Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
State News

দক্ষিণে যোগী, উত্তরে সর্বানন্দ, রাঢ়বঙ্গের রথে কাটাতে চান অমিত

ভোটের আগে ‘রথযাত্রা’র আয়োজন করা বিজেপির বহু পুরনো কৌশল। ১৯৯০ সালে বিজেপির তদানীন্তন সভাপতি লালকৃষ্ণ আডবাণীর ‘সোমনাথ থেকে অযোধ্যা রামরথ যাত্রা’ স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে অন্যতম মাইলফলক হয়ে রয়ে গিয়েছে।

ভোটের আগে ‘রথযাত্রা’র আয়োজন করা বিজেপির বহু পুরনো কৌশল।

ভোটের আগে ‘রথযাত্রা’র আয়োজন করা বিজেপির বহু পুরনো কৌশল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৮ ১৯:১৮
Share: Save:

প্রথমে রাঢ়বঙ্গ। তার পরে উত্তরবঙ্গ। আর শেষ রথটি যাত্রা শুরু করবে দক্ষিণবঙ্গ থেকে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই পথে নামবে তিন রথ। যাত্রা শেষ হবে জানুয়ারির শেষ দিকে। তিন রথ কলকাতায় পৌঁছনোর পরে কলকাতায় জনসভা নরেন্দ্র মোদীর। আর তিনটির মধ্যে একটি রথে প্রায় এক সপ্তাহ কাটানোর পরিকল্পনা অমিত শাহের। এমনই ‘মেগা-প্ল্যান’ নিয়ে কোমর বাঁধতে শুরু করল বিজেপি। অন্তত চারটি বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকেও বাংলার ময়দানে হাজির করার চেষ্টা শুরু হয়েছে।

ভোটের আগে ‘রথযাত্রা’র আয়োজন করা বিজেপির বহু পুরনো কৌশল। ১৯৯০ সালে বিজেপির তদানীন্তন সভাপতি লালকৃষ্ণ আডবাণীর ‘সোমনাথ থেকে অযোধ্যা রামরথ যাত্রা’ স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে অন্যতম মাইলফলক হয়ে রয়ে গিয়েছে। হিংসায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল আডবাণীর সে রথের যাত্রাপথ। বিহারে ঢুকতেই আডবাণীর রথ থামিয়ে দিয়ে তাঁকে গ্রেফতার করিয়েছিলেন সে রাজ্যের তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদব। তাতে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির মঞ্চে লালুর জন্য বিশেষ স্থান সম্ভবত চিরতরে পাকা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আডবাণীর রথযাত্রা শেষে হওয়া নির্বাচনে বিজেপি বড়সড় শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল জাতীয় রাজনীতিতে।

বাংলায় গেরুয়া ধ্বজার উত্থানের পথ প্রশস্ত করতেও সেই রথযাত্রার উপরেই অনেকটা ভরসা রাখতে চাইছে বিজেপি। এ রাজ্যে রথযাত্রার পরিকল্পনা যে করা হয়েছে, সে কথা বিজেপি আগেই জানিয়েছিল। সময়টা যত কাছাকাছি আসছে, ততই স্পষ্ট হচ্ছে রথযাত্রা কর্মসূচির রূপরেখা। এবং তাতেই বোঝা যাচ্ছে যে, দিল্লির ৬-এ পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গের প্রাসাদোপম দফতরের কর্তারা এখন বাংলার রাজনীতিকে কতখানি গুরুত্ব দিচ্ছেন।

উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস, অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব— এই চার জনকে রথযাত্রায় সামিল করার পরিকল্পনা রয়েছে বিজেপির। আর থাকছেন খোদ বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ।

আগামী ৩ ডিসেম্বর রথযাত্রা শুরু হচ্ছে তারাপীঠ থেকে। অমিত শাহ রাঢ়বঙ্গের সেই রথেই থাকছেন। রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র সায়ন্তন বসুর কথায়, ‘‘তৃণমূলের ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসের সবচেয়ে কদর্য রূপ দেখা গিয়েছে বীরভূম-সহ রাঢ়বঙ্গেই। তাই ওই এলাকা থেকেই রথযাত্রা শুরু হবে এবং ওই রথেই অমিতজি নিজে থাকবেন।’’

আরও পড়ুন
তৃণমূলের ফেসবুক পেজ ‘বন্ধ’ হওয়া নিয়ে বিতর্ক

রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে অমিত শাহের পরিকল্পনা একটু বড়সড়। সায়ন্তন বললেন, ‘‘৩ ডিসেম্বর তারাপীঠে পুজো দিয়ে রথযাত্রার সূচনা করবেন অমিত শাহ নিজেই। এমনই পরিকল্পনা প্রাথমিক ভাবে হয়েছে। কিন্তু শুধুমাত্র সূচনা পর্বেই নয়, অমিত শাহ রথযাত্রা কর্মসূচিতে একটু বেশি সময়ই দিতে চান। অন্তত ছ-সাত দিন রাঢ়বঙ্গের রথযাত্রায় থাকতে চান বলে তিনি নিজেই জানিয়েছেন।’’

তবে, অমিত শাহের কর্মসূচি নিয়ে রাজ্য বিজেপি কিছুটা সংশয়ে রয়েছে। কারণ, ৭ ডিসেম্বর ভোটে যাচ্ছে রাজস্থান এবং তেলঙ্গানা। ফলে, ৩ ডিসেম্বর ওই দুই রাজ্যের প্রচার পর্ব তুঙ্গে থাকবে। সেই সময় বাংলায় এসে টানা সাত দিন অমিত শাহ থাকতে পারবেন কি না, তা খুব নিশ্চিত করে বলা কঠিন। তবে তারাপীঠ থেকে রথযাত্রার সূচনা যে অমিত শাহ নিজেই করছেন, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই বলে রাজ্য বিজেপি সূত্রে জানা যাচ্ছে।

আরও পড়ুন
সোমেনের আগে রাহুল ডেকে নিলেন অধীরকে

৫ ডিসেম্বর রথযাত্রা শুরু হবে কোচবিহার থেকে। মদনমোহন মন্দিরে পুজো দিয়ে সূচনা হবে রথযাত্রার। কোচবিহার জেলা লাগোয়া যে প্রতিবেশী রাজ্য, সেই অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালকে ওই রথে রাখার কথা ভাবা হচ্ছে। উত্তরবঙ্গের ওই রথযাত্রার সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পেয়েছেন রাজ্য বিজেপির আর এক সাধারণ সম্পাদক রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বললেন, ‘‘যদি ৫ ডিসেম্বর সর্বানন্দ সোনোয়ালের আসা চূড়ান্ত হয়, তা হলে কোচবিহার থেকে রথযাত্রার সূচনা হবে তাঁর হাত দিয়েই।’’

দক্ষিণবঙ্গের রথটি ৭ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু করবে সাগর থেকে। কপিল মুনির আশ্রমে পুজো দিয়ে সে রথযাত্রার সূচনা করুন যোগী আদিত্যনাথ— এমনটাই চাইছে রাজ্য বিজেপি। আদিত্যনাথ ওই দিন থাকতে পারছেন কি না, তা অবশ্য এখনও নিশ্চিত হয়নি। কিন্তু নির্বাচনমুখী রাজ্যগুলিতে যে হেতু ৭ ডিসেম্বরের আগেই প্রচার পর্ব শেষ হয়ে যাচ্ছে, সে হেতু বিজেপির অন্যতম ‘স্টার প্রচারক’ আদিত্যনাথকে ওই দিন বাংলায় পেতে অসুবিধা হবে না বলেই রাজ্য বিজেপির আশা।

রথগুলি শুধু বিভিন্ন জেলা সদর ছুঁয়ে চলে যাবে, এমন কিন্তু নয়। প্রতিটি জেলাতেই বিভিন্ন এলাকায় ঘুরবে রথ। যেখানে যেখানে রথ থামবে, সেখানেই জমায়েতের পরিকল্পনা নেবে বিজেপি। বেশ কিছু জায়গায় জনসভাও হবে। ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস এবং ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবও রথযাত্রায় যোগ দেবেন। তবে ঠিক কোন সময়ে এবং কোন কোন কোন রথে তাঁরা থাকবেন, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। বিপ্লব দেব যে হেতু আর একটি বাঙালিপ্রধান রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, সে হেতু তাঁকে একটু দীর্ঘ সময়ের জন্যই রথযাত্রায় পেতে চাইছে বাংলার বিজেপি।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

(পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার খবর এবং বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাংলায় খবর পেতে চোখ রাখুন আমাদের রাজ্য বিভাগে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE