরি হচ্ছে তৃণমূলও। আর দু’পক্ষেরই নজরে থাকছে সিপিএম তথা বামেদের ভূমিকা!

ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) প্রথম পর্বে খসড়া তালিকায় বাদ গিয়েছে প্রায় ৫৮ লক্ষ ১৯ হাজার নাম। এর মধ্যে ২৪ লক্ষ ১৬ হাজার ছিল মৃত ভোটারের নাম। বিজেপি নেতাদের দাবি, তালিকায় মৃত ও ভুয়ো ভোটার রেখে নির্বাচনে তার ফায়দা নিত শাসক দলই। এর পরে শুনানি-পর্বে নথি যাচাইয়ের পরে ভোটার তালিকা থেকে আরও ‘জল’ বাদ যাবে এবং তাতে তৃণমূলের বিপদ বাড়বে! এই অঙ্কের জোরেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করছেন, গত বছরের লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির ৪২ লক্ষ ভোটের ব্যবধান মিটে গিয়ে আরও ‘বোনাস’ আসতে চলেছে! তবে ভোটার তালিকা ঘিরে এই যোগ-বিয়োগই শেষ কথা নয়। সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ১৭৫টি বিধানসভা কেন্দ্রের তালিকা ধরে তার জন্য বিশেষ প্রস্তুতি নিতে চলেছে বিজেপি। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পরামর্শ নিয়েই তৈরি হচ্ছে তার রূপরেখা। রাজ্যে নির্বাচনী পর্যবেক্ষকের দায়িত্বপ্রাপ্ত ভূপেন্দ্র যাদব, বিপ্লব দেবেরা ইতিমধ্যে প্রাথমিক আলোচনা সেরে নিয়েছেন।

লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে দেখলে বাংলায় ৯০টি বিধানসভা আসনে এগিয়ে ছিল বিজেপি। যা সংখ্যাগরিষ্ঠতা (১৪৮) থেকে অনেক দূরে। পরবর্তী সময়ে দলের অভ্যন্তরীণ সমীক্ষায় বিধানসভা নির্বাচনে আসন-জয়ের তেমন আশাপ্রদ ছবি ধরা পড়েনি। কিন্তু তাতে হাল ছাড়তে নারাজ বিজেপির কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্ব। বিশেষত, বিহারে এনডিএ-র বিপুল সাফল্যের পরে সাংগঠনিক ভাবে পশ্চিমবঙ্গের প্রতি বিজেপির নজর ও উৎসাহ বেড়েছে। তার পাশাপাশি রাজনৈতিক ভাবে তারা জোড়া কৌশল নিয়ে এগোতে চাইছে। এক দিকে নবীন প্রজন্মের মন পাওয়ার লক্ষ্যে শিল্প ও কর্মসংস্থানের কথা বলা হবে, নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকারের উন্নয়নের মডেল সামনে রাখা হবে। রাজ্যে দফায় দফায় এসে যে অস্ত্রে শাণ দিচ্ছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। আর অন্য দিকে, হিন্দুত্ববাদী হাওয়া তুলে মেরুকরণের প্রয়াস অব্যাহত থাকবে। বিজেপির সহজ অঙ্ক, তাদের বাড়তে হলে হিন্দু ভোটই বাড়াতে হবে। সেই কৌশল প্রয়োগেই কাজে আসছে বাংলাদেশের ঘটনাবলি।

তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য মনে করেন, ২০২৬ সালে ফের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার হওয়া নিয়ে সংশয় নেই। তবে বিজেপির সঙ্গে ব্যবধান ১০ হাজারের মধ্যে, এমন অন্তত শ’খানেক আসনে তাঁরা বাড়তি সতর্ক থাকতে চাইছেন। সেই সতর্কতা যেমন এসআইআর-এ ভোটার বাদ যাওয়ার ক্ষেত্রে, তেমনই রাজনৈতিক কৌশল নির্ণয়েও। একই সঙ্গে দলের অভ্যন্তরে তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ মনে করছেন, সিপিএম তথা বামেরা কেমন ভোট পাবে, তার উপরে বেশ কিছু আসনের জয়-পরাজয় নির্ভর করবে। শাসক দলের এক নেতার বক্তব্য, ‘‘বিরোধীরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারবে, এমন কোনও পরিস্থিতি নেই। কিন্তু সতর্কতার মার নেই, নানা রকম যড়যন্ত্রের দিকেও নজর রাখতে হবে।’’

গত বছরের লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের অন্তত ১২টি আসনে তৃণমূল বিজেপির চেয়ে এগিয়ে থাকতে পেরেছিল সিপিএম বেশ কিছু ভোট পাওয়ায়। বিধানসভা নির্বাচনের আগে সিপিএম তথা বামেদের দিকে তাই নজর দু’দলেরই। সিপিএমের সাম্প্রতিক ‘বাংলা বাঁচাও যাত্রা’র ভিড় দু’পক্ষকেই ফের ভাবতে বাধ্য করছে! বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য থেকে মিঠুন চক্রবর্তীরা বারেবারেই ‘পশ্চিমবঙ্গকে পশ্চিম বাংলাদেশ’ হওয়া থেকে আটকাতে সিপিএমের হিন্দু কর্মী-সমর্থকদের সমর্থন চাইছেন। এমতাবস্থায় আসনের ভাগ সেরে প্রস্তুতিতে গতি আনতে বছরের শেষে বৈঠক ডেকেছে বামফ্রন্ট।

বিজেপির এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘তৃণমূলের বড় ভরসা মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের ভোট। সেই অস্ত্র ভোঁতা হচ্ছে। তার পাশাপাশি আসন ধরে আমরা প্রস্তুতি নেব। যা যা করণীয়, সব করা হবে। আসল পরিবর্তন আসবে, আরও একটু অপেক্ষা করতে হবে!’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

SIR Assembly Election Left TMC BJP

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy