কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ হতেই বাংলার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ‘বঞ্চনা’র অভিযোগে সরব হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। সেই অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে পাল্টা অসহযোগিতা ও রাজনীতি করার অভিযোগ তুলেছিল বিজেপি। এ বার রাজ্য বাজেটকে হাতিয়ার করে ‘তোষণে’র অভিযোগ তুলে নতুন করে আসরে নামল বিজেপি। পাশাপাশিই সিপিএমের তোপ, রাজ্যের বাজেটে ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা’ হয়েছে। তাদের অভিযোগ, বাজেটে আসল তথ্য লুকিয়ে মিথ্যাচার করা হয়েছে। তৃণমূল অবশ্য সে সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে।
রাজ্য বিজেপির যুব মোর্চার আয়োজনে ‘বাজেট টক’ কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করতে কলকাতায় এসেছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান। তিনি রাজ্যের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় প্রকল্প রূপায়ণে অসহযোগিতার অভিযোগ করে ‘ডবল ইঞ্জিন’ সরকার গড়ার ডাক দিয়ে গিয়েছিলেন। তার পর থেকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, দলের অর্থনীতিবিদ-বিধায়ক অশোক লাহিড়ী-সহ বিজেপির নেতারা ‘বাজেট টক’-এ যোগ দিয়ে রাজ্য বাজেটের সমালোচনা করেছেন। রাজ্য বিজেপির ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালবীয়ের আজ, শনিবার আসানসোলে এবং এর পরে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুনীল বনসলের শিলিগুড়িতে এই কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার কথা। এক দিকে কেন্দ্রীয় বাজেটে ‘ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি’র প্রচার, পাশাপাশি রাজ্য বাজেটকে আক্রমণের কৌশলেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগের বছরে শাসক দলকে বিঁধতে চাইছে বিজেপি।
কেন্দ্রের কাছ থেকে বাংলার প্রাপ্তির তালিকা তুলে ধরার পাশাপাশি বিজেপি সরব হয়েছে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেটে তৃণমূলের ‘তোষণের রাজনীতি’র অভিযোগে। দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্তের বক্তব্য, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে এই মুহূর্তে সব চেয়ে বড় সমস্যা কর্মসংস্থানের। অথচ আমরা দেখলাম, উচ্চ শিক্ষায় বরাদ্দ হল এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা। সেখানে সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও মাদ্রাসার জন্য বরাদ্দ করা হল পাঁচ হাজার ৬০২ কোটি টাকা। পরিকাঠামো উন্নয়নের কোনও ব্যবস্থা নেই। বাংলায় ভারী শিল্প নেই। ভরসা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প। সেখানেও সামান্য বরাদ্দ। এই বাজেট চটকদারি, ধর্মীয় তোষণ ও প্রতিশ্রুতি সর্বস্ব।”
রাজ্যে কৃষি ও শিল্প বিনিযোগের তথ্য এবং বেড়ে চলা ঋণের পরিমাণ তুলে ধরে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে দলের রাজ্য দফতরে শুক্রবার সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সেলিম দাবি করেছেন, রাজ্য সরকারের দাবি ‘অসার’। তাঁর বক্তব্য, “বাজেটে যা তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে, বাস্তবে তার ধারে কাছেও নেই। ২০২৩-২৪ সালের বাজেটে বলা হল অর্থনৈতিক বৃদ্ধি হবে ৭.৬%। বাস্তবে তা দাঁড়িয়েছিল ৬.১%। এ বার বলা হল ৬.৮% আর্থিক বৃদ্ধি হবে। তা হলে দেখা যাচ্ছে, বক্তৃতাই সার!”
পাল্টা তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ অবশ্য বলেছেন, “দিল্লির বাজেট কথা দিয়ে কথা না রাখার বাজেট। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাজেট কথা দিয়ে, কথা রাখার বাজেট। বাংলায় মুখ্যমন্ত্রী ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ চালু করলে কেন্দ্রকে সেটা নকল করতে হয়। যারা বাংলাকে নকল করে বাজেট করে কিন্তু বাংলার টাকা আটকে রাখে, তাদের মুখে বড় বড় কথা মানায় না।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)