বিহারের পরে এ বার পালা পশ্চিমবঙ্গের। জয়ের লক্ষ্যে তাই দলের মধ্যম পর্যায়ের কর্মীদের বাক্স-প্যাঁটরা গুছিয়ে বাংলার উদ্দেশে পাড়ি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় নেতৃত্ব।
বিহার ভোটের ফলাফল আসার আগেই পশ্চিমবঙ্গের রণনীতি তৈরি করতে বৈঠকে বসেছিলেন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। পশ্চিমবঙ্গে দলের হাল বুঝতে প্রথম দফায় কাদের পাঠানো হবে, তা নিয়ে এক দফা বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। অমিত শাহ ঘনিষ্ঠ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদবকে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে। তিনি তাঁর নিজস্ব দল নিয়ে রাজ্যস্তরে কাজ শুরুও করে দিয়েছেন। প্রথম ধাপে সংগঠনের মধ্যম পর্যায়ে রয়েছেন, এমন নেতাদের পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন শাহেরা। বিজেপিশাসিত রাজ্যে মন্ত্রী রয়েছেন, এমন নেতা ছাড়াও বিভিন্ন রাজ্যে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকাদের ডিসেম্বর থেকেই পশ্চিমবঙ্গ গিয়েমাটি কামড়ে পড়ে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় স্তরের এক নেতার কথায়, ‘‘বিহার নির্বাচন সেরে বাড়ি ফিরতেই পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’
বিজেপির দাবি, এ যাত্রায় পশ্চিমবঙ্গে সরকার পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে। রাজ্য বিজেপি সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘পনেরো বছরের অপশাসনের শেষে মানুষ ফের পরিবর্তন চাইছেন। এ বারের লড়াই তাই মানুষের সঙ্গে তৃণমূলের।’’ বিজেপি সূত্রের খবর, বহিরাগত ওই নেতারা মণ্ডল পর্যায়ের দায়িত্বে থাকবেন। তাঁদের উপরে নজর রাখবেন বাংলার দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুনীল বনসল। বিহারে সাফল্য এনে দেওয়া বিনোদ তাউড়কেও পশ্চিমবঙ্গে পাঠানো হতে পারে। বহিরাগত এই নেতাদের নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্বের কটাক্ষ, এসআইআর করে মানুষকে বিপদে ফেলা হচ্ছে। ভোট দেওয়ার মতো গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। বাংলার মানুষ তাই ওই সব বহিরাগতকে যোগ্য জবাব দেবেন।
বিজেপি জানিয়েছে, মণ্ডল পর্যায়ের নেতারা এলাকায় বিজেপির ও শাসক দলের শক্তির তুলমূল্য বিচার করে জয়ের পথ কী হতে পারে, তা নিয়ে দলকে প্রাথমিক রিপোর্ট দেবেন। যার ভিত্তিতে রণকৌশল তৈরি করবেন শীর্ষ নেতৃত্ব। রিপোর্টে ওই কেন্দ্রগুলিতে একাধিক দাবিদারের মধ্যে কার জেতার সম্ভাবনা, তারও বিশ্লেষণ করবেন ওই নেতারা। সূত্রের মতে, ডিসেম্বরে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন থাকলেও, তারই ফাঁকে সাংগঠনিক অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে একাধিক বার পশ্চিমবঙ্গে যাওয়ার কথা অমিত শাহ ও জেপি নড্ডার।
বিজেপি সূত্রের মতে, সাংগাঠনিক কাজে দক্ষদেরই প্রথমে পশ্চিমবঙ্গে পাঠানো হচ্ছে। কারণ, অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে সাংগঠনিক দিক থেকে খামতি রয়েছে বিজেপির। ফলে তৃণমূলের সঙ্গে বুথ পর্যায়ে পাল্লা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে গেরুয়া শিবির। তাই বুথ পর্যায়ে দলকে শক্তিশালী করার লক্ষ্য বেঁধে দেওয়া হয়েছে ওই ভিন্ রাজ্যের নেতাদের। তবে ওই নেতারা পশ্চিমবঙ্গে ভাষা সমস্যার মুখে পড়বেন। বাংলার সংস্কৃতিও গো-বলয়ের থেকে আলাদা। দু’টি বিষয়ই মাথায় রাখা হচ্ছে। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘হিন্দি বলয়ের যে নেতাদের বাংলায় কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে বাযারা বাংলা সংস্কৃতি সম্পর্কে মোটের উপরে ওয়াকিবহাল, তাঁদেরই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।’’
বিহারের প্রচারে বিজেপির মূল বিষয় ছিল জঙ্গলরাজ ও অনুপ্রবেশকারী। সূত্রের মতে, পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে অনুপ্রবেশ বড় সমস্যা। বিশেষ করে এসআইআর শুরু হওয়ার পরে কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সীমান্তে ভিড় দেখা যাচ্ছে। তাই অনুপ্রবেশ প্রশ্নে সরব হলে হিন্দু ভোটব্যাঙ্ক এককাট্টা হতে পারে, মনে করছেন বিজেপি নেতৃত্ব। এ ছাড়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনে নারী নির্যাতন, আইন-শৃঙ্খলার দুর্দশাও বিজেপির প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার হবে। বেকারত্ব, শিল্প না হওয়া, পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যা, শিক্ষা-স্বাস্থ্যের বেহাল দশার মতো বিষয়গুলি নিয়েও সরব হবে বিজেপি।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)