দিঘার জগন্নাথধাম যাত্রা এবং সেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সস্ত্রীক ছবি প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই দলের অন্দরে ক্ষোভের মুখে দিলীপ ঘোষ। তিনিও দলীয় নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছেন। সেই আবহে এ বার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর জেলা পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাটে দলীয় নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে পড়লেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ।
বৃহস্পতিবার বেলার দিকে কোলাঘাটে একটি চা-চক্রে যোগ দেওয়ার কথা ছিল দিলীপের। সেখানে সস্ত্রীক তিনি পৌঁছেওছিলেন। এর পরেই বিজেপি নেতাকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। তাঁদের অভিযোগ, চা-চক্র কর্মসূচির বিষয়ে দলের জেলা সভাপতিকে জানাননি দিলীপ। কাউকে না জানিয়েই তিনি এলাকায় চলে এসেছেন। দিলীপ এবং তাঁর অনুগামীদের সঙ্গে বচসার সময় বিক্ষোভকারী দলীয় নেতা-কর্মীদের এক জনকে বার বার বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘আপনি ভুল করেছেন!’’
বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন দিলীপের স্ত্রী রিঙ্কু মজুমদারও। কিন্তু তাঁর কথাও শুনতে রাজি হননি বিক্ষোভকারীরা। শেষ পর্যন্ত চা-চক্রে যোগই দিতে পারলেন না দিলীপ। তাঁকে সেখান থেকে চলে যেতে হয়। পরে প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ দিলীপ বলেন, ‘‘দলের ২৫০ জন কর্মীর মৃত্যু হয়েছিল। সেখান থেকে সকলকে উদ্বুদ্ধ করে এই দলটা দাঁড় করিয়েছিলাম। সেই দল এখন কোথায়? দিলীপ ঘোষ পার্টি বদলাতে আসেনি। দিলীপ ঘোষ বাংলা বদলাতে এসেছে।’’
বুধবার দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনে স্ত্রী রিঙ্কুকে নিয়ে উপস্থিত ছিলেন দিলীপ। রাজ্যের বিরোধী দলের নেতাদের মধ্যে একমাত্র তিনিই ছিলেন সেখানে। এর পর থেকেই দলের অন্দরে কটাক্ষের শিকার দিলীপ। তালিকায় রয়েছেন শুভেন্দুও। তাঁর বক্তব্য ছিল, কারও ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলতে চান না। বুধবার জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনের দিনে কাঁথিতে ‘সনাতনী সমাবেশ’ করেছিলেন শুভেন্দু। সেখানে না গিয়েই দিঘায় যান দিলীপ। তার পরেই দিলীপের নাম না করে শুভেন্দু বলেন, ‘‘কারও ব্যক্তিগত বিষয়, তাঁর মন্তব্য, তাঁর চলার ধরন, তাঁর কাজের ধরন, প্রেম-প্রীতি-ভালবাসা, রাগ-বিরহ-দহন, এ সবের উত্তর আমি দিই না। ভবিষ্যতেও দেব না।’’ প্রসঙ্গত, দিন কয়েক আগে দিলীপের বিয়ের সময়েও একই সুর শোনা গিয়েছিল শুভেন্দুর গলায়।
বৃহস্পতিবার সকালেই তার জবাব দিয়েছিলেন দিলীপ। নাম না করে শুভেন্দুকে খোঁচা দিয়ে দিঘায় তিনি বললেন, ‘‘বড় বড় কথা কারা বলছেন? যাঁরা মমতার আঁচলের তলায় থেকে নেতা হয়েছেন। চরিত্রের কথা বলছেন কারা? যাঁরা কালীঘাটের উচ্ছিষ্ট খেয়েছেন, আজ বিজেপির উচ্ছিষ্ট খেয়ে বেঁচে আছেন, তাঁরা দিলীপকে ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট দিচ্ছেন।’’ দিলীপের এই মন্তব্যের নিশানা যে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করা শুভেন্দু, তা এক প্রকার স্পষ্ট।