Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
BJP

‘বাংলায় রাস্তা সরু, বিপদ বিদ্যুতের তারে’, রথের উচ্চতা কমিয়ে দিচ্ছে বিজেপি

দেশের নানা প্রান্তে বিভিন্ন নির্বাচনের আগে বিজেপির যে সব রথ রাস্তায় নেমেছে, বাংলার তিনটে রথের উচ্চতাই তার চেয়ে বেশ খানিকটা কমাতে বাধ্য হচ্ছেন বিজেপি নেতৃত্ব। এমনটাই খবর মুরলীধর সেন লেন সূত্রে।

গ্রাফিক- তিয়াসা দাস।

গ্রাফিক- তিয়াসা দাস।

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৮ ১৭:৩০
Share: Save:

এই প্রথম বার নয়। কিন্তু এটাই বৃহত্তম। ডিসেম্বর-জানুয়ারি জুড়ে গোটা বাংলায় যে রথযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিজেপি, তা নিয়ে আগ্রহ এবং চর্চা বেনজির উচ্চতায় পৌঁছেছে। কিন্তু আগ্রহ যে উচ্চতাতেই পৌঁছক, রথের উচ্চতা কমছে। দেশের নানা প্রান্তে বিভিন্ন নির্বাচনের আগে বিজেপির যে সব রথ রাস্তায় নেমেছে, বাংলার তিনটে রথের উচ্চতাই তার চেয়ে বেশ খানিকটা কমাতে বাধ্য হচ্ছেন বিজেপি নেতৃত্ব। এমনটাই খবর মুরলীধর সেন লেন সূত্রে।

রাজ্য বিজেপির সদর দফতরে সোমবার ম্যারাথন বৈঠক হয়েছে ডিসেম্বরে শুরু হতে যাওয়া রথযাত্রা নিয়ে। প্রথমে ঘণ্টা তিনেক মূল বৈঠক। তার পরে দলের বিভিন্ন শাখা এবং বিভিন্ন কমিটিকে নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়, রাহুল সিংহেরা তো ছিলেনই, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে ছিলেন শিব প্রকাশ, অরবিন্দ মেনন, সুরেশ পূজারীরাও।

রথগুলো কেমন হবে, তাতে কী কী বিশেষত্ব থাকবে— সে সব নিয়ে বৈঠকে সবিস্তার আলোচনা হয়েছে সোমবার। বাংলার রাস্তাঘাট এবং অন্যান্য বাধ্যবাধকতার কথা মাথায় রেখে রথের আকার এবং উচ্চতা কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ভোটের আগে নেতাদের রথযাত্রায় নামানো বিজেপির বহু পুরনো রণকৌশল। গো-বলয়ের যে তিন রাজ্যে এখন নির্বাচনী প্রচার চলছে, সেই রাজস্থান, ছত্তীসগঢ় এবং মধ্যপ্রদেশেও বিজেপির রথ-রূপী বাস রাস্তায় নেমে পড়েছে। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজের জন্য সুবিশাল বিলাসবহুল রথ বানানো হয়েছে। ছত্তীসগঢ় থেকে যে রথ রাহুল সিংহ আনিয়েছিলেন ২০১১ সালে, তা-ও বেশ বড় ছিল। কিন্তু এ বার যে তিনটে রথ-রূপী বাস দিল্লি থেকে আনা হবে, সেগুলি আকারে এবং উচ্চতায় আগেরগুলোর চেয়ে ছোট হবে। জানালেন দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র সায়ন্তন বসু। ‘‘মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ় বা রাজস্থানে অধিকাংশ রাস্তা যে রকম চওড়া, আমাদের রাজ্যে সে রকম নয়। তা ছাড়া এ রাজ্যে অনেক জায়গাতেই রাস্তার ধার দিয়ে বা উপর দিয়ে বিদ্যুতের তার গিয়েছে। তাই খুব ঢাউস বাস নামালে মুশকিল আছে,’’— বললেন সায়ন্তন।

গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ

বিজেপি সূত্রের খবর, বিভিন্ন সময়ে যে সব রথ বিজেপি রাস্তায় নামিয়েছে, সেগুলোর উচ্চতা ১৬ ফুটের মতো হয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের জন্য এ বার যে বাসগুলো পাঠানো হবে তার উচ্চতা ১২ ফুট থেকে ১৪ ফুটের মধ্যে বেঁধে রাখা হবে।

এ বারের যাত্রাপথে যত বেশি সম্ভব শহর-গ্রামকে স্পর্শ করার চেষ্টা করবে বিজেপির তিন রথ। জেলা বা মহকুমা শহরগুলোয় বেশ ঘিঞ্জি কিছু রাস্তা দিয়েও এগোতে হবে রথগুলোকে। সে কথা মাথায় রেখেই বাসগুলোর আকার কিছুটা ছোট করা হচ্ছে। বাসগুলো বুলেটপ্রুফও হচ্ছে না বলে বিজেপি সূত্রের খবর। বুলেটপ্রুফ করতে হলে বাসগুলো অনেক বেশি ভারী হয়ে যাবে। রাস্তাঘাটের অবস্থা যে সব এলাকায় খারাপ, সেখানে রথ নিয়ে যাওয়া কঠিন হবে। বলছেন বিজেপি নেতারা।

রথযাত্রা কর্মসূচির মিডিয়া ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন যিনি, সেই বিজেপি নেতা রীতেশ তিওয়ারি জানালেন, তিনটে বাসেই হাইড্রলিক লিফ্ট থাকছে। বাসের সামনের অংশে চালকের আসনের পাশে বা পিছনে সেই লিফ্ট বসানো হবে। যে নেতা যে দিন রথের নেতৃত্বে থাকবেন, ওই লিফ্টে করে তাঁকে বাসের ছাদের উপরে তুলে ধরা হবে। রীতেশের কথায়, ‘‘বাসের হুড আংশিক ভাবে খোলার ব্যবস্থা থাকছে। লিফ্ট সেখান দিয়েই উপরে উঠে যাবে। লিফ্টে দাঁড়িয়ে জনসংযোগ করবেন নেতারা। প্রয়োজন হলে ওই লিফ্টকে মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করে সভাও করা যাবে।’’

আরও পড়ুন: নাগরিকপঞ্জির প্রতিবাদে ১২ ঘণ্টার অসম বনধে বিপর্যস্ত জনজীবন

হাইড্রলিক লিফ্টে দাঁড়িয়ে সভা করার বিষয়ে সোমবারের বৈঠকে বিশদে কথা হয়েছে বলে খবর। রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে রাজ্যের নানা প্রান্তে জনসভার পরিকল্পনা করেছে বিজেপি। কিন্তু অনেক এলাকাতেই রথের যাত্রাপথে মঞ্চ বাঁধার মতো জায়গা নেই। রীতেশ বললেন, ‘‘যে সব এলাকায় মঞ্চ বাঁধা সম্ভব হবে না, সেখানে শুধু মাইক লাগিয়ে দেওয়া হবে। আর যে নেতা রথের নেতৃত্বে থাকবেন, তাঁকে একটা কর্ডলেস মাইক্রোফোন দিয়ে দেওয়া হবে। লিফ্টে দাঁড়িয়েই অনায়াসে সভা করতে পারবেন তিনি।’’

আরও পড়ুন: পেলিং যাওয়ার পথে খাদে গাড়ি, মৃত একই পরিবারের ৫, শোকের ছায়া মছলন্দপুরে

তবে রাজস্থানে বসুন্ধরা রাজের রথের অন্দরমহল যতটা বিলাসবহুল হয়, ততটা বাংলায় হচ্ছে না বলে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে। দলের রাজ্য নেতৃত্ব জানাচ্ছেন, কোনও নেতাই উদয়াস্ত রথে থাকবেন না। তাই বিশ্রাম নেওয়া বা খাওয়া-ঘুমনোর জায়গা বাসের মধ্যেই রাখতে হবে, এমন বাধ্যবাধকতা নেই। সায়ন্তন বললেন, ‘‘বসুন্ধরাজি রোজ প্রায় ১২ ঘণ্টা রথেই কাটান। তাই অনেক বিশেষ বন্দোবস্ত রাখতে হয়। কিন্তু বাংলার রথে অমিত শাহ বা অন্য নেতারা এক টানা তিন-চার ঘণ্টার বেশি থাকবেন না। কারণ কনভয়ে তাঁদের নিজেদের গাড়িগুলোও থাকবে। প্রয়োজন হলে রথ থেকে নেমে নিজেদের গাড়িতে চলে যেতে পারবেন তাঁরা।’’ রথের আকার ছোট রাখতে ভিতরে বড়জোর ৭-৮ জনের বসার বন্দোবস্ত থাকবে বলে জানা গিয়েছে।

(বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া - পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবর আমাদের রাজ্য বিভাগে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE