(বাঁ দিকে) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গৌতম আদানি (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
তাজপুরে গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরি নিয়ে মঙ্গলবার বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চ থেকে যে বার্তা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তা নিয়ে ময়দানে নামল বিজেপি। তাজপুরের বন্দরের দরপত্রে অংশ নেওয়ার জন্য ইচ্ছুকদের আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু এর আগে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে আদানি গোষ্ঠী ওই বন্দরের টেন্ডার পেয়েছিল। প্রশ্ন ওঠে, নতুন করে দরপত্রের ডাক দিয়ে কি আদানিদের সঙ্গে মমতা দূরত্ব তৈরি করতে চাইছেন? বিজেপির দাবি, তাজপুরে বন্দর গড়ার প্রস্তাব আদানিরা আগেই নাকচ করে দিয়েছে। পরিবর্তে মন্দারমণিতে নজর রয়েছে গৌতম আদানির। সেখানে কলকাতা-হলদিয়া বন্দরের ধাঁচে আদানিরা একটি স্থলবন্দর তৈরির ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন। সেই কাজও বেশ খানিকটা এগিয়েছে বলে দাবি বিজেপির। গেরুয়া শিবিরের প্রশ্ন, তাজপুরে বন্দর তৈরির কথা নতুন করে ঘোষণা করে মন্দারমণির প্রকল্পকে কি আড়াল করতে চাইছেন মমতা? এ প্রসঙ্গে রাজ্য সরকারের জমি অধিগ্রহণ নীতি নিয়েও তারা প্রশ্ন তুলেছে।
বুধবার সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় জানান, মন্দারমণিতে আদানিদের বন্দর গড়ার বিষয়ে আলোচনা বেশ খানিকটা এগিয়েছে। ওই এলাকায় গত জুন-জুলাই মাসে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন, আদানি গোষ্ঠী এবং রাজ্য সরকারের তরফে জমি পরিদর্শন করেও আসা হয়েছে। অধিগ্রহণের জন্য জমি চিহ্নিত করে ফেলেছে সরকার। এমনকি, রাজ্য সরকারের তরফে মন্দারমণির বন্দর প্রকল্প নিয়ে ইতিমধ্যে চিঠিও পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রীয় জাহাজ মন্ত্রকে। সেই নথি সাংবাদিক সম্মেলনে প্রমাণস্বরূপ তুলে ধরেছেন জগন্নাথ। স্থলবন্দর গড়ার জন্য মন্দারমণিতে বিপুল পরিমাণ জমি প্রয়োজন, যা অধিগ্রহণ করতে হবে রাজ্যকে।
এখনও রাজ্য সরকারের তরফে মন্দারমণিতে জমি অধিগ্রহণের কোনও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়নি। যে কোনও জায়গায় জমি অধিগ্রহণের জন্য আগে সরকারকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হয়। এই ধরনের বিজ্ঞপ্তির ফলে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সূচনা, পরবর্তী সময়ে যা তৃণমূল সরকারকে ক্ষমতায় আনতে সাহায্য করে। জগন্নাথের প্রশ্ন, ‘‘তবে কি সরকার এ বার সেই জমি অধিগ্রহণ নীতি বদলে ফেলছে? আদানিদের সঙ্গে মন্দারমণির প্রকল্প নিয়ে এত রাখঢাক কেন?’’
তাজপুরে ২৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু জগন্নাথের দাবি, তাজপুরে গভীর সমুদ্র বন্দর আদৌ লাভজনক হবে না, আদানিদের উপদেষ্টা সংস্থা ডিএইচআই আগেই সে কথা জানিয়েছে। আদানি গোষ্ঠীর তরফে রাজ্য সরকারকেও তা জানানো হয়েছে। ওই সংস্থার তরফে জানানো হয়, তাজপুরের আবহাওয়ার যা পরিস্থিতি, তাতে বন্দর তৈরি করা হলে বছরে অন্তত দু’মাস তা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে থাকবে। জগন্নাথের প্রশ্ন, ‘‘এ সব জানা সত্ত্বেও কেন মমতা মঙ্গলবার বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চে তাজপুরের কথা ঘোষণা করলেন?’’ ওই ঘোষণাকে ‘অসত্য’ বলে দাবি করেছেন তিনি।
বিজেপির আরও প্রশ্ন, তাজপুরে বন্দর গড়তে না চেয়ে আদানিরা যখন মন্দারমণিতে মনোনিবেশ করল, তখন কি তার জন্য আলাদা করে কোনও টেন্ডার ডাকা হয়েছিল? না কি পুরনো টেন্ডারেই মন্দারমণির কাজ এগোচ্ছে? এক জায়গার টেন্ডারে অন্য জায়গায় কি আদৌ বন্দর গড়া যায়? জমি অধিগ্রহণ নীতি প্রসঙ্গে এই প্রশ্ন তুলেছেন জগন্নাথ। উল্লেখ্য, বিজিবিএসে আদানিরা আসেনি। তাদের অনুপস্থিতিতে তাদেরই দেওয়া টেন্ডারে নতুন করে দরপত্র দিতে বলেছেন মমতা। বিজেপির দাবি, মুখে না বললেও আদানিদের সঙ্গে আড়ালে হাত মিলিয়েছে রাজ্য সরকার এবং তারা গোপনে জমি অধিগ্রহণের চেষ্টায় আছে।
তাজপুর বন্দর নিয়ে রাজ্য সরকারের অবস্থান ঠিক কী? মন্দারমণির বিকল্প স্থলবন্দর নিয়েই বা কী ভাবছেন মুখ্যমন্ত্রী? কবে সেখানকার জমি অধিগ্রহণের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে? কতটা জমি লাগবে? বুধবারের সাংবাদিক বৈঠকে এই প্রশ্নগুলি তুলেছেন জগন্নাথ। সেই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, শিলিগুড়ি থেকে কলকাতা পর্যন্ত ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের সম্প্রসারণ এবং রাজ্যের ৭০টি রেল প্রকল্পের কাজ জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে আটকে আছে। রাজ্য সরকার জমি অধিগ্রহণ নীতি বদল করলে এই প্রকল্পগুলির কাজও এগোবে কি না, জানতে চেয়েছেন জগন্নাথ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy