ছিপ হাতে রাজনীতির ময়দানে নামছেন দিলীপ ঘোষ। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
লক্ষ্য লোকসভা নির্বাচন। জিততে হবে নিজের আসন মেদিনীপুর। তবে আপাতত সেই লক্ষ্যে বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের নজর পুকুরের মাছের দিকে। জনসংযোগের নতুন কর্মসূচি ‘গ্রামে চলো, মাছ ধরো’ শুরু করতে চলেছেন তিনি। সব ঠিক থাকলে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই মেদিনীপুর লোকসভা এলাকার গ্রামেগঞ্জের পুকুরে ছিপ নিয়ে বসতে দেখা যাবে দিলীপকে। দলীয় কর্মীরা তো থাকবেনই, সঙ্গে থাকবে চার, টোপ, বঁড়শি-সহ মাছ ধরার বিবিধ সরঞ্জাম। যদিও পুকুরের মাছ নয়, গভীর জলের লোকসভা আসন জয়ই দিলীপের লক্ষ্য।
রাজ্য বিজেপির সভাপতি থাকার সময় দিলীপকে নিত্যনতুন কর্মসূচি নিতে দেখা গিয়েছে। বিধায়ক থাকার সময় বিধানসভায় গিয়ে লজেন্স বিলি করেছেন। প্রাতর্ভ্রমণ তাঁর রোজের রুটিন। আর তা শেষে চায়ের দোকানে কর্মীদের নিয়ে আড্ডাও নিয়মিত। গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে আগে ‘দিলীপদাকে বলো’ এবং ‘চা চক্রে দিলীপদা’ নামে কর্মসূচি নিয়েছিলেন। সবেরই লক্ষ্য ছিল জনসংযোগ। সেই সবের সঙ্গে দিলীপকে অনেক সময়েই গ্রামে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে গিয়ে আম, জাম, লিচু পাড়তে দেখা গিয়েছে। আঁকশি দিয়ে বাতাবি লেবু পাড়ার ছবিও দেখা গিয়েছে। কখনও কখনও কর্মীদের সঙ্গে পুকুরে মাছও ধরেছেন। কিন্তু সেই জনসংযোগকে কর্মসূচির আকার দেননি। এ বার সেটাই করতে চলেছেন দিলীপ। এই প্রসঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘‘আমি গ্রামের ছেলে। গ্রামের মানুষের মতো সব কাজই পারি। সে সব করতেও ভালবাসি। এ বার গ্রামে গ্রামে গিয়ে এক দিন করে থাকব। পুকুরে মাছ ধরব। কর্মীদের বাড়িতে রান্না হবে। খাব, রাত্রিবাসও করব।’’ এই ভাবেই কি লোকসভা নির্বাচনের প্রচার শুরু করে দিচ্ছেন? দিলীপ বলেন, ‘‘সবটাই ভোটের জন্য নয়। জনসংযোগ আমি সারা বছর ৩৬৫ দিনই করি। আমি গ্রামের মানুষের কথা শুনতে চাই। চাষবাসের খোঁজ নেওয়া, পশুপালন নিয়ে কথা বলা যেমন করব, তেমন বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য কী কী চাষ করা যায়, কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা কী ভাবে নেওয়া যায়, সে সব নিয়েও আলোচনা করব।’’
গত বাদল অধিবেশনের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভোটের প্রচারে ‘ভোকাল ফর লোকাল’ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন বাংলার সাংসদদের। রাজ্যে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের এলাকাগত ভাবে কী কী সুবিধা মিলেছে, রেলের কী কী উন্নয়ন ওই এলাকার মানুষের কাজে লেগেছে, সে সব নিয়ে বেশি করে কথা বলতে বলেছেন। জাতীয় রাজনীতির বিষয় বাদ দিয়ে স্থানীয় কথা বেশি করে বলতে হবে বলে পরামর্শ দিয়েছিলেন। এ বার মোদীর সেই পরামর্শকেই কি আরও বেশি করে ‘লোকাল’ করতে চাইছেন দিলীপ? মেদিনীপুরের সাংসদ বলেন, ‘‘আমি বরাবরই ‘লোকাল’-এর উপরে জোর দিই। আরও ভাল করে বললে, ব্যক্তির চাহিদা, ব্যাক্তির সঙ্গে যোগাযোগে ভরসা করি। আমার লোকসভা এলাকার সব জায়গাতেই আমি যাব। সাধারণের মধ্যে দিনরাত থাকব।’’
প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি হয়েছিলেন। এখন সেই দায়িত্বও নেই। তিনি শুধুই সাংসদ। এখন তাই গোটা রাজ্য নয়, বেশি করে নিজের লোকসভা এলাকা মেদিনীপুরের দিকেই তিনি নজর দিতে চান। দিলীপের সিদ্ধান্ত, রাজ্য নেতৃত্ব কোনও দায়িত্ব দিলে সেটা পালন করা ছাড়া বাকি সময়টা তিনি নিজের এলাকাতেই নানা কর্মসূচি নেবেন। রাজ্য বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশে সব মণ্ডলে একটি করে সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। দিলীপ নিজের লোকসভা এলাকায় সেই কাজ শেষ করে ফেলেছেন। এ বার ‘গ্রামে চলো, মাছ ধরো’ কর্মসূচিতে নামতে চলেছেন।
সম্প্রতি দিলীপ খড়্গপুর গ্রামীণ বিধানসভা এলাকার খেলার গ্রাম পঞ্চায়েতের রামনগর গ্রামে গিয়েছিলেন। সেখানে কর্মীদের নিয়ে পুকুরে মাছও ধরেন। তা নিয়ে কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ দেখার পরেই তিনি গ্রামে গ্রামে এই কর্মসূচি করবেন বলে ঠিক করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘গ্রামবাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে বসতবাড়ি লাগোয়া পুকুরে মাছ ধরা অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িত। এখনও সেটা রয়েছে। আমি তাতেই অংশ নেব। মাছ ধরার অভিজ্ঞতাও রয়েছে। কর্মীদের নিয়ে হইচই করে সময় কাটাব। আনন্দের সঙ্গে হবে কাজের কথাও।’’ দিলীপ আনন্দ বা জনসংযোগের কথা যতই বলুন না কেন, রাজ্য বিজেপিতে তাঁর অনুগামীরাও বলছেন, দিলীপের আসল লক্ষ্য বঁড়শিতে দ্বিতীয় বার মেদিনীপুর আসন গাঁথা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy