জলপাইগুড়ির নাগরাকাটায় তাঁদের খুন করার পরিকল্পনা ছিল হামলাকারীদের। মাথা থেঁতলে খুন করার চক্রান্ত হয়েছিল বলে দাবি করলেন খগেন মুর্মু। বর্তমানে তিনি শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে ভর্তি। সেখান থেকেই নাগরাকাটার ঘটনা নিয়ে প্রথম বার মুখ খুললেন মালদহ উত্তরের বিজেপি সাংসদ।
গত সোমবার দুপুরে খগেন এবং শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর সেখান থেকে গাড়িতে করে বেরিয়ে আসার সময়েই ফেসবুক লাইভ করেছিলেন শঙ্কর। দাবি করেছিলেন, হামলাকারীরা নিজেদের দিদির লোক বলে পরিচয় দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার খগেনও একই দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘‘যারা মারছিল, বলছিল তারা দিদির লোক। এখানে বিজেপির কোনও কাজ নেই। এই বলে মারতে থাকে।’’
যদিও ঘটনার পরেই তৃণমূল বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, নাগরাকাটার ঘটনার সঙ্গে শাসকদল জড়িত নয়। হামলার ঘটনার নিন্দাও করেছে তারা। ঘটনার পর দিনই নার্সিংহোমে গিয়ে খগেনের সঙ্গে দেখা করে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি সাংসদের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ বলেন, ‘‘আমরা হামলার ঘটনার নিন্দা আগেই করেছি। আমরা বলেছি, এই ঘটনা ঠিক হয়নি। কিন্তু খুন করার চক্রান্ত বা মেরে ফেলা হতে পারত বলে যে দাবি করা হচ্ছে, তা আসলে গল্পের গরু গাছে তোলা। কেউ যদি প্রাণে মারত চাইত, তা হলে গাল কাটবে কেন? আসলে উনি (খগেন) লিখে দেওয়া চিত্রনাট্য বলছেন।’’
ঘটনাচক্রে, খগেনদের উপর হামলার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত যে চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে এক জন একরামুল হল এলাকার এক তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী। এমনটাই দাবি সূত্রের। এ ছাড়াও গ্রেফতার হয়েছেন গোবিন্দ শর্মা, সাহানুর আলম ওরফে মান্নান এবং তোফায়েল হোসেন ওরফে মিলন।
নাগরাকাটার বামনডাঙা গ্রামে দুর্যোগকবলিত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়়েছিলেন খগেন এবং শঙ্কর। অভিযোগ, তাঁদের লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হয়েছে। সেই পাথরের আঘাতেই রক্তাক্ত হন খগেন। তাঁর মুখ থেকে গলগল করে রক্ত প়ড়তে দেখা যায়। ধাক্কা দেওয়া হয় শঙ্করকেও। তিনি হাতে চোট পান। তাঁদের গা়ড়িতেও ভাঙচুর। এই ঘটনার পর দু’জনকেই শিলিগু়ড়ির নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। বুধবার শঙ্কর ছাড়া পান। খগেন এখনও চিকিৎসাধীন। বৃহস্পতিবার তাঁকে আইসিইউ থেকে জেনারেল বেডে স্থানান্তরিত করা হয়।
সূত্রের দাবি, অন্তত এক মাস নার্সিংহোমে ভর্তি থাকতে হবে খগেনকে। তাঁর মুখের হাড় ভেঙে গিয়েছে পাথরের আঘাতে। নার্সিংহোমের বেডে শুয়েই খগেন বলেন, ‘‘আমরা ওখান থেকে বেরোতে না পারলে প্রাণে বাঁচতাম না। একজোট হয়ে আমাদের মারার পরিকল্পনা হয়েছিল। গাড়ি থেকেও আমাদের টেনে বার করতে গিয়েছিল ওরা (হামলাকারীরা)। পারেনি। বার করলে পাথর দিয়ে থেঁতলে আমাদের মেরে ফেলত।’’
খগেন, শঙ্করের উপর হামলার ঘটনার নিন্দা করে সরব হয়েছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ঘটনাচক্রে, মোদীর সমাজমাধ্যমের পোস্ট প্রকাশ্যে আসার পরেই ত্রিপুরায় তৃণমূলের পার্টি অফিসে হামলার ঘটনা ঘটে। অভিযোগ ওঠে বিজেপির দিকে। ওই ঘটনার পর ত্রিপুরায় প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছিল তৃণমূল।