Advertisement
E-Paper

বামের ভোট গিয়েছে রামে, এর পর বাম নেতারাও কি রামের শিবিরে? সিপিএমের ‘বঞ্চিত’ নেতাদের ‘বার্তা’ দিচ্ছে বিজেপি

দক্ষিণবঙ্গের তিন জেলার ক্ষেত্রে যে বাম ছাত্র-যুব নেতারা পদ্মবার্তা পেয়েছেন, তাঁরা সকলেই কোনও না কোনও ভাবে দলীয় কমিটি বা গণসংগঠনের কমিটিতে ঈপ্সিত পদ বা জায়গা না-পেয়ে ক্ষুব্ধ। অর্থাৎ, যাঁরা মনে করছেন, তাঁরা ‘বঞ্চিত’। যাঁদের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে।

শোভন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৯:০১
BJP is sending a message to CPM\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\'s deprived young leaders

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

২০১৯ সালে সেই যে বামের ভোট রামে গিয়েছিল, তার ‘ঘর ওয়াপসি’ ঘটেনি। ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে কিছু কিছু জেলার ফলাফল দেখে বাম শিবিরের আশা ছিল, ২০২৪ সালে বোধহয় পরিস্থিতির বদল ঘটবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোট যখন কার্যত আসন্ন, তখন সিপিএমের ‘বঞ্চিত’ ছাত্র-যুব নেতাদের ‘বার্তা’ পাঠানো শুরু করল বিজেপি।

দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া এবং পূর্ব বর্ধমানের একাধিক বাম ছাত্র-যুব নেতা গত ক’দিনে পদ্মশিবিরের ‘বার্তা’ পেয়েছেন। কাউকে ফোনে বার্তা দেওয়া হয়েছে। কাউকে মুখোমুখি সাক্ষাতে। বার্তার নির্যাস একটাই— ওখানে থেকে কী হবে! চলে আসুন। তৃণমূলকে হঠাতে হলে বিজেপি-ই ভরসা।

এই বার্তা কি ‘সর্বজনীন’? দক্ষিণবঙ্গের ওই তিন জেলার যে বাম ছাত্র-যুব নেতারা পদ্মবার্তা পেয়েছেন, তাঁরা সকলেই কোনও না কোনও ভাবে দলীয় কমিটি বা গণসংগঠনের কমিটিতে ঈপ্সিত পদ বা জায়গা না-পেয়ে ক্ষুব্ধ। অর্থাৎ, যাঁরা মনে করছেন, তাঁরা ‘বঞ্চিত’। যাঁদের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে। কিন্তু তাঁরা মনে করেন, যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাঁদের টপকে অন্যদের নেতা করে দেওয়া হয়েছে।

বাম শিবিরের এই ‘বঞ্চিতদের’ খোঁজ কী ভাবে পাচ্ছে বিজেপি? হাওড়ার এক ডিওয়াইএফআই নেতাকে জানানো হয়েছে, সমাজমাধ্যমের বিভিন্ন পোস্ট দেখে বোঝা গিয়েছে যে, তাঁর মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তার পরেই বার্তা পাঠানো হয়েছে। তবে এই তিন নেতার দু’জন সরাসরি ‘না’ বলে দিয়েছেন বিজেপি-কে। এক জন ‘হ্যাঁ’ বলেননি বটে। তবে ‘না’-ও বলেননি। তিনি আপাতত সময় চেয়েছেন।

গত বৃহস্পতিবার পূর্ব বর্ধমানের গ্রামাঞ্চলের এক যুবনেতার কাছে বার্তা গিয়েছে পদ্মশিবিরের তরফে। তাঁকে বলা হয়েছে, ‘‘আপনাকে বাদ দিয়ে তো দলের জেলা কমিটিতে অন্য লোককে নেওয়া হল। কী করবেন আর! চলে আসুন।’’ ঘটনাচক্রে, তিন জেলার নেতাদের ক্ষেত্রেই সাংগঠনিক দায়িত্বের কথা বলা হয়েছে পদ্মশিবিরের তরফে। যে তিন নেতা গত এক সপ্তাহে এই বার্তা পেয়েছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই সিপিএমের ছাত্র বা যুব সংগঠনের জেলাস্তরের প্রথম সারির নেতা ছিলেন। সদ্যই তাঁদের ‘ফ্রন্ট’ বদলেছে।

মতাদর্শ উল্টোমেরুর হলেও বামনেতারা গিয়ে বিজেপিতে যে খাপ খাইয়ে নিচ্ছেন, তার উদাহরণ অনেক। মালদহ উত্তরের সাংসদ খগেন মুর্মু ছিলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা কৃষকসভার জেলা স্তরের সর্বোচ্চ নেতা। শিলিগুড়ির বাম নেতা শঙ্কর ঘোষ এখন বিজেপি পরিষদীয় দলের উল্লেখযোগ্য ‘মুখ’। যিনি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ‘আস্থাভাজন’ বলেও পরিচিত। বিজেপি পরিষদীয় দলেই রয়েছেন বাম সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী বঙ্কিম ঘোষ। তবে সংসদীয় রাজনীতি বাদ দিয়ে এলাকার সাংগঠনিক স্তরেও বিজেপি ‘বঞ্চিত’ এবং ‘উচ্চাকাঙ্ক্ষী ’ বামেদের কাছে টানতে চাইছে।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য এই বার্তার কথা সরাসরি অস্বীকার করেননি। তবে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, তাঁরা শুধু সিপিএমের লোককেই বার্তা পাঠাচ্ছেন না। এই বার্তা সর্বজনীন। শমীকের কথায়, ‘‘আমরা মনে করি মতাদর্শকে বুকে রেখে, ঝান্ডাকে আপাতত সরিয়ে রেখে সকলের এগিয়ে আসা উচিত। কারণ, তৃণমূলকে সরানোই এখন আসল কাজ।’’ শমীক আরও বলেন, ‘‘আমরা বঞ্চিত সিপিএম খুঁজতে নামিনি। সাধারণ ভাবে সকলের উদ্দেশেই তৃণমূলকে হারানোর বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এগুলিও হয়তো তেমনই।’’ তবে হাওড়া সদরের প্রথম সারির এক বিজেপি নেতা স্পষ্টই বলছেন, ‘‘এলাকার মানুষ চেনা, বুথভিত্তিক তথ্য এখনও সিপিএমের অনেকে ভাল বোঝেন। সেই সূত্রেই ভাল ছেলেদের আমরা বলছি।’’

সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী অবশ্য এ হেন বার্তা পাঠানোর ঘটনাকে আপাতত ‘ব্যতিক্রম’ হিসাবেই দেখতে চেয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘সার্বিক ভাবে আমাদের লোকজনকে বিজেপি বার্তা পাঠাচ্ছে, তেমনটা এখনও শুনিনি। কয়েকটি ঘটনা ব্যতিক্রম হতে পারে। তবে মানুষ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে বুঝতে পারছেন যে, তৃণমূলের বিকল্প কখনওই বিজেপি হতে পারে না।’’

প্রত্যাশিত ভাবেই এ নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূল। শাসকদলের মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এত দিন আমরা পরিসংখ্যান, পাটিগণিত দিয়ে বলছিলাম যে, বামের তলায় একটি ফুটকি যুক্ত হয়ে এখানে রাম হয়েছে। সিপিএমের ভোটেই পুষ্ট হয়েছে বিজেপি। বিধানসভা ভোটের আগে সিপিএমের দুর্ভাগাদের বিজেপির বার্তা পাঠানোর ঘটনা আরও স্পষ্ট করে দিল বাম-রামের ঐক্য।’’

BJP Leaders CPM Leaders
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy