Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Mukul Roy

তিন সিপিএম কর্মী খুনের মামলায় দু’দফায় ৬ ঘণ্টা জেরা মুকুলকে

জেরা শেষে মুকুল বলেন, ‘‘আগে বাম সরকার দেখেছি। এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার দেখছি সমস্ত কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে।’’

সিউড়ি থানায় এলেন মুকুল রায়। বৃহস্পতিবার দুপুরে। নিজস্ব চিত্র

সিউড়ি থানায় এলেন মুকুল রায়। বৃহস্পতিবার দুপুরে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা 
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২০ ০২:৩৩
Share: Save:

দুবরাজপুরের পরে সিউড়ি। লাভপুরের সিপিএম কর্মী তিন ভাই খুনের মামলায় ‘অভিযুক্ত’ বিজেপি নেতা মুকুল রায়কে বৃহস্পতিবার ফের পুলিশের ম্যারাথন জেরার মুখে পড়তে হল। চলতি মাসের ১ তারিখ ওই মামলায় চার্জশিটে নাম থাকা মুকুল রায়কে ডেকে টানা দু’ঘণ্টা জেরা করেছিল পুলিশ। বৃহস্পতিবার সিউড়ি থানায় ডেকে দু’দফায় প্রায় ৬ ঘণ্টা জেরা করে পুলিশ। সেই সময় উপস্থিত ছিলেন ডিএসপি (ডিইবি), ওসি লাভপুর, ওসি ডিআইবি। তবে জেরায় ঠিক কী উঠে এসেছে সে বিষয়ে এ দিনও মুখ খোলেনি পুলিশ।

একে আগেই ‘প্রতিহিংসার রাজনীতি’ আখ্যা দিয়েছিল বিজেপি। মুকুল রায়ও দাবি করেছিলেন, ওই মামলা সম্বন্ধে কিচ্ছু জানেন না। তৃণমূলের নির্দেশে পুলিশ ‘জোর করে’ তাঁর নাম ঢুকিয়ে দিয়েছে। জেরা শেষে মুকুল বলেন, ‘‘আগে বাম সরকার দেখেছি। এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার দেখছি সমস্ত কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে। রাজনৈতিক ভাবে রাজনৈতিক লোকেদের বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা করছে। মামলা আমার বিরুদ্ধে আছে। দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে আছে। অর্জুন সিংহের বিরুদ্ধে আছে। মিথ্যে মামলা হয়েছে দলের জেলা সভাপতি ও কর্মীদের বিরুদ্ধেও। পুলিশ আধিকারিকদের কিছু করার নেই। তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী তথা গৃহমন্ত্রীর নির্দেশ পালন করছেন।’’ মুকুলের সংযোজন, ‘‘পুলিশ যা প্রশ্ন আমাকে করেছে, সব প্রশ্নের যথাযথ জবাব দিয়েছি বলেই মনে করি।’’

২০১০ সালে লাভপুরের বুনিয়াডাঙা গ্রামে বালিরঘাটের সালিশি সভায় নিজের বাড়িতে ডেকে সিপিএম কর্মী তিন ভাই জাকের আলি, কোটন শেখ ও ওসুদ্দিন শেখকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে মনিরুল ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে। তখন মনিরুল সবে ফব থেকে তৃণমূলে গিয়েছেন। ওই অভিযোগের পরে মনিরুল গ্রেফতার হন। মাস তিনেক হাজতবাস করে তৃণমূলের টিকিটে জিতে লাভপুরের বিধায়ক হন। ২০১৪ সালে ওই মামলায় পুলিশ মনিরুল-সহ ২২ জনকে বাদ দিয়ে বোলপুর কোর্টে চার্জশিট জমা দেয়। লোকসভা নির্বাচনের পরে দলের প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে দিল্লিতে মুকুল রায়ের হাত ধরে দলবদলে বিজেপিতে যোগ দেন মনিরুল। তার কিছু পরে কলকাতা হাইকোর্টে পুনর্তদন্তের আবেদন জানায় নিহতের পরিবার।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে বিচারপতি মধুমতী মিত্র রাজ্য পুলিশকে জেলা পুলিশ সুপারের তদারকিতে ‘ফার্দার ইনভেস্টিগেশন’ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। গত বছরের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ফের তদন্ত করে বোলপুর আদালতে সাপ্লিমেন্টরি চার্জশিট জমা দেয় লাভপুর থানা। মোট ৬৩ জনের নাম ছিল। সেখানে ফের তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আসা লাভপুরের বিধায়ক মনিরুল ইসলাম ও প্ররোচনা দেওয়ার জন্য অধুনা বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের নাম দিয়েছিল বীরভূম পুলিশ। তার পরেই উভয়ের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে বোলপুর আদালত।

এ দিকে, কলকাতা হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেছিলেন মুকুল রায়। আগাম জামিন মঞ্জুর না হলেও ১৬ ডিসেম্বর কলকাতা হাইকোর্টের তরফে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চ পাঁচ সপ্তাহের রক্ষাকবচ দেন ওই বিজেপি নেতার জন্য। নির্দেশে বলা হয়, মুকুল রায়কে ওই সময়কালের মধ্যে গ্রেফতার করা যাবে না। মুকুল রায় লাভপুর, বোলপুর থানা এলাকায় প্রবেশ করতে পারবেন না। তবে পুলিশ তাঁকে ডাকলে তিনি তদন্তে সহযোগিতা করবেন। পুলিশ সূত্রের খবর, আদালতের ওই নির্দেশের পরে মুকুলকে প্রথমে দুবরাজপুরে, এ দিন সিউড়িতে ডেকে জেরা করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় তারাপীঠে আসেন মুকুল। পুজো দেন। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন। তার পরে রামপুরহাটের উদয়পুর রটন্তী কালীবাড়িতে যান। সেখানেও পুজো দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mukul Roy Labhpur BJP TMC CPM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE